Jyotipriyo Mallick

২০১১ থেকে ২০২১, মন্ত্রিত্বে বালুর সম্পত্তি কত বেড়েছে? স্ত্রীর সম্পত্তিই বা কত ছিল, কত হল? কী বলে হলফনামা

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:০৬
Share:
০১ ২০

রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। যিনি রাজ্য-রাজনীতিতে ‘বালু’ নামে সমধিক পরিচিত। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মন্ত্রীর একাধিক বাড়িতে ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি। ইডি সূত্রে খবর, রেশন বণ্টন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র মিলেছে তাঁর বাড়ি থেকে।

০২ ২০

বৃহস্পতিবার রাতে বালুকে গ্রেফতার করে ইডি। তার ঘণ্টাখানেক পরে তাঁকে ইডির দফতর সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। সেখানে ঢোকার মুখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বালু বলেন, “গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হলাম আমি। শুধু এটুকুই বলে গেলাম। ভারতীয় জনতা পার্টি খুব ভাল কাজ করেছে! তারা আমাকে শিকার করল।”

Advertisement
০৩ ২০

বালুর বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চলাকালীন বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে মন্ত্রীর পাশে দাঁড়ান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তোলেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগও। ইডির তল্লাশিকে ‘বিজেপির নোংরা খেলা’ বলে চিহ্নিত করে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বালুর স্বাস্থ্য খারাপ। অনেক সুগার। ও যদি মারা যায়, তা হলে বিজেপি এবং ইডি-র বিরুদ্ধে এফআইআর করতে হবে।’’

০৪ ২০

২০১১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত টানা ১০ বছর খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন বালু। অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন রেশন ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে সিন্ডিকেট তৈরি করে কেন্দ্রের পাঠানো ন্যায্য মূল্যের রেশনসামগ্রী বেআইনি ভাবে খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়েছে। তারই তদন্তে নেমেছে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, রেশন বণ্টনে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে।

০৫ ২০

জ্যোতিপ্রিয় গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই তাঁর বিষয়সম্পত্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ উঠেছে আদালতে। প্রশ্ন উঠেছে বালুর স্ত্রী মণিদীপার সম্পত্তির পরিমাণ নিয়েও।

০৬ ২০

২০১১ এবং ২০২১ সালে নির্বাচনী হলফনামায় বালু যে সম্পত্তির হিসাব দিয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, ওই ১০ বছরে তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মোট পরিমাণ বেড়ে হয়েছে সাড়ে পাঁচ গুণ। অন্য দিকে, স্ত্রীর সম্পত্তি বেড়ে ২৬ গুণ হয়েছে।

০৭ ২০

গত বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। নির্বাচনী হলফনামায় তিনি জানিয়েছেন, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে তাঁর উপার্জন ছিল ৪০ লক্ষ ২১ হাজার ৯১০ টাকা। আর ১৮ লক্ষ ১১ হাজার ৬৫০ টাকা ছিল স্ত্রীর।

০৮ ২০

কমিশনকে বালু জানিয়েছিলেন, স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৩ কোটি ৯৩ লক্ষ ৯৪ হাজার। যেখানে ২০১১ সালের ভোটের সময় কমিশনের কাছে জমা দেওয়া নির্বাচনী হলফনামায় তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৭১ লক্ষ ১১ হাজার ৫১৪ টাকা। অর্থাৎ, ৪৫৪ শতাংশ বেড়েছে বালুর সম্পত্তি।

০৯ ২০

২০২১ সালে নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী, জ্যোতিপ্রিয়ের স্ত্রীর সম্পত্তির পরিমাণ ২ কোটি ৩৮ লক্ষ ৯ হাজার ৭০৮ টাকা। ২০১১ সালে তা ছিল ৯ লক্ষ ১৪ হাজার ৯৩০ টাকা। হিসাব মতো ওই ১০ বছরে সম্পত্তি বেড়েছে ২৫০২ শতাংশ।

১০ ২০

মাঝে ২০১৬ সালে জমা দেওয়া নির্বাচনী হলফনামায় বালু জানিয়েছেন, সেই সময় তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মোট পরিমাণ কমেছিল। কমে হয়েছিল ৬২ লক্ষ ২২ হাজার ৫৮৪ টাকা। তবে অনেকটাই বেড়েছিল স্ত্রীর সম্পত্তির পরিমাণ। বেড়ে হয়েছিল ৮৮ লক্ষ ৮০ হাজার ৫০৩ টাকা।

১১ ২০

তিনটি নির্বাচনী হলফনামাতেই বালু জানিয়েছেন, তাঁর পেশা ওকালতি। আয়ের উৎস হল বেতন। অন্য দিকে, স্ত্রী বাড়িতেই থাকেন। তাঁর আয়ের কোনও উৎস নেই।

