হাসপাতাল চত্বরে এ ভাবেই পড়ে থেকে মৃত্যু হয়েছিল বৃদ্ধের। —ফাইল চিত্র।
দোষীদের শাস্তি দিলেও উনি তো আর ফিরবেন না— বলছেন সদ্য স্বামীহারা বনগাঁর মহিলা।
সোমবার তিনি বলেন, ‘‘সময় মতো অক্সিজেনটুকু পেলে উনি বেঁচে যেতেন। যাঁরা আমার স্বামীর জন্য সেটুকু করল না, তাঁদের শাস্তি দিয়ে আর কী হবে! উনি তো ফিরবেন না। তবে ওঁদের বোঝানো দরকার, আমার স্বামীর সঙ্গে যে আচরণ ওঁরা করলেন, এমন যেন আর কারও সঙ্গে না করেন।’’
মহিলা এমন কথা বললেও গোটা ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। তদন্ত কমিটি গড়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো।
এই হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে মহিলার স্বামীকে শনিবার সন্ধ্যায় রেফার করা হয়েছিল ব্যারাকপুরের কোভিড হাসপাতালে। অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার সময় কেউ এগিয়ে আসেননি। এক সময়ে হাসপাতালের পুরনো জরুরি বিভাগের সামনে পড়ে যান বৃদ্ধ। প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে সেখানে আধ ঘণ্টা পড়ে থেকে মারা যান।
সিপিএমের বনগাঁ শহর এরিয়া কমিটি এবং বনগাঁর বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন, পত্রিকা গোষ্ঠী, সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ঘটনার প্রকৃত তদন্ত চেয়ে দোষীদের শাস্তির দাবিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নতির দাবিও করা হয়েছে।
হাসপাতালে ইতিমধ্যেই কিছু রদবদল আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুপার। ৫০ শয্যার আলাদা ফিভার ওয়ার্ড করে সেখানেই জ্বরের রোগীদের ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সোমবার থেকে তা চালু হয়ে গিয়েছে। সুপার বলেন, ‘‘করোনা সন্দেহে কাউকে অন্যত্র রেফার করা হলে ফিভার ওয়ার্ড থেকেই করা হবে। এ কাজের জন্য পাঁচ জন কর্মীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা পিপিই কিট পরে রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে দেওয়ার কাজ করবেন।’’
মৃত বৃদ্ধের শরীরে করোনা উপসর্গ থাকায় তাঁর বাড়ি জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে পুরসভার পক্ষ থেকে। মৃতের স্ত্রীকে আপাতত বাড়িতে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। লোকজনের সমস্যা থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে মহিলা অনুরোধ করেছেন, তাঁরাই যেন সৎকারের ব্যবস্থা করেন। সরকারি নিয়ম মেনে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল সুপার।