সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে বিশেষ করে কোন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি কী ভাবে কতটা লাভবান হয়েছেন, সিবিআই-কে তা দেখতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। তদন্তে নেমে ওই কেন্দ্রীয় সংস্থা একের পর এক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করেছে। এ বার তাঁদের সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য সংগ্রহে নজর দিচ্ছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র তদন্তকারীরাও। সেই লক্ষ্যেই আজ, বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে তারা সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে ফের জেরা করতে চলেছেন।
গত এপ্রিল আর জুনে দু’বার ইডি-র জেরার মুখে পড়েছেন সুদীপ্ত। ইডি সূত্রের খবর, বিশেষ করে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সম্পর্কে সারদা-প্রধানের কাছ থেকে আরও তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তদন্তে সারদার লগ্নি কেলেঙ্কারি নিয়ে নতুন বেশ কিছু সূত্র মিলেছে। সেই সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সম্পর্কেও একাধিক সূত্র হাতে পেয়েছে দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এডি এ বার সারদা-কর্ণধারকে জেরা করে সেই সব তথ্য যাচাই করে নিতে চাইছে।
২০১৪-র গোড়ায় সুদীপ্তকে এক দফা জেরা করেছিল ইডি। ওই সংস্থা সূত্রের দাবি, তখন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছিলেন সারদা-প্রধান। জেরায় উঠে এসেছিল কিছু ব্যক্তির নামও। পরে আরও এক বার জেরা করা হয় সুদীপ্তকে। ইতিমধ্যে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তা দেবব্রত সরকার (নিতু), ব্যবসায়ী সন্ধির অগ্রবাল, প্রাক্তন পুলিশকর্তা রজত মজুমদার, সাংসদ সৃঞ্জয় বসু, ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে সিবিআই। বিস্তর টানাপড়েনের পরে শুক্রবার সিবিআইয়ের দফতরে হাজির হওয়ার কথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়েরও।
সিবিআইয়ের এই তৎপরতার পাশাপাশি বসে নেই ইডি-ও। বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায়, তৃণমূল নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা-সহ বেশ কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইতিমধ্যে তারা নতুন বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে। সারদা গোষ্ঠীর উধাও হয়ে যাওয়া বিপুল অর্থের সন্ধান পেতে সেই সব তথ্য কাজে লাগবে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু ওই সব তথ্যের সঙ্গে এর আগে সুদীপ্তের দেওয়া বয়ানের বেশ কিছু অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার উল্লেখযোগ্য তথ্যের ইঙ্গিতটুকুও মেলেনি সারদা-প্রধানের বয়ানে। বিশেষত মন্ত্রী মদনবাবুর ক্ষেত্রে গুরুতর কিছু অসঙ্গতি পেয়েছেন তদন্তকারীরা। যেমন, তদন্তে ইডি জানতে পেরেছে, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে টাকা দিয়েছিল সারদা। নগদে নয়, সেই টাকা দেওয়া হয়েছিল চেকে। সেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে মদনবাবুর যোগসূত্র রয়েছে বলে জানতে পেরেছে ইডি। কিন্তু এর আগে সারদা-কর্ণধারের দেওয়া বয়ানে এ ব্যাপারে তেমন কিছু উল্লেখ পাওয়া যায়নি। তাই এ ব্যাপারে সারদা-প্রধানের বয়ান নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। বিদেশে সারদা গোষ্ঠীর একটি সম্পত্তি সম্পর্কে কিছু তথ্য হাতে এসেছে ইডি-র। সেই সম্পত্তির ব্যাপারেও সারদা-কর্ণধারের বক্তব্য জানতে চাইছে ইডি।