সাগর ঘোষ হত্যা-মামলা

আদালতে থেকেও এজলাসে গরহাজির, জারি পরোয়ানা

সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য থাকলেও সাক্ষীদের অনুপস্থিতির জন্য সোমবার সাগর ঘোষ হত্যা-মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরুই করা গেল না সিউড়ি আদালতে। শুধু তাই নয়, আদালত থেকে পাঠানো সমন গ্রহণ করেও সাক্ষ্যদানে অনুপস্থিত থাকায় নিহতের ছেলে হৃদয় ঘোষ, পুত্রবধূ শিবানী ঘোষের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করল সিউড়ি জেলা আদালত। মামলার সরকারি আইনজীবী রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এ দিনই নিহতের স্ত্রী সরস্বতীদেবীরও সাক্ষ্য গ্রহণের দিন থাকলেও তিনি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আবেদন জানানোয় তাঁর বিরুদ্ধে আদালত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০২
Share:

সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য থাকলেও সাক্ষীদের অনুপস্থিতির জন্য সোমবার সাগর ঘোষ হত্যা-মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরুই করা গেল না সিউড়ি আদালতে। শুধু তাই নয়, আদালত থেকে পাঠানো সমন গ্রহণ করেও সাক্ষ্যদানে অনুপস্থিত থাকায় নিহতের ছেলে হৃদয় ঘোষ, পুত্রবধূ শিবানী ঘোষের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করল সিউড়ি জেলা আদালত। মামলার সরকারি আইনজীবী রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এ দিনই নিহতের স্ত্রী সরস্বতীদেবীরও সাক্ষ্য গ্রহণের দিন থাকলেও তিনি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আবেদন জানানোয় তাঁর বিরুদ্ধে আদালত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তবে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি হৃদয় ও শিবানীর সঙ্গে সরস্বতীদেবীকেও আদালতে হজির থাকার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা জজ গৌতম সেনগুপ্ত।

Advertisement

সমন নিয়ে আদালতে এসে কেন সাক্ষ্য দিলেন না? হৃদয়ের দাবি, “প্রথমত মা অসুস্থ। দ্বিতীয়ত সরকারি আইনজীবী সহযোগিতা করেননি। তা ছাড়া, বাবার খুনে অভিযুক্ত এমন অনেক রয়েছে, পুলিশ তাদের অভিযুক্ত বলে মনে করেনি, তাদের অনেকে এ দিন আদালত চত্বরে হাজির ছিল। তাই নিরাপত্তার কারণে চলে গিয়েছে।” সরকারি আইনজীবী অবশ্য বলেন, “অসহযোগিতার কোনও বিষয় নেই। উনি তো আদালতে এসেছিলেন। কিছু বলার থাকলে বিচারককেই বলতে পারতেন। এটা সাক্ষ্য না দেওয়ার বাহানা ছাড়া কিছু নয়।”

গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে খুন হন পাড়ুইয়ের বাঁধ নবগ্রামের বাসিন্দা সাগর ঘোষ। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত ওই হত্যা মামলার বিশেষ তদন্তকারি দল (সিট) গত ১৬ জুলাই আদালতে যে চার্জশিট পেশ করেছিল তাতে নামছিল আট জনের। শেখ আসগর ছাড়া ৭ জনই গ্রেফতার হয়েছিলেন। ভগীরথ ও সুব্রত ছাড়া বাকিরা জামিনে মুক্ত রয়েছেন। সিটের দেওয়া চার্জশিটের ভিত্তিতে সিউড়ি জেলা আদালতে গত ৮ জানুয়ারি ওই মামলায় চার্জ গঠিত হয়েছে। সিউড়ির জেলা জজ গৌতম সেনগুপ্তের এজলাসে ওই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শুরু হওয়ার কথা ছিল সোমবার থেকেই। যাঁদের সাক্ষ্য গ্রহণ করার কথা সকলের কাছেই সমন পৌঁছেছে। প্রথম দিনই নিহতের স্ত্রী, ছেলে ও বৌমার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন থাকলেও তাকে ঘিরে একপ্রস্ত নাটক হয়ে গেল এ দিন।

