Murder

‘আর কেউ ওর কিছু করতে পারবে না’! বিপদ থেকে ‘বাঁচাতে’ মেয়েকে ‘খুন’ মায়ের

দীর্ঘ সময় রাজন্যার মায়ের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিষয়ে জানার চেষ্টা করেন তদন্তকারীরা। রাতে মাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, শেষ রাতে ঘুমন্ত কন্যাকে গলা টিপে মেরে ফেলেছেন মা।

Advertisement

বিতান ভট্টাচার্য

ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০৯
Share:

—প্রতীকী ছবি।

ঘরের মধ্যে পায়চারি করছেন মা। বিছানায় শোওয়ানো মেয়ে। দেখে মনে হবে ঘুমোচ্ছে। বাবা গিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বুঝতে পারেন, অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে তার। মেয়ের দিকে তাকিয়ে মা বলেন, ‘‘বড় হচ্ছে। ওর উপরে অন্যেরা অত্যাচার করবে, এটা হতে পারে না। আর কেউ ওর কিছু করতে পারবে না।’’ যা শুনে হতবাক তদন্তকারীরাও। ব্যারাকপুরের নগরপাল অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘আমরা সংবেদনশীলতার সঙ্গেই তদন্ত করছি। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলব। ময়না তদন্ত করা হচ্ছে।’’

Advertisement

ব্যারাকপুর আনন্দপুরীর ডি রোডের বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ ঘোষ এবং তাঁর স্ত্রী। পুলিশ সূত্রের খবর, স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসা চলছে। দম্পতির একমাত্র মেয়ে রাজন্যা ঘোষ (১১) শহরেরই একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া। মেয়েকে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ঘুমোতে যান মা। শুক্রবার দুপুর গড়িয়ে গেলেও দরজা খোলেননি। ডেকেও সাড়া পাননি ইন্দ্রজিৎ। প্রতিবেশীরাও বিস্তর চেষ্টা করে দরজা খোলাতে না পেরে পুলিশ ডাকেন। টিটাগড় থানার পুলিশ একতলার দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে। তত ক্ষণে সব শেষ।

দীর্ঘ সময় রাজন্যার মায়ের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিষয়ে জানার চেষ্টা করেন তদন্তকারীরা। রাতে মাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, শেষ রাতে ঘুমন্ত কন্যাকে গলা টিপে মেরে ফেলেছেন মা। ইন্দ্রজিৎ জানান, বছর কয়েক আগে শ্যামনগরের গাঙ্গুলিপাড়ার বাড়ি ছেড়ে আনন্দপুরীতে এসেছিলেন তাঁরা। স্ত্রী অস্বাভাবিক আচরণ করলেও মেয়েকে আগলে রাখতেন। মেয়ের সামান্য শরীর খারাপ করলেও ব্যাকুল হয়ে উঠতেন। ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘‘বিশ্বাস করতে পারছি না, এমন কী করে সম্ভব?’’ প্রতিবেশীরা জানান, টিভিতে নিয়মিত আর জি কর কাণ্ডের খবর দেখতেন রাজন্যার মা।

Advertisement

মনোবিদ কৌস্তভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই ধরনের রোগীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা কাজ করে প্রতিনিয়ত। নিজের যা কিছু, তা হারানোর ভয় তাড়িয়ে বেড়ায়। সুস্থ মানুষকেও ভাবাচ্ছে, দ্রুত বদলে যাওয়া সমাজের ঘটনাগুলো। সেখানে স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর মধ্যে এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। দেখতে হবে অভিযুক্ত নিয়মিত ওষুধ খেতেন কি না। তাঁর সাইকোলজিক্যাল অটোপ্সি করা দরকার। তবেই কী ঘটেছিল জানা যেতে পারে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement