Duare Biryani

মায়ের হাতে রান্না, এটাই মূলধন ঐশের, দুয়ারে বিরিয়ানি আর প্যাডেলে পা রেখেই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন

মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্পের নাম নকল করলেও রাজনীতির সঙ্গে কোনও সম্পর্কই নেই মালদহের তরুণ ঐশের। তিনি জানেন বাবার সংসার চালানোর কষ্ট। তাই মায়ের রান্না করা বিরিয়ানি আর সাইকেল নিয়ে তাঁর সব স্বপ্ন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২৩ ১৭:১৫
Share:

ছেলের স্বপ্নের সঙ্গী মা সুলেখা। — নিজস্ব চিত্র।

আমার এই ছোট্ট হাঁড়ি, এতে চিকেন বিরিয়ানি আছে, দেখে যাও নিজের চোখে, ডিম আর আলুও সাথে। শ্যামল মিত্রের গানের কথা বদলে বিরিয়ানি বিক্রি করতেই পারতেন মালদহের তরুণ ঐশ বসাক। কিন্তু সেটা না করে, ‘মায়ের হাতের রান্না’ শব্দবন্ধকে ‘ইউএসপি’ করে ‘দুয়ারে বিরিয়ানি’ নামে ‘প্রকল্প’ চালাচ্ছেন ঐশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের অনুকরণে নাম হলেও ঐশ কিন্তু রাজনীতির ‘র’ বোঝেন না।

Advertisement

বোঝেন বাবার সংসার চালানোর কষ্ট। বাবা রাজু বসাক দীর্ঘ দিন ধরে আচারের ব্যবসা করেন। ব্যবসা মানে বাড়িতে তৈরি করা আচার মালদহ শহরের রথবাড়ি মোড়ে ফুটপাথে বসে বিক্রি করা। মালদহে আমের আচারের সুনাম যেমন রয়েছে, তেমন প্রতিযোগিতাও রয়েছে। বাবার পাশে দাঁড়ানোর জন্য কিছু করার দরকার ছিল। মাধ্যমিক পাশ করার পরে আর লেখাপড়া না করা ঐশ তাই অনেক দিন ধরেই কিছু একটা নতুন করার কথা ভাবছিলেন। বিরিয়ানি বিক্রির কথাটা বাবাই বলেছিলেন। মা সুলেখা বসাক ছেলেকে বলেছিলেন, তিনিই রোজ রান্না করে দেবেন। কিন্তু চিন্তা ছিল। আচারের মতো বিরিয়ানিতেও তো অনেক প্রতিযোগিতা!

এ সব নিয়ে ভাবতে ভাবতেই ঐশ নতুন পরিকল্পনা করেন। রাস্তার পাশে বসে নয়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিরিয়ানি বিক্রি করবেন। নিজের সাইকেলকেই বানান বাহন। ক্যারিয়ারে লাল শালু জড়ানো বিরিয়ানির হাঁড়ি। গায়ে লেখা ‘দুয়ারে বিরিয়ানি’। ৭০ টাকার এক প্যাকেট বিরিয়ানিতে এক টুকরো আলু আর একটা গোটা ডিমও। প্রথম দিকে খুব একটা জমেনি। কিন্তু এখন ইংলিশবাজার পুরসভা এলাকার অনেকেই চিনে গিয়েছে ঐশকে। পেয়ে গিয়েছে তাঁর বিরিয়ানির স্বাদ। আর তাতেই সাইকেল চালিয়ে আরও অনেক দূরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন বছর একুশের ঐশ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইনকে ঐশ বলেন, ‘‘প্রথম প্রথম পুরো হাঁড়ির বিরিয়ানি বিক্রি হত না। ফিরে এসে বন্ধুদের খাওয়াতাম। কিন্তু এখন আর সেটা দরকার হচ্ছে না। খুব কম দিনই বেঁচে যায়। তা-ও এক প্লেট, দু’প্লেট হবে।’’ তাঁর হাঁড়ির গায়েই ফোন নম্বর দেওয়া রয়েছে। সেখান থেকেই এখন অর্ডার চলে আসে। কখনও কখনও ছোটখাট অনুষ্ঠানের অর্ডারও। সাধারণত চিকেন বিরিয়ানিই বিক্রি করেন। তবে অর্ডার পেলে মাটনও। কিন্তু প্যাকেটে ভরে দিয়ে আসেন না। হাঁড়ি ভরা বিরিয়ানি নিয়ে গিয়ে ক্রেতার দুয়ারে গিয়ে ডেলিভারি।

ব্যবসা তো বড় হবে! তখন মা পারবেন রান্না করে দিতে? ঐশ বলেন, ‘‘সেটা হতে পারে। কিন্তু তখনও মায়ের রেসিপিতেই রান্না হবে। মা খুন্তিতে হাত দেবেন। ওটাই তো আমার মূলধন।’’ ছেলের এই ইচ্ছায় খুশি সুলেখাও। সকাল সকাল বাড়ির রান্না সেরে বিরিয়ানি বানাতে লেগে পড়েন। তিনি বলেন, ‘‘ছেলে ব্যবসা করছে, আমি যতটা পারি পাশে থাকব। আমার রান্না করতে ভালও লাগে।’’ মায়ের রান্না বরাবরই ঐশের পছন্দের। তবে বিরিয়ানি নয়। কোনও কালেই বিরিয়ানি খেতে বিশেষ পছন্দ করতেন না। কিন্তু সেই বিরিয়ানিকে ঘিরেই যত স্বপ্ন তাঁর।

ঐশ চান একদিন একটা দোকান হবে। সেই দোকানে বিরিয়ানি ছাড়াও অন্য খাবার পাওয়া যাবে। কিন্তু সেই সুখের দিনেও সাইকেলের প্যাডেলে পা থাকবে তাঁর। রেস্তরাঁ চালানোর সঙ্গে বেঁচে থাকবে তাঁর ‘দুয়ারে বিরিয়ানি’। সাইকেলের প্যাডেলে পা রেখে এ পাড়া, ও পাড়ায় ঘুরবেন। ক্যারিয়ারে বাঁধা থাকবে লাল শালুতে মোড়া হাঁড়ি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement