Humayun kabir

Humayun Kabir: হেনস্থার অভিযোগ প্রত্যাহার করতে আদিবাসী তরুণীর ওপর ‘চাপ’ মন্ত্রী-পত্নীর

তিনি ও তাঁর পরিবার যথেষ্ট আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানিয়ে ৭ মে রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার দীনেশ কুমারের কাছে ই-মেলে অভিযোগ করেছেন সবিতা।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবমাল্য বাগচী

কলকাতা, ডেবরা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২২ ০৪:৫৫
Share:

হুমায়ুন কবীর।

মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন তিনি। সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করতে এ বার ডেবরার আদিবাসী তরুণীর উপর চাপ সৃষ্টি ও তাঁকে হেনস্থার অভিযোগ উঠল মন্ত্রী-পত্নীর বিরুদ্ধে। ঘটনায় স্থানীয় একাধিক তৃণমূল নেতা, এমনকি পুলিশও জড়িত বলে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে অভিযোগ জানিয়েছেন সবিতা লায়েক নামে ওই তরুণী। হুমায়ুন অবশ্য এ বারও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

Advertisement

রাজ্যের কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী, প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন দফতরে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁকে নিজের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করিয়েছেন এবং জাত তুলে অপমান করেছেন বলে পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ডেবরার ব্রাহ্মণশ্মশান গ্রামের আদিবাসী তরুণী সবিতা। সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করতেই হুমায়ুনের স্ত্রী অনিন্দিতা দাস কবীর ও স্থানীয় কিছু তৃণমূল নেতা তাঁকে ভয় দেখাচ্ছেন এবং ছাপানো বয়ানে তাঁকে জোর করে সই করানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ সবিতার। ওই বয়ানে লেখা রয়েছে, হুমায়ুনের বিরুদ্ধে তিনি যা অভিযোগ এনেছিলেন সে সব মিথ্যা।

সবিতা শেষ পর্যন্ত সই করেননি। কিন্তু তিনি ও তাঁর পরিবার যথেষ্ট আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানিয়ে ৭ মে রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার দীনেশ কুমারের কাছে ই-মেলে অভিযোগ করেছেন সবিতা। নিরাপত্তাও চেয়েছেন। ওই অভিযোগে সবিতার দাবি, চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়ার কথা বলে ৬ মে সকালে তাঁর বাড়িতে পুলিশ আসে। পুলিশের গাড়িতেই তাঁদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে এক তৃণমূল নেতার গাড়িতে তাঁকে ও তাঁর অভিভাবকদের নিয়ে যাওয়া হয় কোলাঘাটের হোটেলে। সঙ্গে কয়েক জন নেতা ও সাধারণ পোশাকে এক পুলিশকর্মীও গিয়েছিলেন। সবিতা বলেন, ‘‘ওখানেই হুমায়ুন কবীরের স্ত্রী ও দলীয় নেতা অলোক আচার্য, প্রদীপ কর, আবু বক্স, শীর্ষেন্দু অধিকারী মিথ্যা ছাপানো বয়ানে আমাকে সই করার জন্য চাপ দেন। আমি সই না করায় আমাদের খুবই হেনস্থা করেন। কোনওক্রমে ডেবরায় ফিরি। এখনও বাড়ি এসে নেতারা চাপ দিচ্ছেন। লকআপে ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’ পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘অভিযোগ তুলতে পুলিশ কখনওই চাপ দিতে পারে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

Advertisement

গত ৬ মে কোলাঘাটের এক হোটেলে সবিতার সঙ্গে তাঁর স্ত্রী অনিন্দিতার দেখা হয়েছিল বলে মানছেন হুমায়ুন। তবে তাঁর দাবি, ‘‘সবিতা চার বার চার রকম অভিযোগ করেছে। আমার কাছে যা কাগজপত্র রয়েছে তাতে এক মিনিট লাগবে প্রমাণ করতে যে এই সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’

কিন্তু মন্ত্রী-পত্নী কেন হঠাৎ সবিতাদের সঙ্গে কোলাঘাটে দেখা করতে গেলেন?

এ বার মন্ত্রীর জবাব, ‘‘কলকাতায় আসার পথে কোলাঘাটে সবিতারা খেতে চেয়েছিল। কে খাওয়াবে ওদের? তাই সঙ্গে যাঁরা ছিলেন তাঁরা আমার মিসেসকে ফোন করেন। ও তখন ডানকুনি না ও রকম কোনও জায়গায় ছিল। বর্ধমান থেকে ফিরছিল বা এই রকম কিছু একটা হবে। তখন ও কোলাঘাটে গিয়ে ওদের খাইয়েছিল।’’ কিন্তু কেন সবিতাদের খাওয়াতে মন্ত্রী-পত্নীকেই ডাকা হল, তার সদুত্তর দিতে পারেননি হুমায়ুন।

হুমায়ুনের আরও বলেন, ‘‘পার্টির কয়েক জন আমাকে জানায় যে, সবিতা এখন চাকরি করতে চাইছে। চাকরি দিলে ও মিথ্যা অভিযোগগুলি তুলে নেবে। আসলে ওকে ভুল বুঝিয়ে অভিযোগগুলি করানো হয়েছে। তাই আমি বললাম, সিমপ্যাথেটিক গ্রাউন্ডে ওর চাকরি করে দিচ্ছি। কিন্তু আগের কাজটাই করতে হবে আমার বাড়ির অফিসে, দফতরের অ্যাটেন্ডেন্টের।’’ মন্ত্রীর দাবি, ‘‘ওকে সে দিন কারিগরি ভবনে চাকরি দিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। জোর করে কোনও বয়ানে সই করানোর চেষ্টা বা হুমকি দেওয়ার কোনও ঘটনাই ঘটেনি।’’

সবিতার অভিযোগপত্রে নাম থাকা তৃণমূল নেতা শীর্ষেন্দু অধিকারীও বলছেন, “নিয়োগপত্র দেবেন বলেই মন্ত্রী গত শুক্রবার সবিতাকে কলকাতায় ডেকেছিলেন। আমার গাড়িতেই সবিতারা যায়। ডেবরা পুলিশের নিরাপত্তায় সবিতাকে নিয়ে যাওয়া হয়। মাঝে কোলাঘাটে মন্ত্রীর স্ত্রী ওদের খাওয়াদাওয়া করান। সেখানে একবার একটি কাগজে মন্ত্রীর স্ত্রী সই করতে বলেছিলেন।” পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ অলোক আচার্যের আবার দাবি, “আমি শুক্রবার কলকাতা গিয়েছিলাম। ফেরার পথে কোলাঘাটে ওঁদের সঙ্গে দেখা হয়। আমিই সবিতাকে বলিছি, ওই বয়ানে তুমি সই করবে কি না সেটা তোমার ব্যক্তিগত বিষয়।”

এখন প্রশ্ন হল, স্থানীয় তৃণমূল নেতারা যেখানে মানছেন সবিতাকে দিয়ে সই করানোর চেষ্টা হয়েছিল, তা হলে মন্ত্রী অস্বীকার করছেন কেন? হুমায়ুনের ব্যাখ্যা, ‘‘এটা নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে পুরোদমে। দলেরই অনেকে তো বিধানসভায় আমাকে হারানোর চেষ্টা করেছিলেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement