প্রতীকী ছবি।
এক দশক আগে, ২০১১-তে রাজ্যে পরিবর্তন-ঝড়ের ঝাপটা লেগেছিল চিকিৎসক মহলেও। বাম মনোভাবাপন্ন বহু চিকিৎসক যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক দলবদলের অস্থিরতার সেই ছোঁয়া এ বার চিকিৎসক মহলেও লেগেছে কি না, তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
রাজ্যে চিকিৎসকদের বড় সংগঠন বলে পরিচিত ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। অরাজনৈতিক সেই সংগঠনের রাজ্য শাখার নির্বাচন চলছে এই মুহূর্তে। চিকিৎসকদের তিনটি প্যানেল তাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। কোনওটিতেই কোনও রাজনৈতিক দলের নামোল্লেখ নেই। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, পরোক্ষ হলেও যে কোনও নির্বাচন অথবা প্রার্থীর নেপথ্যে কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের প্রভাব থেকেই যায়। চিকিৎসক সংগঠনটির নির্বাচনও তার ব্যতিক্রম নয়। যেমন, এ বার আইএমএ-র রাজ্য সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন। তাঁর বিপক্ষে ‘সেভ আইএমএ’ প্যানেলে রাজ্য সম্পাদক পদে লড়ছেন বিজেপির রাজ্য মেডিক্যাল সেলের সিনিয়র এগজিকিউটিভ চিকিৎসক সোমনাথ সরকার। সেই প্যানেলকে আবার সমর্থন করছেন বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আর এক চিকিৎসক রামদয়াল দুবে।
তৃণমূল ঘনিষ্ঠ চিকিৎসকদের বিজেপির দিকে ঝোঁকার প্রবণতা তৈরি হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও উস্কে দিয়েছে আইএমএ-র রাজ্য শাখার এই নির্বাচন। কারণ দেখা যাচ্ছে, ‘সেভ আইএমএ’ প্যানেলে সোমনাথবাবুর পাশাপাশি ২০২০-’২১ এর সহ- সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন চিকিৎসক প্রদীপকুমার নিমানি এবং ২০২১-’২২ এর সহ-সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন অসীমকুমার সরকার। তাঁরা রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী নির্মল মাজির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। দু’জনে মেডিক্যাল কাউন্সিলের গুরুত্বপূর্ণ পদেও আসীন। আবার অভিযোগ উঠেছে, শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত অনেক চিকিৎসকও ওঁদের হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।
প্রশ্নটা সেখানেই। তা হলে কি তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ওই দুই চিকিৎসক এবং অন্যেরা বিজেপির দিকে ঝুঁকছেন? নির্মলের কথায়, ‘‘ওঁরা আমার অনুমতি নিয়ে প্রার্থী হননি। নিজেদের ইচ্ছায় লড়ছেন। তবে আইএমএ-র নির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক প্যানেল নেই। আমিও সভাপতির পদে মনোনয়ন দিয়েছিলাম। কিছু স্বার্থান্বেষীর জন্য তা বাতিল হয়েছে।’’ চিকিৎসক সংগঠনের এই নির্বাচনে ঘোষিত রাজনীতির বিষয় না থাকলেও, প্রার্থী এবং তাঁর নেপথ্যের পরিচয় থেকেই স্পষ্ট তাঁদের রাজনৈতিক মনোভাব। এই পরিপ্রেক্ষিতে যে প্রশ্নটা বড় হয়ে উঠছে তা হল, রামদয়াল দুবে বা সোমনাথবাবু যে প্যানেলের সঙ্গে যুক্ত, রাজ্যের এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হওয়ার পরেও সেখানেই অসীমবাবু ও প্রদীপবাবুর প্রার্থী হওয়া কি অন্য ইঙ্গিত বহন করছে?
পদ্ম শিবিরের চিকিৎসক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সোমনাথবাবুর কথায়, ‘‘আইএমএ অরাজনৈতিক হলেও, তৃণমূলের অতি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত দুই চিকিৎসকের আমাদের প্যানেলে এসে দাঁড়ানো বড় ইঙ্গিত তো বটেই। বহু চিকিৎসকই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তবে এখনই সব প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না।’’ তাঁদের প্রার্থী হওয়ার নেপথ্যে রাজনীতি নেই দাবি করে অসীমবাবু বলেন, ‘‘দলমত নির্বিশেষে আমরা শান্তনু সেনের বিরুদ্ধে লড়ছি। দীর্ঘ বছর পদ আঁকড়ে থেকে উনি সংগঠনকে শ্মশানে পরিণত করেছেন। স্বেচ্ছাচারিতা চলছে।’’ আবার প্রদীপবাবুর কথায়, ‘‘আইএমএ এখন রাজনীতি কেন্দ্রিক। অন্য রাজ্যে যে ভাবে সংগঠন বিস্তার লাভ করেছে, এখানে তার কিছুই হয়নি। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সংগঠন চলুক। আর চিকিৎসক দুবের মতো সংগঠন বোঝেন, এমন মানুষ কম আছেন।’’
নির্মলের মতোই মনোনয়ন বাতিল নিয়ে সরব হয়েছেন সোমনাথবাবু, রামদয়ালেরা। তাঁদের দাবি, স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে মনোনয়নগুলি বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। যদিও আইএমএ-র নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান, চিকিৎসক অশোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিয়ম না মেনে জমা দেওয়ার জন্য নির্মলবাবুর মতো অনেকেরই মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। তাঁদের মধ্যে শাসক দলপন্থী কয়েক জন চিকিৎসকও আছেন।’’ অন্য দিকে শান্তনু বলছেন, ‘‘আইএমএ অরাজনৈতিক একটি সংগঠন। কিন্তু এনডিএ প্যানেল বলে বিজেপি-সমর্থিত প্রার্থীরা যে প্রচার চালাচ্ছেন, সেটাও কাম্য নয়।’’ মেডিক্যাল কাউন্সিলের পদে থাকা দুই চিকিৎসকের বিষয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কারও বোধহয় দু’নৌকায় পা দিয়ে চলাটা উচিত নয়।’’