গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আচমকাই যেন শোভন চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি নরম তৃণমূল নেতৃত্ব। জোকায় একটি বাস স্ট্যান্ড উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য দল ও সরকারের তরফে গত কয়েক দিনে তাঁকে তিন বার ফোন করা হয়েছে।তাতেই শুরু হয়েছে এই জল্পনা।সংস্কারের পরে আজ জোকা বাস স্ট্যান্ডটির উদ্বোধন হয়েছে। তিন-চার দিন আগেই শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করে আমন্ত্রণ জানায় পরিবহন দফতর। কারণ, শোভন ওই এলাকার বিধায়ক। কিন্তু এই আমন্ত্রণ শোভনের কাছে একটু অপ্রত্যাশিত ছিল। কারণ, মন্ত্রী এবং মেয়র পদে ইস্তফা দেওয়ার পর থেকে বেশিরভাগ সরকারি বা দলীয় কর্মসূচিতে শোভন ডাক পাচ্ছিলেন না। পেলেও একেবারে নিয়মরক্ষার মতো করে।
তিন-চার দিন আগের ওই একটা ফোন কলেই অবশ্য শেষ হয়নি কিসসা। গতকাল ফের ফোন করা হয় তাঁকে। এ বার কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর তথা বরো চেয়ারম্যান ইন্দ্রজিৎ ভট্টাচার্য ফোন করেন এবং শোভনকে অনুরোধ করেন আজকের অনুষ্ঠানে অবশ্যই যোগ দিতে। কিন্তু শোভন জানান, তিনি অসুস্থ, যেতে পারবেন না।
আরও পড়ুন: নবান্নেই পনজি স্কিম! মুখ্যমন্ত্রীর কানে যেতে বন্ধ
তৃণমূল সূত্রের খবর, আজ সকালে ইন্দ্রজিৎ ফের ফোন করেন শোভন চট্টোপাধ্যায়কে, সেই ফোন থেকে শোভনের সঙ্গে কথা বলেন পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তিনিও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে অনুরোধ করেন আজকের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু শোভন আজ শুভেন্দুকেও জানিয়ে দেন যে তিনি সুস্থ নন, যেতে পারবেন না|
সম্প্রতি তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে বেহালা এলাকায় দলের কাজ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। স্থানীয় কাউন্সিলররা কী করছেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী কী করছেন, বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায় কী করছেন, প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। এলাকায় ছেলেধরা গুজব ছড়ানো এবং মাঝ রাতে অনাকাঙ্খিত মিছিল বেরনো নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে মমতা ওই প্রশ্ন তুলেছিলেন। যদিও শোভনের নাম অবশ্য তিনি উচ্চারণ করেননি।
আরও পড়ুন: পিএসসি দফতরে বিক্ষোভ বিসিএস পরীক্ষার্থীদের
এ দিন জোকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে শোভন যান বা না যান, তাঁর প্রতি দল তথা সরকার ফের কিছুটা সদয় হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। ফেব্রুয়ারির গোড়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধরনা মঞ্চেও শোভনকে দেখা যায়নি। ২৫ ফেব্রুয়ারি নজরুল মঞ্চে দলের কোর কমিটি বৈঠকেও শোভন ছিলেন বেপাত্তা। জোকায় বাস স্ট্যান্ড উদ্বোধনে সেই শোভনকেই বার বার আমন্ত্রণ জানানো তাই একটু অস্বাভাবিকই। কারণ সম্প্রতি দলের প্রায় কোনও গুরুত্বপূর্ণ নেতাই শোভনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন না। গত তিন-চার মাসে শুধুমাত্র সুব্রত বক্সী এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায় কয়েক বার দু’একটি বিশেষ প্রয়োজনে শোভনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন।
কোর কমিটির বৈঠকে মমতা প্রকাশ্যে শোভনের নাম না নিলেও পরে দলকে তিনি কি কোনও বার্তা দিয়েছেন? জল্পনা শুরু হয়েছে তা নিয়েই। না হলে এত দিন যে শোভন সবেতেই ব্রাত্য ছিলেন, বেহালায় দলের কাজকর্ম নিয়ে নেত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করতেই জোকায় সরকারি অনুষ্ঠানে সেই শোভনকে বার বার ডাকা হল কেন? প্রশ্ন তা নিয়েই।