পূর্ণিমা দেবনাথ। —ফাইল চিত্র।
এত লোকের শ্বশুর টাকা দেয়, তার শ্বশুরই বা দেবেন না কেন? এই যুক্তিতে তরুণী স্ত্রীকে মারধর করত স্বামী। বাবা-মায়ের নামে কটূক্তি করত। বলত, ‘‘তোর বাবা কি ভিখারি? টাকা দিতে পারবে না?’’
অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে চলা এই অত্যাচার এক সময়ে আর সহ্য করতে পারেননি পূর্ণিমা দেবনাথ (২৪)। শনিবার রাতে স্বামীর সামনেই গায়ে আগুন দেন। বুধবার সকালে কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে মারা গিয়েছেন তিনি।
হাবড়া থানার মছলন্দপুর এলাকার উত্তর বেতপুলে শ্বশুরবাড়ি পূর্ণিমার। তাঁর বাবা মিলন দেবনাথের অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকালে স্বামী অমিত ও শাশুড়ি লিলিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আগুনে বাঁ হাতের কিছুটা অংশ ঝলসে গিয়েছে অমিতেরও।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাড়ে তিন বছর আগে বাদুড়িয়ার ঘোষপুর এলাকার বাসিন্দা পূর্ণিমার সঙ্গে বিয়ে হয় মছলন্দপুরের অমিতের। অমিত গেঞ্জি কারখানায় কাজ করে। বাপের বাড়ির লোকজন জানিয়েছেন, বিয়েতে নগদ টাকা না দিলেও সোনার গয়না, আসবাবপত্র দেওয়া হয়েছিল। বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই টাকার দাবিতে পূর্ণিমার উপরে শুরু হয় শারীরিক-মানসিক নির্যাতন।
মিলন বলেন, ‘‘টাকা দিতে না পারায় মেয়েকে ওরা প্রচণ্ড মারধর করত। কয়েকবার তাড়িয়েও দিয়েছিল। আমি ভ্যান চালাই। টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ্য কোথায়!’’
পরিবারের তরফে প্রতিবেশীদের ডেকে বার কয়েক সালিশি হয়। কিছু দিন সব ঠিকঠাক চলত। অভিযোগ, ফের শুরু হত অত্যাচার। কিছু দিন আগেও পূর্ণিমা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে তাঁর বাপের বাড়ির লোকজন পুলিশকে জানিয়েছে। হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল। সে যাত্রায় বেঁচে যান পূর্ণিমা। কিন্তু এ বার শেষরক্ষা হল না।
তরুণীর পরিবারের দাবি, অমিতের সঙ্গে এক মহিলার সম্পর্ক ছিল। তা নিয়েও কয়েক মাস আগে তুমুল অশান্তি হয়। সম্প্রতি অমিত বাড়িতে মদ-গাঁজা খেয়ে ফিরত। স্ত্রী প্রতিবাদ করলে চলত মারধর। শাশুড়িও তাতে মদত দিত বলে অভিযোগ।
মিলন বলেন, ‘‘টাকা আনার জন্য মেয়েকে চাপ দিত অমিত। মেয়েকে বলত, তোর বাবা তো ভিখারি। অন্যের শ্বশুররা টাকা দেয়, তোর বাবা কেন দেবে না?’’