Advertisement

প্রথম থেকেই এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার বিপক্ষে ছিলেন নিহতের পরিবার। তাই সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করে আদালত সমন পাঠানোয় প্রথমে তা গ্রহণ করতে চাননি সাগর ঘোষের পরিবার। নিহতের ছেলে হৃদয়ের দাবি, ছিল বাবার হত্যাকাণ্ডে নিযুক্ত সিটের দেওয়া চার্জশিটের ভিত্তিতে জেলা আদালতে যে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে, সেই তদন্তই পক্ষপাতদুষ্ট। তাঁদের ওই তদন্তের উপর আস্থা নেই। সে জন্য তাঁদের পরিবার সিবিআই চেয়ে সুপ্রিমকোর্টে গিয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত জেলা আদালতের পাঠানো সমন গ্রহণ করেন হৃদয়বাবুরা। কিন্তু সমন নিয়েও সাক্ষ্য দিলেন না কেউই। আইনজীবী রণজিৎবাবু জানিয়েছেন, হৃদয়বাবুর মা সরস্বতীদেবী মেডিক্যাল রিপোর্ট-সহ নিজের অসুস্থতার কারণ, দেখিয়ে আদালতে আবেদন জানালেও হৃদয়বাবু ও তাঁর স্ত্রী শিবানীদেবী কোনও কারণ দেখাননি। আদালত চত্বরে সোমবার উপস্থিত হয়েও সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতের ভিতরে যাননি হৃদয়বাবু।

সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ হৃদয় ঘোষ আদালত চত্বরে এসে ওঁর আইনজীবী নির্মল মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করেন। সংবাদ মাধ্যমকে জানানো হয়, ‘মা অসুস্থ আসতে পারেননি। এই বিচার প্রক্রিয়া যাতে স্থগিত থাকে সেই মর্মে মা আইনজীবী মারফৎ একটি আবেদন জেলা আদালতে জানাচ্ছেন।’ কিন্তু মামলাটি ১১টা ২৭ নাগাদ যখন ওঠে তখন হৃদয়বাবুকে পাওয়া যায়নি। তবে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব শুরু হওয়ার জন্য জেলা জজের এজলাসে ছিলেন অভিযুক্তেরা এবং তাঁদের আইনজীবীরা। উপস্থিত ছিলেন সিটের আইও তীর্থঙ্কর সান্যালও। হৃদয়বাবুদের আইনজীবী নির্মল মণ্ডল ‘স্পেশ্যাল লিড পিটিশন’ দাখিল করেন জেলা জজ গৌতম সেনগুপ্তের কাছে। কিন্তু পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য প্রথমে সেটি গৃহীত হয়নি। সাড়ে ১১টা নাগাদ সরকারি আইনজীবীকে বিচারক সাক্ষীদের আদালতে পেশ করতে বলেন। সরস্বতীদেবী অনুপস্থিতির কারন আগেই বিচারককে জানিয়েছিলেন। এর পরেই হৃদয়বাবুদের খোঁজ শুরু হয়। কিন্তু তাঁদের আর আদালত চত্বের পাওয়া যায়নি। সাক্ষীদের হাজির করাতে কিছুক্ষণ সময় বিচারকের কাছে চান রণজিৎবাবু। ঠিক হয় দুপুর ২টোতে ফের মামলাটি শুনবেন বিচারক। কিন্তু তখনও হৃদয়বাবুদের আদালতে হাজির করাতে পারেননি সরকারি আইনজীবী। বিচাকরকে তিনি জানান, শিবানীদেবী আসেননি। কিন্তু হৃদয়বাবু পাড়ুই থানার এক পুলিশ কর্মীর সঙ্গে আদালতে এসেও পালিয়ে গিয়েছেন। এ ব্যাপারে আইন মেনে যা ব্যবস্থা নেওয়ার বিচারক নিন। বিচারক এই মর্মে আবেদন জানাতে বলেন সরকারি আইনজীবীকে। সেই আবেদন পাওয়ার পরই বিচারক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

অন্য দিকে, পদ্ধতিগত ত্রুটি মিটিয়ে সরকারি আইনজীবী মারফৎ বিচার প্রক্রিয়ার স্থগিতাদেশ চেয়ে হৃদয়বাবুদের আইনজীবী নির্মলবাবুর আবেদনপত্রটি গৃহিত হলেও উচ্চ আদালতে এই বিষয়ে কোনও স্থগিতাদেশ না থাকায় আবেদন মঞ্জুর করেননি বিচারক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement