নেত্রী: শিলিগুড়িতে পুলিশের বিজয়া সম্মিলনীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
কলকাতায় গত কয়েক বছর ধরে পুজো উদ্বোধনে এক নম্বর চাহিদা কার? এত সহজ প্রশ্নের জবাবে কোনও পুরস্কার নেই। উত্তর: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বারেও তিনি টালা থেকে টালিগঞ্জ, অজস্র পুজোর উদ্বোধন করেছেন। সেই তিনি এ বার জানালেন, আগামী বছর যদি পুজো উদ্বোধনে ডাকা হয় তাঁকে, তিনি অবশ্যই শিলিগুড়ি আসবেন।
সোমবার শিলিগুড়ি পুলিশের ব্যবস্থাপনায় বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন মমতা। মঞ্চ থেকে তিনি এক দিকে যেমন এনআরসি নিয়ে আশ্বাস বাণী দিলেন সকলকে, তেমনই অন্য দিকে বার্তা দিলেন শিলিগুড়িবাসীদেরও। বোঝাতে চাইলেন, যত দূরেই থাকুন না কেন, তাঁর মন শিলিগুড়িতে পড়ে থাকে।
এই কথা বোঝাতে গিয়ে মমতা উত্তরে করা কাজের ফিরিস্তি দেন। সেই তালিকায় বাগডোগরা বিমানবন্দরের জন্য জমি থেকে শুরু করে শিলিগুড়ির যানজট, সবই রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরে অনেক কাজ হয়েছে। আলিপুরদুয়ার, কালিম্পং জেলা হয়েছে। উত্তরকন্যা ও কন্যাশ্রী হয়েছে। ভোরের আলোর মতো প্রকল্প হয়েছে। ৩-৪ মাসের মধ্যে ওই এলাকায় উড়ালপুলের কাজও শেষ হলে কত সহজে সেখানে যাওয়া সম্ভব হবে। বেঙ্গল সাফারি করে দেওয়া হয়েছে।’’
এ দিনের বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে স্থানীয় শিল্পীদের প্রশংসাও করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘পুজোর আমি সব জায়গায় যেতে পারি না। রাত জেগে কোটি কোটি লোককে পাহারা দিই। কত মানুষ তখন রাস্তায় থাকেন। তাই পুজোয় আসা হয় না। তবে আমি শিলিগুড়ি বা এই অঞ্চলে কী পুজো হচ্ছে, সব খেয়াল রাখি। এমনকি আবাসনের পুজোও। পুজোর পর বর্ষা থাকায় জল জমেছিল, নিয়মিত খোঁজ রেখেছি। প্রশাসনের অসুবিধা হবে বলে আসিনি।’’ এই অনুষ্ঠানেই তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়, পুজোয় উত্তরবঙ্গে আসার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আগামী বার মহালয়ার ৩৫ দিন পর পুজো। আপনারা ডাকলে অবশ্যই আসব। পুজো দেখব, পুজোর উদ্বোধনও করব।’’ তিনি বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ সব পেয়েছে। উত্তরবঙ্গের উত্তর একটাই, এগিয়ে যান, জোট বাঁধুন, মনে বিশ্বাস রেখে নিজের পায়ে দাঁড়ান। আমরা আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে ছিলাম, আছি, থাকব।’’
আগামী বছর শিলিগুড়িতে দু’টি ভোট হওয়ার কথা। শিলিগুড়ি পুরসভা এবং শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ। গতবার ভোটে দু’টিই বামেদের দখলে গিয়েছে। বারবার চেষ্টা করেও তৃণমূল এই দু’টি ক্ষেত্রে ক্ষমতা থেকে দূরেই রয়েছে বরাবর। বস্তুত, ২০১১ সালে বিধানসভা ভোট বাদে কখনওই এই এলাকায় ক্ষমতার ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি তৃণমূল। রাজনৈতিক নেতারা অনেকেই বলছেন, আগামী বছর দুই ভোটেই যে ক্ষমতা দখলে ঝাঁপাবে শাসকদল, সেটা মমতার এ দিনের বার্তায় পরিষ্কার।
যা শুনে শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘পুলিশ দিয়ে লোক ধরে এনে এ দিন শহরে বিজয়া সম্মিলনী করা হল। মুখে নানা কথা বলে লাভ নেই। শিলিগুড়িতে ওরা আবারও হারবে। গতবারের থেকেও বাজে ফল করবে। মুখ্যমন্ত্রী কিছুই করতে পারবেন না।’’