প্রতীকী ছবি।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড বুরো-র (এনসিআরবি) ২০১৬ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী এ রাজ্য থেকে পাচার হওয়া কিশোরীর সংখ্যা ৩,৫৭৯। ২০১৭-র রিপোর্টে তা এক ধাক্কায় ৩৫৭!
চাঞ্চল্যকর এই পার্থক্য সামনে আসার পরই ক্ষুব্ধ একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং ইতিমধ্যেই উদ্ধার হওয়া নির্যাতিতারা। তাঁদের অভিযোগ, আসলে পাচারের পরে ফিরে আসা মেয়েদের দায়ের করা এফআইআরে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭০ নম্বর ধারা (মানব পাচার) যুক্ত না করার ফলেই পরিসংখ্যানের এই তারতম্য। তাঁদের দাবি, একাধিক মামলা শুধু অপহরণের মামলা হিসেবে পুলিশ দেখিয়ে রেখেছে। তার জেরেই পরিসংখ্যানে এ রাজ্য থেকে মানব পাচার এক ধাক্কায় কমে গিয়েছে দশ গুণ।
যেমন, রাবিয়া খাতুন (নাম পরিবর্তিত)। ২০১৬ সালে পুণে থেকে উদ্ধার হওয়া রাবিয়া নিখোঁজের সময়ে ছিল চোদ্দো বছরের কিশোরী। তার পরিবার নিখোঁজ ডায়েরি করলে পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৩ এবং ৩৬৬ ধারায় (অপহরণ) অভিযোগ দায়ের করে। উদ্ধারের পরে কিন্তু পাচারের ধারা আজ পর্যন্ত যোগ হয়নি মামলায়। একই ভাবে ১৪ এবং ১৫ বছর বয়সে নিখোঁজ হয়ে পাচার হয়ে গিয়েছিল সুফিয়া মিস্ত্রি ও অর্পিতা নস্কর (নাম পরিবর্তিত)। ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে এরাও উদ্ধার হয় পুণে থেকে। এদের দু’জনের ক্ষেত্রেও পুলিশ এখনও পর্যন্ত পাচার হওয়ার কোনও উল্লেখ করেনি এফআইআরে!
গত দু’-তিন বছর ধরে একাধিক নিখোঁজ মেয়ে ফিরে আসার পরে জানা যায়, তারা পাচার হয়ে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। অভিযোগ, উদ্ধারের পরে ফিরে এলেও পুলিশ তাদের গোপন জবানবন্দি দেওয়ার আবেদন করেনি আদালতে। ফলে অভিযোগে যুক্ত হয়নি পাচারের ধারা। একই ভাবে নাবালিকা অবস্থায় তাদের উপরে যৌন নির্যাতন হওয়ার জন্য পকসো-র ধারাও যোগ করেনি পুলিশ।
অভিযোগ, পুলিশের এই গাফিলতিই ধরা পড়েছে এনসিআরবি রিপোর্টে। ক্যানিংয়ের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে শুভশ্রী রাপ্তানের দাবি, ‘‘একাধিক ক্ষেত্রে মেয়েরা উদ্ধার হয়ে ফিরে আসার পরে পুলিশ পাচারের ধারা যোগ করেনি। ফলে সেই মামলাগুলির কোনও রেকর্ডই থাকছে না!’’ মানব পাচার নিয়ে গবেষণা করেছেন স্নিগ্ধা সেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমার কাছে ২৫৯টি কেস রয়েছে। যার মধ্যে ‘সোর্স’ এলাকায় (নিখোঁজ বা অপহরণ হয়েছে যেখান থেকে) পাঁচ শতাংশ এবং ‘ডেস্টিনেশন’ এলাকায় (যেখানে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা হয়) ন’শতাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ মূল অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭০ ধারা যোগ করেছে। বাকি কোনও ক্ষেত্রেই ওই ধারা যোগ করা হয়নি।’’ একই দাবি করেছেন উত্তর ২৪ পরগনার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিও। তাদের কথায়, গত এক-দু’বছরে উদ্ধারের পরে একাধিক মেয়ে অভিযোগে জানিয়েছে, তাদের এফআইআরে ৩৭০ ধারা যোগ হয়নি।