রাজ্য কমিটি আজ

কট্টর কারাটকে নরম করার যুদ্ধে ইয়েচুরি

বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের হাত ধরে রাজনৈতিক ভাবে একেবারেই ভুল পথে হাঁটা হয়েছিল বলে রাজ্য সিপিএমকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চায় দলের পলিটব্যুরো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪৭
Share:

বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের হাত ধরে রাজনৈতিক ভাবে একেবারেই ভুল পথে হাঁটা হয়েছিল বলে রাজ্য সিপিএমকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চায় দলের পলিটব্যুরো। দলের কেন্দ্রীয় কমিটি এই ব্যাপারে সম্প্রতি যে ফরমান জারি করেছে, সেই মর্মেই আজ, রবিবার আলিমুদ্দিনে নোট পেশ করতে চলেছেন প্রকাশ কারাটেরা। তবে ভুল মেনে নিলেও কংগ্রেসের প্রশ্নে একেবারে ‘না’ বলছে না সিপিএম। কোনও ব্যাপারেই কংগ্রেসের সঙ্গে যাওয়া যাবে না, এমন কট্টরপন্থী অবস্থান ঠেকিয়ে রেখেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিই।

Advertisement

দলের লাইন শোধরানোর বার্তা নিয়ে আজ সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকছেন কারাটেরা। ইয়েচুরি, পলিটব্যুরোর তরফে সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কারাট, এম এ বেবি এবং হান্নান মোল্লা অবশ্য শনিবারই কলকাতায় পৌঁছে সন্ধ্যায় রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে হাজির ছিলেন। রাতে শহরে এসে অল্প সময়ের জন্য বৈঠকে যোগ দেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও। দলীয় সূত্রের খবর, এই বৈঠকেই ইয়েচুরি ও বঙ্গ ব্রিগেডের প্রবল আপত্তিতে কংগ্রেসের থেকে একেবারে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কৌশল ঠেকিয়ে রাখা গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার লড়াইয়ে কংগ্রেস-সহ সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে একজোট হতে হবে, এই আহ্বানেই সিলমোহর পড়তে পারে আজ রাজ্য কমিটিতে।

নির্বাচনী কৌশলে বঙ্গ সিপিএম কী ভাবে ভুল করেছে, এ দিন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর কাছে সেই নোটের ব্যাখ্যা দেন কারাট। তার পরেই প্রতিবাদে মুখর হন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর অধিকাংশ সদস্য। তাঁদের যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গের বাস্তবতা না বুঝেই একতরফা মত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে! কংগ্রেসের হাত ধরে লড়াই করে ভোটে ভাল ফল হয়নি ঠিকই। কিন্তু জোট না বাঁধলে বেশ কিছু আসনে প্রার্থী এবং বহু বুথে কর্মী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ছিল। ভোটের আগে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটা বাতাবরণ যে অন্তত তৈরি করা গিয়েছিল, তা-ও জোটবদ্ধ লড়াইয়ের সৌজন্যেই।

Advertisement

বাংলার রাজ্য নেতারা কারাট-মানিকদের সামনে প্রশ্ন তুলেছেন, এর পরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ফরমান মেনে সূর্যকান্ত মিশ্র বা বিমান বসু যদি জেলায় জেলায় ঘুরে বলতে যান কংগ্রেসের সঙ্গে যাওয়া ভুল হয়েছিল, তাতে কি এক চুল বিশ্বাসযোগ্যতাও আর বজায় থাকবে? রাজ্য নেতৃত্বের চাপের মুখেই আপাতত মধ্যপন্থায় সায় দিতে হচ্ছে কারাটদেরও। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বা শ্রম সংস্কারের মতো কিছু রাজনৈতিক বিষয়ে আলাদা করেই কর্মসূচি হবে। কিন্তু গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার উপরে আঘাতের প্রতিবাদ করার সময় কংগ্রেসকেও পাশে নেওয়া হবে। একটা সীমারেখা টেনেই আপাতত চলতে হবে।’’

ইয়েচুরিরা চাইছেন, দলের নির্বাচনী রণকৌশল নিয়ে গোটা বিতর্কে এখনই ইতি টানতে। কারণ, সেই ২০১৯ সালে লোকসভা ভোট ছা়ড়া সামনে আপাতত বড় কোনও নির্বাচন নেই। মাঝে পঞ্চায়েত বা পুরভোট থাকলেও সেখানে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মাথা ঘামায় না। তাই নির্বাচনী কৌশলের প্রশ্নে কী করণীয়, সেই সিদ্ধান্ত লোকসভা ভোটের সময়েই নেওয়া যেতে পারে। আর তার আগে ২০১৮ সালে দলের পার্টি কংগ্রেসে বিজেপি-কে মূল শত্রু বলে চিহ্নিত করে রাজনৈতিক লাইন নেওয়া হলে কংগ্রেসের জন্যও দরজা খোলা থাকবে। কারাটেরা যদিও বিজেপি এবং কংগ্রেস, দু’দলের বিরোধিতাই সমান তালে চলার কথা বলে সনিয়া গাঁধীর দলের সঙ্গে বোঝাপড়ার রাস্তা এখনই বন্ধ করে দিতে চাইছিলেন। কিন্তু বাংলার চাপের মুখে তাঁদের আপসের পথেই থাকতে হচ্ছে বলে সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত।

রাজ্য কমিটির যে সদস্যেরা আজকের বৈঠকে বক্তা হবেন, তাঁদের দিয়ে কিছু প্রশ্ন তোলাতে চায় আলিমুদ্দিন। বিশেষ করে, তারা জোর দিচ্ছে বিশাখাপত্তনম পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত রাজনৈতিক লাইন এবং পরে কলকাতা প্লেনামে পাশ হওয়া প্রস্তাবে থেকে যাওয়া ‘নমনীয় কৌশল’ কথাটার উপরে। বঙ্গ সিপিএমের প্রশ্ন, ভোটের সময়ে নমনীয় হতে না পারলে এত প্রস্তাবে লাভ কী! দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত রাতারাতি একটা রাজ্য কমিটিতে বদলে দেওয়া যাবে না। ওঁদের মত রাজ্যে আমাদের শুনতেই হবে। সেই সঙ্গেই রাজ্যের পরিস্থিতি ফের ব্যাখ্যা করে কিছু প্রশ্ন আমরা এই বৈঠকে তুলতে চাই।’’

বাংলার সিপিএমের বড় অংশই চাইছে, এই বিতর্কে দাঁড়ি পড়ুক! মন দেওয়া হোক রাস্তার আন্দোলনে। নইলে বিরোধী রাজনীতির পরিসরও হাতছাড়া হবে। এক দিকে কংগ্রেস এবং অন্য দিকে বিজেপি দ্রুত জায়গা দখল করে নেবে। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়ার পরে বিধানসভায় দু’কোটি ১৫ লক্ষ মানুষ বিরোধী জোটকে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে যাওয়া ঠিক না ভুল, এই তর্কের চোটে আমাদের অনেক সমর্থকও এখন তিতিবিরক্ত হয়ে উঠছেন!’’ রাজ্য দলের একটি বড় অংশের মত, কোথাও হামলার ঘটনা ঘটলেই বাম ও কংগ্রেসের জনপ্রতিনিধিরা যদি অন্তত আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে যান নিয়মিত, তা হলেও যৌথ লড়াইয়ের বার্তা দিয়ে নিচু তলার কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত রাখা যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement