Murder

Dhaniakhali: খুন বাবা-মা ও বোনকে, চেষ্টা আত্মহত্যার

মঙ্গলবার সকালে হুগলির ধনেখালির দশঘড়ার রায়পাড়ার ঘটনা। হাতের শিরা কাটা অবস্থায় প্রমথেশ ঘোষাল নামের যুবক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ধনেখালি শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৩৯
Share:

উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বাইরে ভিড়। নিজস্ব চিত্র।

মাথায় ভারী কিছুর বাড়ি মেরে, হাতের শিরা কেটে বাবা-মা এবং বোনকে খুন করে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করল এক যুবক। ভাড়াবাড়ি থেকে নিহতদের দেহ উদ্ধারের পরে এমনটাই দাবি পুলিশের। মঙ্গলবার সকালে হুগলির ধনেখালির দশঘড়ার রায়পাড়ার ঘটনা। হাতের শিরা কাটা অবস্থায় প্রমথেশ ঘোষাল নামে ওই যুবক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

নিহতরা হলেন প্রমথেশের বাবা অসীম ঘোষাল (৭০), মা শুভ্রা ঘোষাল (৬২) এবং বোন পল্লবী চট্টোপাধ্যায় (৩৩)। হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার অমনদীপ জানান, প্রমথেশ একাই রোজগেরে। সংসারের ব্যয় সামাল দিতে পারছিল‌ না। সেই কারণেই এই ঘটনা ঘটায় বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। এসপি বলেন, ‘‘যুবকটির অবস্থা স্থিতিশীল। নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। সুস্থ হলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রমথেশ অঙ্কের গৃহশিক্ষক। মঙ্গলবার ভোরে গৃহ-সহায়িকা এলে দরজা না খুলে প্রমথেশ তাঁকে ফিরিয়ে দেয়। সকাল ৮টা নাগাদ ছাত্ররা পড়তে আসে। ডাকাডাকি, দরজা ধাক্কাধাক্কিতেও কেউ সদর দরজা খোলেনি। অন্য দিক দিয়ে ঢুকে দেখা যায়, দরজার পাশে প্রমথেশ পড়ে আছে। পাশের ঘরে খাটে পল্লবী এবং মেঝেতে বাবা-মায়ের রক্তাক্ত দেহ। গোটা ঘর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। শ্যামল বিশ্বাস নামে এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘ওই দৃশ্য দেখে চমকে যাই। প্রমথেশই বলে, সে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। আমরা যেন পুলিশে খবর দিই।’’ পুলিশ দেহ তিনটি ময়নাতদন্তের জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠায়। প্রমথেশকে পুলিশ পাহারায় ধনেখালি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তদন্তকারীরা জানান, পল্লবী কালীপুজোর আগে বাপের বাড়িতে এসেছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে পর পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাত সাড়ে ৮টা-৯টা নাগাদ প্রমথেশ প্রথমে কাঠের খিলজাতীয় কিছু দিয়ে বাবা-মা-বোনের মাথায় মারে। তার পরে গলা এবং হাতের শিরা কেটে দেয়। ঘটনাস্থলেই তাঁরা মারা যান। প্রমথেশ সারারাত ঘরেই কাটায়। ভোরে নিজের হাতেও ব্লেড চালিয়ে দেয়।

Advertisement

কেন এমন করল বছর চল্লিশের ওই যুবক?

আত্মীয়েরা জানান, অনার্স নিয়ে বিএসসি পাশ প্রমথেশের গৃহশিক্ষক হিসেবে নামডাক রয়েছে। তার কাছে প্রায় দু’শো ছাত্রছাত্রী পড়ত। করোনা পরিস্থিতিতে ওই সংখ্যা ৩০-৩৫ জনে নেমে আসে। রোজগার এক ধাক্কায় অনেক কমে যায়। প্রমথেশ লিভারের জটিল অসুখে ভুগছে। চিকিৎসায় প্রচুর খরচ হচ্ছে। বাবা-মায়ের জন্যও মাসে কয়েক হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হচ্ছিল। তদন্তকারী এক অফিসার বলেন, ‘‘প্রমথেশ হয়তো ভাবছিল, রোগে তার কিছু হয়ে গেলে বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখার কেউ থাকবে না। পল্লবীকেও অর্থ সাহায্য করতে হত। পল্লবীও পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন না। সব মিলিয়েই প্রমথেশ ওই সিদ্ধান্ত নেয়।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, প্রমথেশেরই এক আত্মীয় তার বিরুদ্ধে ধনেখালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। প্রমথেশের জ্যাঠতুতো বোন অরুণীতা রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, নিজের অসুস্থতা এবং সংসার খরচ অত্যাধিক বেড়ে যাওয়াতেই দাদা এই পথ বেছে নিয়ে থাকতে পারে। যা ঘটল, ভাবতে পারছি না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement