প্রতীকী ছবি।
করোনা-আবহে অন্য সমস্যা নিয়ে রোগী ভর্তিতে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। এ বার খাস কলকাতার চার হাসপাতাল ঘুরেও মারধরে জখম এক যুবককে ভর্তি করা গেল না বলে অভিযোগ তুলল পরিবার। একটি নার্সিংহোমে শেষমেশ ভর্তি করা হয়েছিল ওই যুবককে। কিন্তু প্রাণে বাঁচানো যায়নি।
শুক্রবার সকালে মৃত্যু হয় আনসারুল হক (৩৬) নামে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাশীপুর থানার জয়পুরের মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা ওই যুবকের। তাঁকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন ভাই এমদাদুল হক। গ্রেফতার করা হয়েছে মাহাবুব মোল্লা ও এমদাদুল মোল্লা নামে দু'জনকে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, দীর্ঘ দিন ধরে ওই এলাকার বাসিন্দা আনসারুল হকের পরিবারের সঙ্গে একটি শরিকি পুকুর নিয়ে বিবাদ চলছে লায়েব আলি মোল্লাদের। বৃহস্পতিবার সকালে দুই পরিবারের উপস্থিতিতে পুকুরে মাছ ধরা হচ্ছিল। মাছ বিক্রির টাকা নিয়ে বচসা বাধে। অভিযোগ, সে সময়ে আনসারুলের মাথায় বাঁশের ঘা মারে লায়েব আলির ছেলে নজিবর মোল্লা।
সকাল ৯টা নাগাদ জিরেনগাছা ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় জখম যুবককে। পরিবারের দাবি, অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় আরজিকর মেডিক্যালে রেফার করা হয় তাঁকে। সকাল ১০টা নাগাদ সেখানে পৌঁছে মাথার সিটি স্ক্যান করানো হয়। কিন্তু ভর্তি নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ঘণ্টা দু’য়েক পরে আনসারুলকে এমআর বাঙুরে রেফার করা হয়। বেলা ১টা নাগাদ সেখানে পৌঁছন সকলে। কিন্তু ভর্তি করা যায়নি। পরিবারের দাবি, আনসারুলকে এ বার রেফার করা হয় চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে। সেখানে যখন পৌঁছন, তখন বিকেল প্রায় পৌনে ৫টা বাজে। আনসারুল তত ক্ষণে নেতিয়ে পড়েছে। কিন্তু এ বারও ভর্তি করা যায়নি তাঁকে। তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এমআর বাঙুরেই। টানাহেঁচড়া করে আর ঝুঁকি নেননি বাড়ির লোক। তাঁরা ঠিক করেন, আনসারুলকে ভর্তি করবেন নার্সিংহোমে। অভিযোগ, সেই চেষ্টাতেও কাজ হয়নি। ‘বেড নেই’ এই যুক্তিতে কয়েকটি নার্সিংহোম ফিরিয়ে দেয়।
শেষ পর্যন্ত ভাঙড়ের কাশীপুর থানার পুলিশের হস্তক্ষেপে রাত ৯টা নাগাদ প্রগতি ময়দান থানা এলাকার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয় আনসারুলকে। শুক্রবার সকালে সেখানেই মারা যান ওই যুবক। পুলিশ দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে।
মৃতের ভগ্নীপতি এনদাদুল মোল্লা বলেন, ‘‘আরজিকর হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করার পরে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করা হলে, হয় তো ও বেঁচে যেত। কলকাতার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ঘুরেও ভর্তি করতে না পেরে যখন নার্সিংহোমে ভর্তি করা হল, তখন ও মৃতপ্রায়।’’
সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার চেষ্টা করেছিল পুলিশও। কাশীপুর থানার এক অফিসার বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালগুলিতে এ রকম এক জনকে ভর্তি না-করাটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’’ স্বাস্থ্য দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।