—প্রতীকী ছবি।
শ্বশুরবাড়িতে তরুণীকে কেউ ভালবাসেন না, অথচ বাড়ির তিন বছরের শিশুকন্যা সকলের ভালবাসার পাত্রী— এই হতাশা থেকে শিশুটিকে কীটনাশক মেশানো দুধ খাইয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল এক তরুণীর বিরুদ্ধে। উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া থানা এলাকায়। শনিবার সকালে অভিযুক্ত তরুণীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত সাথী সর্দার নামে আঠারো বছরের ওই তরুণীকে বারাসত জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। শিশুটির দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাবড়ার পৃথিবা পঞ্চায়েতের বয়রাগাছির বাসিন্দা রঞ্জিত সর্দারের সঙ্গে আট মাস আগে বিয়ে হয়েছিল সাথীর। রঞ্জিতের মামা গণেশ সর্দার দম্পতির প্রতিবেশী। সকলেই খেত মজুরের কাজ করেন। গণেশ পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। বছর তিনেকের মেয়েটি যখন জন্মায়, তার পনেরো দিন পরেই তার মা সন্ধ্যা মারা যান। মা-হারা সদ্যোজাতকে পালন করার দায়িত্ব নেন রঞ্জিত, তাঁর বাবা গোপাল ও মা শুভাষি। মেয়েটি রঞ্জিতদের বাড়িতেই থাকত।
বৃহস্পতিবার সকালে মেয়েটিকে চা-বিস্কুট খেতে দিয়ে রঞ্জিত ও তাঁর বাবা-মা খেতের কাজে যান। অভিযোগ, কিছু ক্ষণ পরে সাথী খেতে গিয়ে রঞ্জিতদের জানান, শিশুকন্যাটি চা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মুখ দিয়ে ফেনা বার হচ্ছে। সকলে দ্রুত বাড়ি ফিরে শিশুকন্যাটিকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এর পরে পরিবার ও পড়শিরা সাথীর কাছে জানতে চান, ঠিক কী হয়েছিল। পরিবারের দাবি, এর পরে শুক্রবার স্থানীয় এক যুবক গুণিনের নাম করে চাল এনে সকলকে খেতে বলেন। সেই সময়ে সাথী চাল খেতে রাজি হন না। তাতেই সকলের সন্দেহ হয়। পরিবার সূত্রে বলা হচ্ছে, শেষে সকলের প্রশ্নের মুখে ভেঙে সাথী কবুল করেন, তিনি দুধে বক মারার বিষ মিশিয়েছিলেন। পরে পুলিশের কাছেও সাথী একই বয়ান দিয়েছেন। পরে রঞ্জিত বলেন, “দু’জনকেই আমরা বাড়ির সকলে ভালবাসতাম। কিন্তু সাথী যে নৃশংস কাজ করেছে, তার কোনও ক্ষমা হয় না।”
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়ের ভালবাসা, আদর-যত্ন থেকে বঞ্চিত ছিলেন সাথী। দিদিমার কাছে বড় হন তিনি।
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী বলেন, “মনোবিজ্ঞানীদের মতে, শৈশব ও বয়ঃসন্ধির কয়েকটি বছরের অভিজ্ঞতা
ও নানা অনুভূতি এক জন মানুষ তাঁর সারা জীবন ধরে বয়ে চলেন। কখনও শৈশব বা কৈশোরের কোনও না-পাওয়ার যন্ত্রণা, ক্ষোভ, অভিমান প্রাপ্তবয়সে সম্পূর্ণ অন্য কোনও পরিস্থিতিতে ভয়ানক রূপ নিয়ে প্রকাশ পায়। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত শিশুটির সুন্দর শৈশব অভিযুক্তকে হয়তো তাঁর শৈশবে না-পাওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। সে কারণে তাঁর ভয়ানক প্রবৃত্তি সামনে এসেছে।”