পাশে সহযাত্রীরা, প্রসব চলন্ত ট্রেনে

ছ’বছর অপেক্ষা করেছেন। ঘুরেছেন নানা হাসপাতালে। সেই অপেক্ষার অবসান হল চলন্ত ট্রেনে! অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেবি বেগমকে নিয়ে শনিবার বিকেলে ট্রেনে বাড়ি ফিরছিলেন বীরভূমের সাঁইথিয়ার আজিজুল শেখ।

Advertisement

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার

সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৬ ০২:৫৬
Share:

সাঁইথিয়া হাসপাতালে ছেলের সঙ্গে বেবি। ছবি: অনির্বাণ সেন

ছ’বছর অপেক্ষা করেছেন। ঘুরেছেন নানা হাসপাতালে। সেই অপেক্ষার অবসান হল চলন্ত ট্রেনে!

Advertisement

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেবি বেগমকে নিয়ে শনিবার বিকেলে ট্রেনে বাড়ি ফিরছিলেন বীরভূমের সাঁইথিয়ার আজিজুল শেখ। মাঝপথে প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় বেবির। সহযাত্রী দুই মহিলা বুঝতে পারেন, প্রসব করাতে হবে ট্রেনেই। এগিয়ে আসেন অন্য সহযাত্রীরাও। শৌচাগারের কাছে গামছা দিয়ে ঘিরে প্রসব করান তাঁরাই। ট্রেন থেকেই ফোনে খবর দেওয়া হলে স্টেশনে অপেক্ষায় ছিলেন আরপিএফ কর্মীরা। ট্রেন পৌঁছতেই প্রসূতি ও সদ্যোজাতকে হাসপাতালে পৌঁছে দেন তাঁরা। হাসপাতাল রবিবার জানায়, মা-শিশু দু’জনেই সুস্থ রয়েছেন।

সাঁইথিয়ার কানাইপুর গ্রামের বাসিন্দা পেশায় ভ্যানচালক আজিজুল জানান, ছ’বছরের দাম্পত্য জীবনে আগে তাঁদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু সন্তান হচ্ছিল না। অনেক চিকিৎসককে দেখিয়েছেন। শেষমেশ অন্তঃসত্ত্বা হন বেবি। বৃহস্পতিবার তাঁকে নিয়ে মুরারইয়ের নন্দীগ্রামে দিদির বাড়ি যান আজিজুল। শনিবার দুপুরে মুরারই থেকে রামপুরহাট-শিয়ালদহ প্যাসেঞ্জার ধরেন। আজিজুল জানান, ট্রেন তারাপীঠ রোড স্টেশন ছাড়ার পরেই স্ত্রীর প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। ট্রেন সাঁইথিয়া ঢোকার আগেই পুত্রসন্তানের জন্ম দেন বেবি।

Advertisement

এরই মধ্যে এক সহযাত্রী মোবাইলে যোগাযোগ করে ফেলেন আরপিএফের সঙ্গে। সাঁইথিয়া স্টেশনে নির্দিষ্ট কামরার সামনে অপেক্ষায় ছিলেন আরপিএফের ইনস্পেক্টর সঞ্জীব কুমার। তাঁরা নবজাতক ও মহিলাকে সাঁইথিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করান। রবিবার হাসপাতালে বসে আজিজুল বলেন, ‘‘এমনটা হবে, আঁচ করতে পারিনি। সহযাত্রীরা পাশে না দাঁড়ালে কী যে হতো!’’ তাঁর আফশোস, স্ত্রীকে হাসপাতালে পৌঁছনোর তাড়ায় দুই মহিলা-সহ ওই যাত্রীদের কারও নাম-ঠিকানা নিয়ে রাখতে পারেননি। বেবি ধন্যবাদ দিতে ভোলেননি আরপিএফ জওয়ানদেরও। আরপিএফের ইনস্পেক্টর সঞ্জীব কুমার বললেন, ‘‘সবার বিপদে পাশে দাঁড়ানোই তো আমাদের কাজ।’’

সাঁইথিয়ার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস চন্দ্র এ দিন বলেন, ‘‘মা ও শিশু সুস্থ। তবে শিশুটির ওজন কিছুটা কম হওয়ায় ওদের ছাড়া হয়নি।’’ আজ, সোমবার ছেলেকে নিয়ে বেবি বাড়ি ফিরতে পারেন বলে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement