লোকসানের সঙ্গে আর আপস নয়। তাই যে-সব স্টেশনে তেমন যাত্রী ওঠানামা করেন না, সেখানে আর ট্রেন থামাতে রাজি নয় রেল মন্ত্রক।
যে-সব রুটে ট্রেন চালিয়ে লোকসানের বহর বাড়ছে, সেখানে ট্রেন বন্ধ করে দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে রেল। এ বার তাদের লক্ষ্য অলাভজনক স্টেশন।
অলাভজনক স্টেশন কাদের বলা হবে? সংজ্ঞা কী?
রেল মন্ত্রকের নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী যে-সব স্টেশনে কোনও একটি ট্রেনের সংরক্ষিত শ্রেণিতে ৫০০ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য অন্তত ৪০টি টিকিট বা তার সমমূল্যের অন্য কোনও টিকিট বিক্রি হয় না, সেগুলিই অলাভজনক। মেল এবং এক্সপ্রেস ট্রেনের ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে ওই সব স্টেশনে ট্রেন থামানো বন্ধ করে দিতে চায় রেল।
রেল বোর্ড সম্প্রতি সব ‘জোন’ বা আঞ্চলিক দফতরকে দূরপাল্লার মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেনের ক্ষেত্রে এই ধরনের অলাভজনক স্টেশন চিহ্নিত করতে বলেছে। রেলের একাধিক আঞ্চলিক দফতর ইতিমধ্যে সেই নির্দেশ রূপায়ণের কাজ শুরু করেছে বলে রেলের খবর। এ রাজ্যেও পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-সীমান্ত রেলের অনেক ছোট এবং মাঝারি স্টেশন ওই তালিকায় আসতে পারে।
সেই সঙ্গে রাতে বা খুব ভোরের দিকে দূরপাল্লার ট্রেনকে আর নতুন কোনও স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ানোর অনুমতি দিতে চান না রেল-কর্তৃপক্ষ। যে-সব শাখায় ট্রেনকে জায়গা দেওয়ার ক্ষমতা ৯০ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে, সেখানেও অতিরিক্ত স্টেশনে দাঁড়ানোর অনুমতি দেওয়া হবে না।
রেলকর্তাদের বক্তব্য, সারা দেশে বিভিন্ন সময়ে নেতা, মন্ত্রীদের আবদার মেটাতে গিয়ে বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেনকে এমন সব স্টেশনে দাঁড় করানোর ব্যবস্থা হয়েছে, যেখানে তেমন যাত্রী নামাওঠা করে না, পর্যাপ্ত টিকিট বিক্রি হয় না। ওই সব স্টেশনে অযথা ট্রেন থামাতে গিয়ে রেলের খরচ যেমন বাড়ে, একই ভাবে ট্রেনের গতিও ধাক্কা খায়।
ট্রেনের গতি বাড়িয়ে যাত্রার সময় কী ভাবে কমানো যায়, সেই পথ খোঁজার জন্য সম্প্রতি একটি বিশেষ কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। সেই কমিটি তাদের রিপোর্টে অলাভজনক স্টেশনে ট্রেন না-থামানোর সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে কমিটি দেখেছে, বিভিন্ন স্টেশনে অনাবশ্যক বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকে ট্রেন। সেই সময়টাও কমানোর সুপারিশ করেছে কমিটি।
রেল বোর্ড সূত্রের খবর, কোনও স্টেশনে মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেন থামাতে গড়ে ১৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। জ্বালানি, বিভিন্ন পরিকাঠামো, সিগন্যালিং-সহ নানা খরচ ধরা থাকে তাতে।
অলাভজনক রুট নিয়ে বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন নির্দেশিকা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন এ রাজ্যে রেলকর্তারা। তবে এক কর্তা বলেন, “কোনও একটি নির্দিষ্ট স্টেশনে স্টপ দেওয়ার সঙ্গে এলাকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিকাশের সম্পর্ক রয়েছে। তাই পুরো বিষয়টিকে বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা ঠিক নয়।”