যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী সায়নী ঘোষ। ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) ডাকে সাড়া দিয়ে গত ৩০ জুন নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জেরার সম্মুখীন হয়েছিলেন অভিনেত্রী তথা যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সায়নী ঘোষ। আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর নেতৃত্বাধীন যুব সংগঠনের ডাকেই শুক্রবার ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশ। অন্য বক্তাদের সঙ্গেই সেই সভায় সায়নীরও বক্তৃতা করার কথা। কারণ, আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই সমাবেশের ‘আহ্বায়ক’ তিনিই। সভামঞ্চ থেকে তিনি কী বলেন, তা নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকেই তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা শুরু হয়েছে।
২০২১ সালের ভোটের আগে তৃণমূলে যোগদান করেন সায়নী। তার পরে আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের বিরুদ্ধে লড়াই করে পরাজিত হন। ওই বছরেরই জুন মাসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যুব তৃণমূলের সভাপতির পদ ছেড়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদে নিযুক্ত হন। তাঁর ছেড়ে-আসা পদে সায়নীকে বেছে নিয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে থাকাকালীন গত ৩০ জুন সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়োগ দুর্নীতিতে জেরার জন্য সায়নীকে তলব করে ইডি। ভোটের প্রচার ছেড়ে হাজিরাও দেন সায়নী। সঙ্গে জানিয়েছিলেন, তদন্তের স্বার্থে যখনই তাঁকে ডাকা হবে, তখনই তিনি আসবেন। তদন্তে সবরকম সহযোগিতাও করবেন। কিন্তু ৫ জুলাই তাঁকে জেরার জন্য ইডি তলব করলে যাননি সায়নী। সেই সময় দলের হয়ে ভোটের প্রচারে নেমেছিলেন তিনি।
এ বার শহিদ দিবসের সমাবেশেও বক্তৃতা করার কথা তাঁর। এমনিতেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ চরিতার্থ করার অভিযোগ করে তৃণমূল। তাই দলের অন্দরে এই মর্মে কৌতূহল তৈরি হয়েছে যে, ইডির মুখোমুখি হওয়ার পর প্রকাশ্যে সেভাবে কিছু না জানালেও শুক্রবারের সমাবেশে কেন্দ্রীয় সরকার তথা সিবিআই-ইডির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান কি না অভিনেত্রী-নেত্রী সায়নী।
সায়নী যুব সংগঠনের দায়িত্ব নেওয়ার পর করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২১ সালের শহিদ দিবস হয়েছিল ভার্চুয়ালি। কিন্তু ২০২২ সাল থেকে আবার ‘স্বমহিমায়’ ধর্মতলায় ফেরে শহিদ সমাবেশ। গত দু’বছর সমাবেশের প্রস্তুতিপর্বে বেশি ‘সক্রিয়’ দেখা যায়নি সায়নীকে। তবে এ বার বিধাননগরের সেন্ট্রাল পার্কের দলীয় অস্থায়ী আশ্রয় শিবির থেকে শুরু করে গীতাঞ্জলী স্টেডিয়ামের শিবিরেও বার বার পরিদর্শনে গিয়েছেন তিনি। জেলা থেকে আগত কর্মী-সমর্থকদের খোঁজখবরও নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্মতলার সমাবেশ স্থলের প্রস্তুতি দেখতে এসেছেন, সেখানেও সায়নীকে দেখা গিয়েছে তাঁর আশেপাশেই।
এর আগে যাঁরা তৃণমূল যুব সংগঠনের সভাপতি হয়েছেন, তাঁরা এই সমাবেশের জন্য মাসব্যাপী পরিশ্রম করতেন। ব্যস্ত থাকতেন নানা জেলাভিত্তিক কর্মসূচিতে। অনেকে প্রস্তুতির জন্য নাওয়াখাওয়া ভুলে পড়ে থাকতেন সভামঞ্চের ধারেকাছে। সে তিনি তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি সঞ্জয় বক্সীই হোন বা মদন মিত্র। শুভেন্দু অধিকারী হোন বা সৌমিত্র খাঁ অথবা অভিষেক। তবে তৃণমূলের একাংশের ব্যাখ্যা, সায়নীর সঙ্গে বিগত দিনের যুব সংগঠনের সভাপতিদের পার্থক্য রয়েছে। কারণ, অতীতে সকলেই ছিলেন পূর্ণসময়ের রাজনীতিক। সায়নীর রাজনৈতিক জীবনের বয়স দু’বছরের কিছু বেশি। তিনি মূলত অভিনেত্রী। তাঁর সঙ্গে অতীতের কোনও যুব সভাপতির তুলনা টানা ঠিক নয়।