দু’জনে: বিয়ের পরে দম্পতি। নিজস্ব চিত্র
বাড়ির দরজার সামনে বসে আছেন যুবক। পাশে প্ল্যাকার্ড: ‘আমার আট বছর ফিরিয়ে দাও’। তাঁকে ঘিরে বসে গিয়েছে মেলা। সেই ভিড়ে বাড়ির লোক তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু যুবক অনড়। প্রেমিকা সাড়া না দিলে অনশন তুলবেন না তিনি, স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন। রবিবার থেকে সোমবার, ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। শরীর খারাপ হচ্ছে ক্রমে। অসুস্থ হয়ে পড়ায় চিকিৎসার প্রয়োজনও হয় তাঁর। শেষে সোমবার শেষবেলায় প্রেমিকার বাড়ির বরফ গলল। দু’পক্ষ রাজি হওয়ায় রাতেই মেয়েটিকে সিঁদুর পরিয়ে দেন যুবক। মন্দিরে মালাবদলও হল। রাতে ধূপগুড়ির মানুষ খুশি, কারণ ‘জয় হয়েছে ভালবাসার’।
প্রেমিকার বাড়ি শহরের কলেজপাড়ায়। তাঁর সঙ্গে আলিপুরদুয়ারের এক যুবকের বিয়ে ঠিক হয়। জানতে পেরে রবিবার প্রেমিকার বাড়ির সামনে ধর্নায় বসেন স্থানীয় যুবক অনন্ত বর্মণ। তাঁর দাবি, মেয়েটির সঙ্গে তাঁর আট বছর ধরে সম্পর্ক। সম্পর্ক ভেঙে হঠাৎ কাউকে বিয়ে করে চলে যাওয়াটা ঠিক নয়। তাঁর দাবি, ‘‘আমার আট বছর ফিরিয়ে দাও।’’ তাঁর কথায়, যুবতীর বাড়ির লোকেরা সম্পর্ক মানতে নারাজ। মেয়ের অন্যত্র বিয়ে দিতে উদ্যোগী তাঁরা।
অনন্ত আরও দাবি করেন, তাঁর সঙ্গেই বিয়ে দিতে হবে মেয়েটির। তাঁর বাড়ির লোকেরাও সম্পূর্ণ ভাবে তাঁরই পাশে। বাড়ির ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, এই আশঙ্কায় অনন্তর বাড়ির লোকেরা মেয়েটির বাড়িতে যান। স্থানীয়েরাও মেয়ের বাড়ি লোকেদের প্রশ্ন করেন, সব জানা সত্ত্বেও কেন তাঁরা লুকিয়ে অন্যত্র মেয়ের বিয়ে ঠিক করছেন? মেয়ের বাড়ির লোকেদের অবশ্য দাবি, বিয়েতে মেয়ের আপত্তি ছিল না। বিষয়টি নিয়ে মেয়ের বাড়ির লোকজন পুলিশেও অভিযোগ দায়ের করেন।
এর মধ্যে সোমবার আলিপুরদুয়ার থেকে পাত্রের বাড়ির লোক মেয়েটির বাড়িতে আসেন। অনন্ত তাঁদের বাধা দেন। সব দেখে এলাকার মানুষ এগিয়ে আসেন। তাঁরা প্রেমিকযুগলকে মিলিয়ে দিতে উদ্যোগী হন। রাতে অনন্তের বাড়িতে মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিঁদুর পরিয়ে তাঁরা যান স্থানীয় কালী মন্দিরে। শাস্ত্র মেনে মন্দিরেই মালাবদল হয়।
ভালবাসার জয় পাওয়ার পরে অনন্ত বলেন, ‘‘ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেক দিনের। আমরা দুজনেই খুশি।’’ মেয়ে তখন কনের সাজে, লাজুক মুখে বসে। চার দিকে চিৎকার উঠেছে, ‘ভালবাসার জয় হোক’।