১২ ২০

২০২১ সালের নির্বাচনী হলফনামায় জ্যোতিপ্রিয় জানিয়েছেন, ওই সময় তাঁর ১৫টি সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল। রেকারিং ডিপোজ়িট অ্যাকাউন্ট ছিল দু’টি। এ ছাড়াও এসবিআই-তে (স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া) জ্যোতিপ্রিয়ের নামে ১২টি ফিক্সড ডিপোজ়িট রয়েছে। ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াতে রয়েছে দু’টি আর একটি সমবায় ব্যাঙ্কে রয়েছে ২০টি ফিক্সড ডিপোজ়িট।

১৩ ২০

বালুর নামে তিনটি জীবনবিমাও রয়েছে। তার মধ্যে একটিতে ১৫ লক্ষ টাকার প্রিমিয়াম জমা পড়েছে ওই সময় পর্যন্ত। পোস্ট অফিসেও তাঁর সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা গচ্ছিত রয়েছে। বালু জানিয়েছিলেন, ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার সোনার গয়না রয়েছে তাঁর কাছে।

১৪ ২০

২০২১ সালের নির্বাচনী হলফনামায় বালু জানিয়েছিলেন, তাঁর স্ত্রীর নামেও সাতটি সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ফিক্সড ডিপোজ়িট রয়েছে আটটি ব্যাঙ্কে। স্ত্রীর নামেও রয়েছে ছ’টি জীবনবিমা। তাঁর পোস্ট অফিসে নগদ অর্থ গচ্ছিত রয়েছে। স্ত্রীর কাছেও রয়েছে ৪ লক্ষ ২৪ হাজার ৩১০ টাকার গয়না। হলফনামা বালু জানিয়েছিলেন, তিনি ও তাঁর স্ত্রী দু’জনের নামেই শেয়ারবাজারে বন্ড কেনা রয়েছে।

১৫ ২০

জ্যোতিপ্রিয় জানান, ২০১৯ সালে একটি স্করপিয়ো এস-১১ কিনেছিলেন তিনি। খরচ হয়েছিল ১১ লক্ষ ৮৬ হাজার ২৩ টাকা। সে সময় তিনি পুরনো একটি স্করপিয়ো গাড়ি বিক্রি করে ওই গাড়িটি কিনেছিলেন। তাতে নতুন গাড়ির দামে ৪ লক্ষ ৭২ হাজার ৫৩৮ টাকা কম পড়েছিল। তাঁর স্ত্রীর নামে একটি মারুতি সুইফ্ট ডিজায়ার আছে। ২০১৬ সালে গাড়িটি কিনতে তাঁর খরচ হয়েছিল ৬ লক্ষ ৮৫ হাজার ৫২৭ টাকা।

১৬ ২০

২০২১ সালের হলফনামায় বালু জানিয়েছেন, তাঁর কোনও অস্থাবর সম্পত্তি নেই। তবে স্ত্রীর নামে কিছু অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে।

১৭ ২০

সম্প্রতি রেশন দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। মূলত তাঁকে জেরা করে পাওয়া তথ্য এবং বাজেয়াপ্ত করা নথি যাচাইয়ের পরেই বৃহস্পতিবার বালুর বাড়িতে তল্লাশি বলে দাবি করেছে ইডি সূত্র। এর আগে রাজ্যের বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতেও হানা দিয়েছিল ইডি এবং সিবিআই। তল্লাশির পাশাপাশি দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল তাঁকেও। তবে ইডি তাঁকে জেরা করেছিল রেশন দুর্নীতিতে। আর সিবিআই তাঁকে জেরা করেছিল পুরনিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে।

১৮ ২০

ইডি সূত্রের দাবি, বালু খাদ্যমন্ত্রী থাকার সময়েই বাকিবুরের উত্থান। অভিযোগ, বাকিবুরই সিন্ডিকেট তৈরি করে কেন্দ্রের রেশন সামগ্রী বেআইনি ভাবে খোলা বাজারে বিক্রি করতেন।

১৯ ২০

২০২০ সালের পর বাকিবুর-সহ একাধিক রেশন ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটরের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করে রাজ্য পুলিশ। নদিয়ার কোতোয়ালি থানায় করা সেই এফআইআরের ভিত্তিতেই ইসিআইআর দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করে ইডি।

২০ ২০

বৃহস্পতিবার বালুর বাড়িতে তল্লাশি শুরু হওয়ার পর থেকেই বাকিবুর ও বালুর সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা শুরু হয় বিভিন্ন মহলে। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, ২০২০ সালে হাবড়ায় রেশনপণ্যের বেআইনি মজুতের ঘটনা সামনে আসে। জয়গাছি রথতলা এলাকার গুদামে হানা দিয়ে প্রচুর খাদ্যসামগ্রী উদ্ধার করে পুলিশ। দু’জন গ্রেফতারও হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement