BJP

বিধায়ক সংখ্যা ৭৫ থেকে কমে হল ৬৭, একে একে ‘নিবিছে দেউটি’! দেখেও কি হুঁশ নেই গেরুয়া শিবিরের?

২০২১ সালে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল বিজেপির। কিন্তু তার পরে ক্ষয়রোগে আক্রান্ত গেরুয়া শিবির। একে একে কমেই চলেছে দলের বিধায়ক সংখ্যা। কী ভাবছেন রাজ্য নেতৃত্ব?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:০০
Share:

শুভেন্দু অধিকারী-সুকান্ত মজুমদার। —ফাইল চিত্র।

গত বিধানসভা নির্বাচনে ৭৭ ছিল বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা। ক’দিন পরেই দিনহাটা ও শান্তিপুরে উপনির্বাচনে হার। বিধায়ক সংখ্যা হয় ৭৫। কিছু দিনের মধ্যেই মুকুল রায়কে দিয়ে শুরু হয় ‘ক্ষয়’। যার সর্বশেষ উদাহরণ বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার কোতুলপুরের বিধায়ক হরকালী প্রতিহারের তৃণমূলে যোগদান। কিছু দিন আগেই উপনির্বাচনে হারাতে হয়েছে ধূপগুড়ি আসন। যার ফলে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা কমতে কমতে দাঁড়িয়েছে ৬৭। যদিও বিধায়কদের নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলছেন, বিধায়কের সংখ্যা কমেনি। তাঁর দাবি, বিধানসভার স্পিকারের কাছে যে খাতায়কলমে হিসাব, তাতে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ৭৫-ই রয়েছে। কারণ, দল বদলালেও কেউ বিজেপির আনুষ্ঠানিক ভাবে বিধায়ক পদ ছাড়েননি। শুক্রবার তিনি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দম থাকলে কোনও বিজেপি বিধায়ককে সাংবাদিক বৈঠক করে যোগদান করিয়ে দেখান। যোগদানকারীরা বলুন, আমি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এলাম।’’

Advertisement

২০২১ সালের পর থেকেই বিজেপিতে ক্ষয়ের ধারা অব্যাহত। দুই সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় এবং অর্জুন সিংহ যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। অর্জুন খাতায়কলমে বিজেপিতে থাকলেও বাবুল এখন বিধানসভা ভোটে জিতে রাজ্যের মন্ত্রী। আসানসোল তৃণমূলের দখলে। ফলে আগামী লোকসভা নির্বাচনে আসানসোল ও ব্যারাকপুর নিয়ে তো চিন্তা রয়েছেই। সেই সঙ্গে বিষ্ণুপুর লোকসভা আসন নিয়েও চিন্তা বাড়িয়ে দিলেন বিধায়ক হরকালী। ইতিমধ্যেই এই আসনের দুই বিধায়ক তৃণমূলে গিয়েছেন।

মুকুলের পরে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায়, রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী, বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস এবং বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ। এঁরা সকলেই আগে তৃণমূলে ছিলেন। কিন্তু আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় বিজেপির ‘বিড়ম্বনা’ বেড়েছে। কারণ, সুমন আদতে বিজেপি। প্রথম থেকেই তিনি পদ্মশিবিরে। যেমনটা হরকালীও। বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারের ‘পরিচিত’ হিসাবে ২০১৮ সালে বিজেপিতে যোগ দেন হরকালী। জেলার নেতারা বলেন, বিষ্ণুপুর লোকসভা আসনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। কিন্তু সৌমিত্র খাঁ বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। তাঁকে বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয়। পরে ২০২১ সালে ওই লোকসভারই অন্তর্গত কোতুলপুর থেকে প্রার্থী করা হয়। বৃহস্পতিবার শাসকদলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের হাত থেকে তৃণমূলের উত্তরীয় গলায় পরেছেন হরকালী।

Advertisement

বিজেপির টিকিটে জিতে যাঁরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের সকলের বিরুদ্ধেই স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বিধায়ক পদ খারিজের আবেদন করেছেন শুভেন্দু। আদালতেও গিয়েছেন। এ বার হরকালীর নামও যুক্ত হতে পারে সেই তালিকায়। কিন্তু এ ভাবে কি দলের ক্ষয় রোধ করতে পারবে বিজেপি?

