অভিযুক্ত সতীশ কুমার। —নিজস্ব চিত্র।
তিনি নিজে কিছুই জানেন না। সব জানেন তাঁর স্ত্রী আর শ্বশুর। টাকা পয়সা, সম্পত্তির কোনও হিসেব নিকেশ তাঁর কাছে নেই। গরু পাচারে অভিযোগে ধৃত বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একথাই জানাচ্ছেন সিবিআইকে। আসানসোল আদালতের নির্দেশে এখন ১৪দিন হেফাজতে নিয়ে জেরা চলছে ওই বিএসএফ কর্তার। সেই জেরা পর্বেই তাঁর সম্পত্তির হদিস এবং টাকার উৎস জানতে চাইলেই তিনি শুধু স্ত্রী ও শ্বশুরের নাম নিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা।
গোয়েন্দাদের দাবি, কাগজে কলমে সতীশের সম্পত্তির অনেকটাই তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী এবং শ্বশুরের নামেই। ফলে নিজে বাঁচতে এখন ওই কর্তা তাঁদের ঘাড়েই সবটা ঠেলে দেওয়ার কৌশল নিতে পারেন। ২০১৬ সালের স্বেচ্ছা আয় ঘোষণা প্রকল্পে ওই বিএসএফ কর্তার শ্বশুর প্রায় ১৩ কোটি টাকা সম্পত্তি ঘোষণা করেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন কর্মী ২০০৬ সালে অবসর নিলেও তার ১০ বছর পর ১৩ কোটি সম্পত্তি ঘোষণা করছেন কী ভাবে- গরু পাচারের তদন্তে নেমে তা জানতে চেয়েছিল সিবিআই। যদিও সম্পত্তির উপর আয়কর দিয়ে দেওয়ার ফলে আইনত আয়কর দফতর এ নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলেনি। কিন্তু বিএসএফ কর্তার শ্বশুর বলেই সিবিআই নাড়াচাড়া করছিল। একই ভাবে গরু পাচারে অন্যতম অভিযুক্ত এনামুল হকের স্ত্রীয়ের সঙ্গে যৌথ সংস্থা খুলে কারবার চালিয়েছেন সতীশের দ্বিতীয় স্ত্রী। সল্টলেকের বাড়ি, ফ্ল্যাট, অমৃতসর, রায়পুর, দিল্লি, শিলিগুড়ির নামি-বেনামি সম্পত্তিগুলিও বিএসএফ কর্তার স্ত্রী দেখাশোনা করতেন বলে সিবিআইয়ের দাবি।
সিবিআই কর্তাদের একাংশের দাবি, সল্টলেকের বাসিন্দা ওই মহিলার সঙ্গে বিএসএফ কর্তার বিয়ের আগে তাঁদের রোজগার ও সম্পত্তির পরিমাণ খোঁজ করা হচ্ছে। সতীশের সঙ্গে বিয়ের পরেই কেন এত রোজগার বেড়ে গেল তা জানাতে বলা হবে ওই মহিলা ও তাঁর বাবাকে। এক তদন্তকারীর দাবি, ‘‘আসলে সিবিআই হেফাজতে সদ্য এসেছেন ওই বিএসএফ কর্তা। এখনও ১০-১২দিন জেরা হবে। সবই স্বীকার করবেন তিনি। উত্তর ভারতের গরু মুর্শিদাবাদ-মালদহ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়া জানাই আসল কাজ।’’ এই মামলায় অপর অভিযুক্ত এনামুল হককেও মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চায় সিবিআই। যদিও দিল্লি আদালতের নির্দেশে কলকাতায় হাজির হলেও এনামুল করোনা আক্রান্ত হওয়ার রিপোর্ট পেশ করেছেন। সেই হিসাবে তাঁকে ২১ দিনের নিভৃতবাসে রাখা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, ১৪ দিনের মধ্যে পুলিশ হেফাজত না চাইলে তা আদালত থেকে পাওয়া শক্ত। কিন্তু যেহেতু করোনা পরিস্থিতির মধ্যে তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে, সে জন্য সিবিআই এনামুলকেও হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা চালাবে।