চাকরির দাবিতে সল্টলেকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) সামনে আন্দোলনকারী প্রার্থীরা অবশেষে অনশন তুললেন। তাঁদের দাবি: চূড়ান্ত মেধা-তালিকায় নাম থাকা যে প্রার্থীরা এখনও চাকরি না-পেয়ে আন্দোলন করছেন, তাঁদের সকলকে নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছে কমিশন। তাই এ দিন সন্ধ্যায় আন্দোলন প্রত্যাহার করা হল বলে আন্দোলনকারীদের তরফে জানানো হয়েছে। যদিও কমিশন বা রাজ্য সরকারের তরফে এখনও এমন কোনও আশ্বাসের সমর্থন মেলেনি।
পরিস্থিতি জানতে এ দিন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য। পরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গেও তিনি দেখা করেন। প্রদীপবাবু বলেন, প্রয়োজনে বাড়তি পদ তৈরি করে সব অনশনকারীকে নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। অন্য দিকে ব্রাত্যবাবুর দাবি, এমন কথা তিনি বলেননি। এসএসসি-র তরফে এ দিন যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে, তাতেও এমন আশ্বাস মেলেনি।
ওই প্রার্থীদের আন্দোলন এ দিন একুশ দিনে পড়েছিল। মেধা-তালিকায় নাম থাকা হাজার তিনেক প্রার্থীর সকলকে নিয়োগের দাবি নিয়ে ওঁরা বেশ ক’বার রাজ্যপালের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। এ দিন বিকেলে বিধাননগর মহকুমা প্রশাসনের মাধ্যমে রাজ্যপালের একটি বার্তা অনশনকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেখানে জানানো হয়, রাজ্যপাল বিধাননগরের এসডিও-কে তাঁর বার্তা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। বার্তায় অনশন প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে রাজ্যপাল প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ব্যাপারটা তিনি দেখবেন।
এক দিকে রাজ্যপালের বার্তা। অন্য দিকে ব্রাত্যবাবুর সঙ্গে দেখা করে আসা প্রদীপবাবু আন্দোলনকারীদের অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। ইতিমধ্যে খবর আসে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও তাঁর প্রতিশ্রুতি মতো বিষয়টি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে এ দিনই চিঠি পাঠিয়েছেন। সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদল যায় এসএসসি-র চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে। সাড়ে সাতটা নাগাদ বৈঠক সেরে বেরিয়ে প্রতিনিধিরা ঘোষণা করেন, চেয়ারম্যান সকলকেই নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন। এবং প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে তা তিনি জানাতে চলেছেন।
ঘোষণা শুনে আন্দোলনকারীদের মধ্যে উল্লাসের স্রোত বয়ে যায়। কেউ চেঁচিয়ে ওঠেন, “আমরা পেরেছি।” কারও প্রতিক্রিয়া, “মুখ্যমন্ত্রী জিন্দাবাদ।” খানিকক্ষণের মধ্যে অনশনকারীরা উঠে যান। ত্রিপল, বাঁশের অস্থায়ী কাঠামো খোলা শুরু হয়। কিন্তু এসএসসি’র প্রেস বিজ্ঞপ্তি হাতে আসার পরে আনন্দ-উল্লাস কিছুটা ফিকে হয়ে পড়ে। কারণ, সকলের চাকরির কোনও আশ্বাস সেখানে দেওয়া হয়নি। কী বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে?
তাতে জানানো হয়েছে, স্কুল সার্ভিসের মেধা-তালিকায় নাম থাকা প্রার্থীদের চতুর্থ কাউন্সেলিং শুরু হবে ৩ মার্চ। অঞ্চল বিচারে পর্যায়ক্রমে শূন্য পদের নিরিখে উপযুক্তদের নিয়োগের সুপারিশ করা হবে। নিয়োগ শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি চলবে।
বস্তুত মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথাই জানিয়েছিলেন সুবীরেশবাবু। এ দিন অঞ্চল ও বিষয়ভিত্তিক শূন্য পদের যে তালিকা কমিশন বার করেছে, তাতেও দেখা গিয়েছে, মেধা-তালিকায় নাম থাকা অবশিষ্ট প্রার্থী সংখ্যার তুলনায় শূন্য পদের সংখ্যা কম। তাই হাজার তিনেক প্রার্থীর সকলকেই নিয়োগের মৌখিক আশ্বাস আদৌ কতটা বাস্তবায়িত হবে, আন্দোলনকারীদের একটা বড় অংশ তা নিয়ে ধন্দে পড়েছেন।
সোমবার শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, চতুর্থ কাউন্সেলিংয়ে অধিকাংশ প্রার্থীর চাকরি হয়ে যাবে। তাঁর আবেদন ছিল, আন্দোলনকারীরা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করুন। অনশনকারীরা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছিলেন, সকলের চাকরি নিশ্চিত না-হলে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এ দিন অনশন উঠে যাওয়ার পরে ব্রাত্যবাবু বলেন, “আমরা খুশি। দেরিতে হলেও আমাদের আর্জিতে ওঁরা সাড়া দিয়েছেন। ওঁরা এখন সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করুন।”
রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীদের সঙ্গে যে একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই আছেন, তা আবার প্রমাণিত হল বলেও মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী।