বিজেপি না-করায় মার! দাবি পুত্রহারা মায়ের

শিখা গঙ্গোপাধ্যায় নামে ওই তরুণী থাকেন অশোকনগর থানার সেনডাঙা এলাকায়। রবিবার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। ভাশুর সুশান্ত গঙ্গোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

অশোকনগর শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৯ ০৪:৫০
Share:

শোকার্ত শিখা। —ছবি: সুজিত দুয়ারি

মাস দু’য়েকের ছেলেকে কোলে নিয়ে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছিলেন মা। অভিযোগ, তাঁকে মারধর শুরু করেন ভাসুর-ননদরা। আঘাত লাগে শিশুর বুকে। পরে হাসপাতালে মারা যায় সে। শিশুর মায়ের অভিযোগ, উঠোন ঝাঁট দিতে দেরির অজুহাতে মারধর শুরু হলেও এর পিছনে রাজনৈতিক আক্রোশ আছে। পরিবারটি কট্টর বিজেপি সমর্থক। কিন্তু ওই তরুণী ও তাঁর স্বামী সম্প্রতি যোগ দেন তৃণমূলে। শিশুর মায়ের দাবি, ‘‘মারধরের মূল কারণ, আমার বিজেপিকে সমর্থন না করা।’’

Advertisement

শিখা গঙ্গোপাধ্যায় নামে ওই তরুণী থাকেন অশোকনগর থানার সেনডাঙা এলাকায়। রবিবার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। ভাশুর সুশান্ত গঙ্গোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শিপ্রা শর্মা, রিনা মণ্ডল, সমাপ্তি গঙ্গোপাধ্যায়, কমলা গঙ্গোপাধ্যায় এবং শৌভিক গঙ্গোপাধ্যায় নামে বাকি অভিযুক্তেরা পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন, মারধর এবং শিশুকে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। বারাসত পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। এক জন গ্রেফতার হয়েছে। বাকিরা পলাতক।’’

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পারিবারিক বিবাদের জেরে তরুণীর উপরে বরাবরই নির্যাতন চলত। এ দিকে, ঘটনার কথা জানাজানি হতেই উত্তেজিত তৃণমূলকর্মী-সমর্থকেরা অশোকনগর থানার সামনে জড়ো হন। অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির দাবি তোলেন। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক ধীমান রায় বলেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত ভোটে ওই তরুণীকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিজেপির টিকিটে দাঁড়ানোর জন্য চাপ দিয়েছিল। রাজি হননি উনি। নানা সময়ে বিজেপি করার জন্য চাপ দিত। সে কথা শোনেনি ওই তরুণী। সেই রাগেই মারধর। শিশুটিও চোট পেয়ে মারা গেল।’’ বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের কথায়, ‘‘কোনও রাজনৈতিক দল এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটাতে পারে, ভাবাই যায় না।’’

Advertisement

তাঁর অভিযোগপত্র।

ধৃত সুশান্ত ওরফে পাগলা বিজেপির স্থানীয় যুব মোর্চার সভাপতি। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, বাড়িতে ঝামেলা হয়েছিল, কিন্তু তিনি কাউকে মারধর করেননি। সুশান্তর কথায়, ‘‘শিশুটি জন্মের সময় থেকেই অসুস্থ ছিল। আমিই চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলাম। এ সবের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।’’ বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার মহিলা মোর্চার সভানেত্রী ভাস্বতী সোম বলেন ‘‘শিশুটির মৃত্যু দুঃখজনক। তবে জমিজমা, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরেই এই ঘটনা। এর পিছনে রাজনীতি নেই।’’

শনিবার ঘটনার পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল ছোট্ট শিবাকে। শনিবার রাতে সেখানেই মারা যায় সে। তদন্তকারী অফিসারদের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গলায় দুধ আটকে মারা গিয়েছে শিশুটি। সদ্য সন্তানহারা শিখা বলেন, ‘‘স্বামী কাজের সূত্রে কেরল থাকেন। আমাকে শ্বশুরবাড়িতে মারধর করত নানা কারণে। অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম যখন, তখনও মারধর করে। আমাদের এখানে থাকতে দিতে চায় না ওরা।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমরা তৃণমূল করার পর থেকে কয়েক বার বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছিল।’’

শনিবার সকালে কী হয়েছিল? শিখার কথায়, ‘‘ছেলেকে কোলে নিয়ে দুধ খাওয়াচ্ছিলাম। উঠোন ঝাঁট দিতে দেরি করেছি কেন, তাই নিয়ে ভাশুর-ননদরা চিৎকার শুরু করে। ঘরে ঢুকে মারধর করে। আমি বলি, ছেলেটা কোলে আছে। এ ভাবে মেরো না। কিন্তু ওরা শোনেনি। ননদ শিপ্রা গলায় কাপড়ের ফাঁস জড়িয়ে দিয়েছিল। ভাশুর মাথা ঠুকে দেয় মেঝের সঙ্গে। তখনই ছেলেটার বুকে চোট লাগে।’’

শিখার দাবি, ‘‘উঠোন ঝাঁট না দেওয়াটা অজুহাত। আসলে আমরা তৃণমূল করি, সেই রাগেই মারল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement