স্পেশাল অফিসারের তত্ত্বাবধানে চা-পাতা নিলাম করতে অসুবিধা কোথায়, ডানকান গোষ্ঠীর কাছে শুক্রবার তা জানতে চাইলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর। একই সঙ্গে ডানকান গোষ্ঠীর উদ্দেশে এ দিন প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘সব কিছু ঠিকঠাক চললে কেন্দ্রকে চা বাগানগুলির উপর হস্তক্ষেপ করতে হবে কেন?’’
উত্তরবঙ্গে ডানকানের সাতটি চা বাগানের পরিচালনভার টি বোর্ডের হাতে তুলে দিতে চেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল কেন্দ্রের বাণিজ্য মন্ত্রক। সেই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছে ওই সংস্থা। ১৯ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ডানকানকে নির্দেশ দেন, তাদের সাতটি চা বাগানের ন’হাজার শ্রমিকের বেতনের একাংশ মেটাতে পৃথক একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চার কোটি টাকা জমা রাখতে। ওই টাকা ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেল চারটের মধ্যে জমা দিলে তবেই ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কেন্দ্রের জারি করা নোটিসের উপর স্থগিতাদেশ থাকবে বলে জানিয়ে দেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তিনি টি ডেভেলপমেন্টের ডিরেক্টরকে স্পেশাল অফিসার নিযুক্ত করে নির্দেশ দেন, শ্রমিকদের বেতন মেটানোর বিষয়টি তত্ত্বাবধান করতে।
কিন্তু ডানকান নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই টাকা জমা দেয়নি। উল্টে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে তারা প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলা করে। এ দিন সেই মামলার শুনানিতে ওই মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।
ডানকানের আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র আদালতে জানান, বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বাগানগুলিতে থাকা চা পাতা বিক্রির উপরেও স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। মূলত সেই কারণেই প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছে ডানকান গোষ্ঠী। অনিন্দ্যবাবু আরও জানান, চা পাতা বিক্রির উপরে স্থগিতাদেশ না উঠলে ডানকান শ্রমিকদের বেতনের টাকা তুলতে পারবে না। বাগানগুলি তো বন্ধ নয়। সেগুলি খোলা রয়েছে।
টি বোর্ডের আইনজীবী তিলক বসু আদালতে বলেন, ‘‘বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে পৃথক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। কিন্তু টাকা জমা পড়েনি।’’ তিলকবাবু অভিযোগ করেন, ‘‘ডানকানের চা বাগানগুলি ৯ মাস ধরে বন্ধ। বাগানগুলিতে আদৌ চা পাতা মজুত রয়েছে বলে মনে হয় না।’’ টি বোর্ডের আইনজীবীর আরও অভিযোগ, একটি চা-নিলাম সংস্থার সঙ্গে ডানকান গোপনে ডিমডিমা চা বাগান বিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছে।’’
ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় অনিন্দ্যবাবুর উদ্দেশে বলেন, ‘‘সিঙ্গল বেঞ্চ তো অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দিয়েছে। সেই নির্দেশ মানতে অসুবিধা কোথায়?’’
সব পক্ষের বক্তব্য শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমি টি বোর্ড, রাজ্য সরকার, এক জন অ্যাডভোকেট কমিশনার ও ডানকানের প্রতিনিধিকে নিয়ে একটি কমিটি গড়ে দিতে পারি। কিন্তু বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদালতে যখন এখনও মামলাটি চলছে তখন সেখানে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাঁর ডিভিশন বেঞ্চ এখনই কোনও নির্দেশ দেবে না। আগে ওই আদালতে মামলার নিষ্পত্তি হোক।’’ প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দেন, আগামী ৭ মার্চ ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলাটি উঠবে। তত দিনে সিঙ্গল বেঞ্চে মামলার নিষ্পত্তি হয়ে যাবে বলে জানায় ডিভিশন বে়ঞ্চ।