গেরুয়া শিবিরে কান পাতলে শোনা যায়, এখনও কয়েক জন বিধায়ক নিয়ে চিন্তার অবকাশ রয়েছে। যে কোনও দিন তাঁরা তৃণমূলে যেতে পারেন। হরকালীকে নিয়েও আগে থেকে জল্পনা ছিল। বাঁকুড়া জেলার বিজেপি নেতা সৌগত পাত্রের বক্তব্য, ‘‘হরকালী প্রতিহারকে তৃণমূল ভাঙিয়ে নিয়ে গিয়েছে, এমনটা কিন্তু নয়। বরং উনিই অনেক দিন ধরে শাসক শিবিরে যেতে চাইছিলেন। সেটা কোনও ব্যক্তিগত কারণে। ওঁকে নিয়ে দলের যে খুব লাভ হবে না, সেটা তৃণমূলের জেলা এবং রাজ্য নেতারা জানেন। কারণ, ওঁর তেমন কোনও জনপ্রিয়তাও নেই।’’

হরকালীর যোগদানকে দল গুরুত্ব দিতে চাইছে না বুঝিয়ে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘এতে দলের কিছু যাবে-আসবে না। রাজনীতিতে সকলের কাছে সব কিছু স্থায়ী হয় না। আসা-যাওয়া থাকে।’’ কিন্তু দলের সকলে এমন মনে করছেন না। সেই অংশের বক্তব্য, একের পর এক বিধায়ক চলে যাওয়া মানে কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাওয়া। এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘এঁদের জেতাতে অনেক কর্মী পরিশ্রম করেছেন। তৃণমূলের কাছে মার খেয়েছেন, ঘরছাড়া হয়েছেন। এখন সেই বিধায়কেরা তৃণমূলে গেলে আর নেতৃত্ব চুপ থাকলে কর্মীদের মানসিক অবস্থা কেমন হবে?’’

আরও একটি যুক্তি দিচ্ছেন ওই নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, যাঁরা চলে গিয়েছিলেন তাঁদের জয়ের ব্যবধান ২০২১ সালে খুব ভাল ছিল। মুকুলের কৃষ্ণনগর উত্তরে ৫৪.১৯ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজেপি জিতেছিল ৩৫ হাজারেরও বেশি ভোটে। কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন জিতেছিলেন প্রায় ২২ হাজার ভোটে, রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণের ব্যবধান ছিল প্রায় ২১ হাজার ভোটের, বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ প্রায় ১০ হাজার এবং বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় জেতেন প্রায় সাড়ে ১১ হাজার ভোটে। আলিপুরদুয়ারের সুমনের জয়ের ব্যবধান ছিল প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার ভোট এবং কোতুলপুরের হরকালী জেতেন ১২ হাজারের কাছাকাছি ভোটে।

প্রসঙ্গত, যে সাত বিধানসভা এলাকার বিজেপি বিধায়ক এখনও পর্যন্ত তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, তার প্রতিটিতেই ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এগিয়ে ছিল বিজেপি। কয়েকটিতে বিপুল ভোটে। একমাত্র কৃষ্ণনগর উত্তরের লোকসভা কেন্দ্র কৃষ্ণনগর ছাড়া সব ক’টিতেই জয় পেয়েছিল বিজেপি। ফলে এই ক্ষয় লোকসভা নির্বাচনের আগে মাথাব্যথার যথেষ্ট কারণ বলেও মনে করছেন বিজেপি নেতাদের একাংশ।

বিজেপি শিবির মাঝেমাঝেই দাবি করে, তৃণমূলের অনেক বিধায়ক বিজেপিতে আসতে চান। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তে তাঁদের ‘না’ বলা হয়েছে। সেই দাবি এবং বাস্তবের ফারাক নিয়ে দলের অন্দরে যে আলোচনা নেই তা নয়। তবে বিধায়কদের ধরে রাখার তেমন উদ্যোগও নেই। শুধু তা-ই নয়, জেলায় জেলায় দলের আদি নেতাদের মধ্যে যে ক্ষোভ, তা নিয়ে দলের অন্দরে অনেক আলোচনা হলেও নেতৃত্ব লোকসভা নির্বাচনের ‘হাওয়া’ উঠবে বলে অপেক্ষায় রয়েছেন বলে দাবি করছেন বিজেপি নেতারাই। সে বিষয়ে সুকান্তের বক্তব্য, ‘‘কে এল আর কে গেল তাতে কিছু আসে-যায় না বিজেপির। ব্যক্তি নয়, মানুষ বিজেপির প্রতীক দেখে ভোট দেন। নরেন্দ্র মোদীজির উন্নয়নই বিজেপিকে লোকসভা ভোটে সাফল্য এনে দেবে। দলত্যাগীদের নিয়ে আমরা চিন্তিত নই।’’ দলের আর এক নেতার বক্তব্য, ‘‘আটকানো যখন যাবে না, তখন চেষ্টা করে লাভ কী? ৭৫-এও আমরা বিরোধী দল ছিলাম, ৬৭-তেও থাকছি, ৬০ হলেও থাকব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement