তন্ময় বর
পুরনো প্রেমিকা আর তাঁর পরিবারের উপরে রাগ ছিল যুবকের। তরুণীকে অপহরণের অভিযোগে জেলও খাটতে হয়েছিল। জামিনে ছাড়া পেয়ে কিছু দিন ধরে নানা উৎপাত শুরু করেছিল যুবক। মঙ্গলবার রাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তরুণীর বাড়িতে চড়াও হয়। সামনে পড়ে যান তরুণীর জ্যাঠা-জেঠিমা। তাঁদের গুলি করে খুন করে পালায় যুবক।
ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া থানার টুনিঘাটা এলাকার লন্ডনপাড়ায়। পুলিশ জানায়, গুলি লাগে লীলারানি মণ্ডলের (৫১) মাথায়। হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। লীলারানির স্বামী প্রাক্তন সেনাকর্মী রামকৃষ্ণকে (৫৭) কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হলে পথেই মারা যান তিনি। পুলিশ দেহ দু’টি ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। অভিযুক্ত তন্ময় বরের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। বারাসত পুলিশ জেলার সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে আমাদের অনুমান, পুরনো শত্রুতার জেরেই এই খুন।’’
কী সেই পুরনো শত্রুতা?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রামকৃষ্ণর ভাইয়ের মেয়ে কলেজে প্রথমবর্ষে পড়েন। ২০১৮ সালে তাঁকে নিয়ে বাংলাদেশে পালায় তন্ময়। অপহরণের অভিযোগ দায়ের হয় থানায়। কিছু দিন পরে তরুণীকে নিয়ে তন্ময় যখন দেশে ফেরে, তখন মেয়েটি ১৮ পেরিয়েছে। তন্ময়ের বাড়িতেই ওঠেন তিনি। অপহরণের মামলা নিয়ে মেয়ের পরিবারের তরফে আর উচ্চবাচ্য করা হয়নি।
কিছু দিন বাদে তরুণীর উপরে শুরু হয় অত্যাচার। বাপের বাড়ি থেকে টাকা, জিনিসপত্র আনার জন্য চাপ দেওয়া হতে থাকে। বাধ্য হয়ে বাপের বাড়িতে ফিরে আসেন তরুণী। তন্ময়ের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হতে শুরু করে।
ঘটনাটা মেনে নিতে পারেনি তন্ময়। পুরনো প্রেমিকাকে নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। তরুণী তত দিনে নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেছেন। কিন্তু স্কুলে যাতায়াতের পথে হুমকি দিতে শুরু করে তন্ময়। বুঝিয়ে কাজ না হওয়ায় অপহরণের পুরনো মামলাটি নিয়ে নতুন করে থানায় তদ্বির করে তরুণীর পরিবার। পুলিশ গ্রেফতার করে তন্ময়কে। কিছু দিনের মধ্যে জামিন পায় কাশীপুর কলতলা এলাকার যুবক তন্ময়। এ বার শুরু হয় হুমকির পালা।
তরুণী বলেন, ‘‘বাড়িতে এসে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেবে বলে ফোন, মেসেজ করেছিল তন্ময়। আমাকে একবার রাস্তায় টোটো থেকে নামিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তারপর বাড়ি থেকে বিশেষ একটা বেরোতাম না। একবার বাড়িতে অ্যাসিডও ছুড়েছিল।’’
এ সব কথা অবশ্য পুলিশকে জানায়নি পরিবারটি। সে জন্য এখন আফসোস করছে তারা। তরুণীর বাবার কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম, ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। খুব বেশি লোক জানাজানি হোক চাইনি। কিন্তু এখন তো দেখছি, কাজটা ঠিক হয়নি।’’
অভিযোগ, মঙ্গলবার রাত আড়াইটে নাগাদ দোতলা বাড়ির পাশের নারকেল গাছ বেয়ে ছাদে উঠে চিলেকোঠার গ্রিলের দরজা ভেঙে সে বাড়ির ভিতরে ঢোকে। কয়েকটি ঘরের দরজা বাইরে থেকে শিকল তুলে আটকে দেয়। খুটখাট শব্দে বাড়ির লোকজনের ঘুম ভেঙে যায়। ঘর থেকে বেরিয়ে এসে লীলারানি ও রামকৃষ্ণ উঠোনে মুখোমুখি হয়ে যান তন্ময়ের। অভিযোগ, পর পর দু’টি গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায় ওই যুবক।
টিনের চাল দেওয়া মাটির বাড়ি তন্ময়দের। আংটি, মাদুলি তৈরির কাজ করে সে। বুধবার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ঘরে তালা দেওয়া। তার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। পড়শিরা জানিয়েছেন, জেল থেকে বেরিয়ে তন্ময় বাড়িতে বিশেষ আসত না।