আশিস শীট। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে
দুর্ঘটনা ঘটছে বারবারই। বন দফতরের তরফে নিষেধও করা হচ্ছে বারবার। তবু হুঁশ ফিরছে না।
হাতির ছবি তুলতে গিয়ে দাঁতালের হামলায় ফের এক যুবকের মৃত্যু হল ঝাড়গ্রামে। রবিবার বিকেলে সাঁকরাইলের খুদমরাই অঞ্চলের আতাডিহার জঙ্গলে মৃত্যু হয় আশিস শীট (৩২)-এর। তাঁর বাড়ি হাওড়ার আন্দুলের মৌড়ী পাকুরতলায়। বিবাহিত আশিস বেসরকারি সংস্থার কর্মী। তাঁর স্ত্রী রুমা সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
আগামী রবিবার আন্দুলের বাড়িতে রুমার সাধের অনুষ্ঠান রয়েছে। এ দিন সকালে তারই নিমন্ত্রণ করতে গাড়িতে ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইল ব্লকের ধানঘোরিতে মামাবাড়িতে যাচ্ছিলেন আশিস। সঙ্গে ছিলেন বন্ধু উত্তম ঘোষ ও চালক। বন্যপ্রাণীর ছবি তোলার নেশা ছিল আশিসের। প্রায়ই পাখি ও অন্যান্য প্রাণীর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করতেন। তবে কখনও হাতির ছবি তুলতে পারেননি বলে বন্ধুমহলে আক্ষেপ করতেন। এ দিন মামাবাড়ি যাওয়ার আগে চিল্কিগড়ের জঙ্গলে পাখির ছবি তুলতে যান আশিস।
আরও পড়ুন: ছোট্ট লাল পোকা, কামড়ালে মৃত্যুও হতে পারে, সতর্কতা রাজ্যে
পরে আশিস জানতে পারেন, আতাডিহার জঙ্গলে হাতির দল রয়েছে। গাড়ি নিয়ে বিকেলে সেখানে হাজির হন। বন্ধু ও মামাতো ভাইকে নিয়ে জঙ্গলে ঢোকেন। হাতির দলের ছবি তুলতেও শুরু করেন আশিস। উত্তম বলেন, ‘‘হুলাপার্টির সদস্য ও স্থানীয় লোকজন দেখে হাতির দল তেড়ে আসছিল। সবাই ছুটে পালাচ্ছিলেন।’’ বার দুয়েক হাতির তাড়া খেয়ে আশিস ও তাঁর সঙ্গীরাও প্রথমে ছুটে পালান। পরে ফের জঙ্গলের ভিতরে গিয়ে আশিস ছবি তুলতে থাকেন। তখন একটি দাঁতাল তাড়া করলে আশিস আর ছুটে পালাতে পারেননি। উত্তম জানান, তাঁর ও আশিসের মামাতো ভাইয়ের পিছনেই ছুটছিলেন আশিস। কিন্তু হাতিটি আশিসকে শুঁড় দিয়ে ধাক্কা মারলে তিনি ছিটকে পড়েন। কান দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে সাঁকরাইলের ভাঙাগড় গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে বাঁচানো যায়নি। স্থানীয়েরা জানান, আশিস ফ্ল্যাশ দিয়ে ছবি তুলছিলেন। চোখে আলোর ঝলকানি লাগতেই হাতিটি তেড়ে যায়। আশিসের ক্যামেরাও গুঁড়িয়ে দিয়েছে হাতিটি।
বছর চারেক আগে হাতির ছবি তুলতে গিয়েই ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়ার জঙ্গলে মৃত্যু হয়েছিল মেদিনীপুর পুরসভায় কংগ্রেসের তরুণ কাউন্সিলর কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এ বারও ঝুঁকি নিতে গিয়েই বিপত্তি ঘটেছে বলে জানালেন খড়্গপুরের ডিএফও অরূপ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ওই যুবককে ঝুঁকি নিয়ে হাতির ছবি তুলতে নিষেধ করেছিলেন হুলাপার্টির সদস্যরা। কিন্তু উনি শোনেননি। বারবার আমরা সতর্ক করছি, জঙ্গলে হাতির কাছাকাছি যাওয়া, ছবি তোলা বিপজ্জনক। এটা আত্মহত্যার সমান।’’
আশিসের মামিমা প্রিয়ঙ্কা শীটের আক্ষেপ, ‘‘হাতির দলকে কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা আশিসের ছিল না। কোত্থেকে যে কী হয়ে গেল!’’