এফআইআরের প্রতিলিপির সঙ্গে অভিযুক্তের ছবি নেটমাধ্যমে পোস্ট করেছেন তরুণী।
চলন্ত ট্রেনে মত্ত অবস্থায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এক জওয়ান তাঁর শ্লীলতাহানি করেছেন বলে অভিযোগ করলেন এক তরুণী। তাঁর অভিযোগ, সোমবার রাত ১২টা নাগাদ দুর্গাপুর স্টেশনে নামার সময় ট্রেনের ভিতরে তাঁকে জাপ্টে ধরে শ্লীলতাহানি করেন প্রায় বিনা পোশাকে থাকা ওই জওয়ান। চিৎকার করে উঠলে তাঁকে ছেড়ে ট্রেনের বাথরুমে লুকোনোর চেষ্টা করেন অভিযুক্ত। সে সময় ট্রেনটি স্টেশনে পৌঁছলে রেলপুলিশ-সহ অন্যান্য আধিকারিক এসে অভিযুক্তকে ধরে ফেলেন। রাতেই অন্ডাল জিআরপি থানায় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছেন তরুণী। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার গোটা ঘটনার বিবরণ দিয়ে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেছেন বছর চব্বিশের ওই তরুণী। তাতে ওই এফআইআরের প্রতিলিপির সঙ্গে অভিযুক্তের শার্টহীন ছবিও জুড়ে দিয়েছেন তিনি। অন্ডাল থানায় এফআইআর করার পর ওই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারা-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
আদতে দুর্গাপুরের বাসিন্দা ওই তরুণীর ব্যবসা রয়েছে কলকাতায়। সোমবার রাত ৯টা ৫০ নাগাদ দুর্গাপুর যাওয়ার জন্য হাওড়া থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন তিনি। মঙ্গলবার আনন্দবাজার অনলাইন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে ওই তরুণী বলেন, ‘‘ট্রেনে উঠে দেখি কামরায় পুরো ব্যাটেলিয়ন বসে রয়েছে। ওই লোকটি (অভিযুক্ত) সে সময় শার্ট ছাড়াই শুধুমাত্র অন্তর্বাস পরে ট্রেনের কামরায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল। মত্ত অবস্থায়ও ছিল। এ নিয়ে অন্য যাত্রীরাও প্রতিবাদ করেন।’’ তরুণীর কথায়, ‘‘রাত ১১টা ৫০ মিনিট নাগাদ দুর্গাপুর স্টেশনে নামার জন্য কামরার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সে সময় আচমকাই পিছন থেকে এসে আমাকে জাপ্টে ধরে লোকটি। আমি চিৎকার করে উঠতে লোকটি আমাকে ছেড়ে দৌড়ে বাথরুমের দিকে ছুটতে থাকে। আমার চিৎকার শুনে তত ক্ষণে ট্রেনের টিটি-র সঙ্গে লোকজন ছুটে এসেছেন। আমিও দৌ়ড়ে বাথরুমের দিকে যাই। লোকটি ভিতর থেকে বাথরুমের দরজা বন্ধ করার চেষ্টা করছিল। আমি দরজায় ধাক্কা দিতে থাকি। এক সময় বাথরুম থেকে বেরিয়ে আমাকে লাথি মেরে গালি দিয়ে এগোতে যায়। তবে তত ক্ষণে স্টেশনে ট্রেন থেমে পড়ায় রেলপুলিশ এসে পড়ে লোকটাকে ধরে ফেলে।’’
তিনি বহু বার একা ট্রেনে সফর করছেন বলে জানিয়েছেন। তবে এ ধরনের ‘অভিজ্ঞতা’ এই প্রথম বলে দাবি তরুণীর। তাঁর কথায়, ‘‘এত দিন একা একা ট্রেনে যাতায়াত করছি। কিন্তু কখনও এ রকম হয়নি।’’
ওই তরুণী জানিয়েছেন, ঘটনার পর রাতেই অন্ডাল জিআরপিএস-এর কাছে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন তিনি। সে সময় অভিযুক্তের নাম-পরিচয় জানতে পারেন। সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি)-এর ৬৩ ব্যাটেলিয়নের ওই ব্যক্তির নাম ধীরেন্দ্রকুমার মিশ্র বলে জানিয়েছেন তিনি। তরুণীর দাবি, ঘটনার পরই এ বিষয়ে তাঁকে থানাপুলিশ না করার অনুরোধ করেছেন ধীরেন্দ্রর সহকর্মী এবং ঊর্ধ্বতন আধিকারিকেরা। তরুণীর দাবি, ‘‘লোকটি আমাকে বলে যে ‘১৫ বছরের চাকরিতে এ ধরনের ভুল প্রথম বার করেছি। মুঝে মাফ কর দিজিয়ে ম্যাডাম।’ ’’
মঙ্গলবার আসানসোলের সিজেএম আদালতে তোলা হলে অভিযুক্তকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক তরুণকুমার মণ্ডল।
অভিযুক্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করলেও এত সহজে তাঁকে ছেড়ে দিতে চান না তরুণী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এরা এ রকম করে পার পেয়ে যাবে। তবে তা হবে না!’’