(বাঁ দিকে) রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। (ডান দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের বিরোধ চরমে পৌঁছেছিল। সেই বিরোধ আরও এক কদম এগোল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বাদল অধিবেশনকে ঘিরে। যার জেরে মন্ত্রিসভার বৈঠকের স্থানই বদল হয়ে গেল!
সরকারি সূত্রের খবর, সোমবার, ২৪ জুলাই থেকে রাজ্য বিধানসভার বাদল অধিবেশন শুরু করতে চেয়ে রাজভবনে ফাইল পাঠিয়েছিল পরিষদীয় দফতর। সেই ফাইলে রাজ্যপাল অনুমোদন দিলেই সোমবার থেকে শুরু হতে পারত বিধানসভার বাদল অধিবেশন। সেই মর্মে প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছিল বিধানসভায়। কিন্তু রাজভবন প্রশ্ন তোলে, কেন এত কম সময়ের নোটিসে বিধানসভার অধিবেশন ডাকা হচ্ছে? শুধু প্রশ্ন তোলাই নয়, পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে বুধবার রাজভবনে তলবও করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। কিন্তু বুধবার পরিষদীয় মন্ত্রী শহরে ছিলেন না। তিনি তাঁর পরিবর্তে পরিষদীয় দফতরের কোনও আধিকারিককে রাজভবন পাঠানোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু রাজভবন পাল্টা জানিয়ে দেয়, অন্য কোনও আধিকারিক নয়, মন্ত্রী নিজে না আসতে পারলে আসতে হবে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে। যদিও সূত্রের খবর, বুধবার রাত পর্যন্ত রাজভবনে যাননি মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। সরকারি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর মৌখিক অনুমোদন না পেলে তিনি রাজভবনে যাওয়ার কথা ভাবছেন না।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে রাজ্যপালের কোনও ‘শর্ত’ বা ‘প্রশ্নের’ মুখে জবাবদিহি করতে রাজি নন, তা আগেই স্পষ্ট হয়েছিল। সেই ধারণা আরও জোরালো হয়েছে নবান্নের একটি সিদ্ধান্তে। সোমবার থেকে বিধানসভার বাদল অধিবেশন শুরু হচ্ছে ধরে নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, ২৪ জুলাই, সোমবার বিধানসভা ভবনেই বসবে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক। মন্ত্রীরা প্রচারের কাজে ব্যস্ত থাকায় পঞ্চায়েত ভোটের কারণে গত এক মাস মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়নি। তাই সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক আবার শুরু হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু রাজভবন থেকে অধিবেশন শুরুর ফাইলটিতে অনুমোদন না দেওয়ায় বুধবার রাতে মন্ত্রিসভার বৈঠক প্রসঙ্গে আরও একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিটিতে বলা হয়, ২৪ জুলাই সোমবার বিধানসভার বদলে মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে নবান্নে।
তবে মন্ত্রিসভার বৈঠক নবান্নে সরিয়ে নিয়ে গেলেও রাজভবন বাদল অধিবেশনের সময় নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছে, তার পরে ওই অধিবেশন কবে শুরু হবে, সে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। কারণ,পরিষদীয় নিয়ম অনুযায়ী রাজ্যপালের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন ছাড়া বিধানসভার অধিবেশন শুরু করা যায় না। তবে রাজ্যপালের শর্ত মেনে পরিষদীয় মন্ত্রী বা মুখ্যসচিব তাঁর কাছে ‘জবাবদিহি’ করতে যাবেন না বলেই প্রশাসনিক মহলের ধারণা। তাই রাজভবন-নবান্ন এই সংঘাতে বাদল অধিবেশনের ভবিষ্যৎও খানিকটা ঝুলিয়ে রাখল বলে মনে করছে প্রশাসনিক মহলের একাংশ। অধিবেশন শুরুর জন্য বিধানসভায় যে প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছিল, তা-ও আপাতত থমকে গিয়েছে বলেই বিধানসভার সচিবালয় সূত্রে খবর। তবে প্রকাশ্যে বাদল অধিবেশন নিয়ে এখনও পর্যন্ত কেউ কোনও মন্তব্য করেননি।