—প্রতীকী ছবি।
চায়ের সুরভি, রং, তেজ নিয়ে খুঁতখুঁতে বাঙালির জন্য খবরটা দুশ্চিন্তার। সস্তার গুঁড়ো চায়ের জন্য চাতক সীমিতসাধ্য মধ্যবিত্তের জন্য আতঙ্কও কম নয়। কারণ, সাধের মনপসন্দ চায়ের আড়ালেই লুকিয়ে থাকতে পারে গোলমেলে রাসায়নিক।
খোদ মন্ত্রীর নির্দেশ এবং কেন্দ্রের গেজ়েট বিজ্ঞপ্তি অগ্রাহ্য করে চায়ের নিলাম বন্ধ থাকায়, চা-পাতার গুণমান জরিপ ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়ছে বলে চা-মহলে আক্ষেপ শোনা যাচ্ছে। কারণ নিলাম হলে গুণমান যাচাই বাধ্যতামূলক। ফলে গুণমান পরীক্ষা ছাড়াই গুঁড়ো চা ঢুকে যাচ্ছে ঘরে ঘরে। কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘নিলাম না হওয়ায় এ দেশের একাধিক বড় সংস্থা তুলনায় কম দাম দিয়ে ব্যবসায়ীদের থেকে সরাসরি গুঁড়ো চা কিনে প্যাকেটজাত করছে। দেশের এমন দু’টি বেসরকারি সংস্থাই মোট চায়ের ৩৫ শতাংশ কিনে নেয়। যার গুণমান যাচাই হচ্ছে না। সেটাই ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে।’’
সুরক্ষাবিধির নজর এড়িয়ে বিপজ্জনক রাসায়নিক যুক্ত চা ঘরে ঢুকতে থাকলে ক্যানসারও থাবা বসাতে পারে বলে আশঙ্কা। অথচ কেন্দ্র সুস্পষ্ট নির্দেশ এবং সময়সীমা বেঁধে দিলেও চায়ের নিলাম শুরু করা যাচ্ছে না কিছুতেই। কেন্দ্রের প্রশাসনিক মহল থেকেই অভিযোগ উঠছে, অসম এবং এ রাজ্যের উত্তরবঙ্গের চা প্রস্তুতকারী কিছু সংস্থা এবং কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট উচ্চ পদস্থ কর্তাদের একাংশের যোগসাজশেই এ পদ্ধতি কার্যকর করা যাচ্ছে না। মন্ত্রকের কর্তারা অবশ্য এখনই এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
গত জানুয়ারিতে রাজ্যে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গয়াল। চা শিল্পের উৎপাদক, প্রস্তুতকারী-সহ সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি গেজ়েট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক জানায়,পশ্চিমবঙ্গ, অসম, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, হিমাচল প্রদেশ, মেঘালয়, মিজ়োরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, ত্রিপুরা এবং উত্তরাখন্ডে প্রস্তুত গুঁড়ো চা ১০০ শতাংশ নিলামের মধ্যে দিয়েই বাজারজাত করতে হবে। ১ এপ্রিল থেকে যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
মোটামুটি পাঁচটি স্তরের চা পাওয়া যায় বাজারে। যেমন সর্বোচ্চ মানের ‘ফাইন লিফ’ প্রধানত রফতানি করা হয়। এ ছাড়া, রয়েছে ‘ফ্যানিংস’, ‘মিক্সড’, ‘সিটিসি’ এবং ‘ডাস্ট’। ঈষৎ কুলীন চা বেছে ঘরে আনেন চা-রসিক গৃহস্থ। সিটিসি এবং ডাস্ট মাঝারি বা অতি সাধারণ চায়ের দোকানেও মেলে। এক চা-কর্তার কথায়, ‘‘একেবারে গুঁড়ো চা নিলামে গেলে খাদ্য গুণমান নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দিয়ে মান যাচাই করাতেই হত। তাতে কোনও কীটনাশক বা ক্ষতিকর রাসায়নিকের হদিস মিললে বাকি উচ্চ স্তরের চায়েও কী দোষ রয়েছে বোঝা যেত। জনস্বার্থে এটা খুবই জরুরি ছিল। প্রাথমিক ভাবে তিন মাসের জন্য এই পদ্ধতি চালু হওয়ার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু এখনও তা হয়নি।’’
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, চা চাষে ‘মনোক্রটোফস’, ‘ডিডিটি’-র মতো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এ সব শরীরে ঢুকলে ক্যানসারের সম্ভাবনা প্রবল। ফলে গুঁড়ো চায়ে এমন উপাদান রয়েছে কি না, তা জানা খুব জরুরি। কারণ, ওই চা-ই খেয়ে থাকেন বেশির ভাগ মানুষ। আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, গুণমান যাচাই না হওয়ায় বিদেশে চায়ের রফতানিও ক্রমশ ধাক্কা খাচ্ছে।
চা-কর্তাদের একাংশ এ-ও বলছেন, ‘‘কোনও চায়ের নমুনায় এমন ক্ষতিকর রায়াসনিকের উপস্থিতি মিললে টি-বোর্ডই সেই চায়ের মজুত নষ্ট করে দিতে পারে। চা প্রস্তুতকারী বা উৎপাদকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে পারে।’’
আপাতত অবশ্য তেমন কোনও পদক্ষেপের নামগন্ধ নেই। খাঁটি চায়ের আকুতি নিয়ে ‘চায়ে পে চর্চা’টুকুই যা সম্বল।