—ফাইল চিত্র
তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক দেখা যাচ্ছে রাজ্যের প্রায় সর্বত্র। মন্ত্রী, নেতা, বিধায়ক থেকে পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত বহু যোগদান ইতিমধ্যেই হয়েছে। গুঞ্জনে রয়েছেন আরও বেশ কয়েক জন। সংখ্যায় কম হলেও বাম এবং কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যাওয়ার প্রবণতা নজরে পড়েছে।
কিন্তু এঁরা সবাই বিজেপিতে আসছেন কেন? দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা নিজেই এই প্রশ্ন তোলেন। শনিবার এক দিনের সফরে পূর্ব বর্ধমানে কর্মসূচি সেরে দিল্লি ফেরার আগে বর্ধমান শহরের একটি অভিজাত হোটেলে রাজ্য বিজেপির কোর গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন নড্ডা। দলীয় সূত্রের খবর, সেখানেই রাজ্য নেতাদের কাছে তিনি জানতে চান, ভোটের আগে এ ভাবে বিজেপিতে যোগদানের পিছনে কী কারণ আছে? নেতারা কেউ কেউ তাঁকে বোঝান, বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারে, এই সম্ভাবনা থেকেই এমন প্রবণতা।
নড্ডা অবশ্য বিষয়টি নিয়ে আর এগোননি। তবে বিজেপির অন্দরমহলে অনেকেরই ধারণা, ‘ক্ষমতা’র প্রত্যাশাতেই যে বিজেপিতে বাইরে থেকে আসা ভিড় ক্রমশ বাড়ছে, তা নেতাদের কথা থেকেই বুঝে গেলেন নড্ডা। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় নিচুতলায় বিজেপি কর্মীদের মধ্যে এই প্রবণতার বিরুদ্ধে ক্ষোভের আঁচ পাওয়া গিয়েছে। প্রধানত তৃণমূল থেকে আসা নেতাদের বেশি ‘গুরুত্ব ও মর্যাদা’ দেওয়া হয়েছে, এই অভিযোগ বিজেপির পুরনো নেতা-কর্মীদের অনেকেরই রয়েছে। পাশাপাশি, যাঁদের নেওয়া হচ্ছে, বিজেপি সম্পর্কে তাঁদের অতীতের মনোভাব কেন বিবেচনায় থাকবে না, সে প্রশ্নও উঠছে দলের অন্দরে। যার সবচেয়ে বড় প্রকাশ ঘটে আসানসোলের জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে দলে নেওয়ার বিরুদ্ধে বিজেপি নেতাদের মতপ্রকাশে। এখনও জিতেন্দ্রর বিজেপিতে যোগ দেওয়া হয়নি। একই ভাবে গুঞ্জন উঠেছে দলে যোগ দিয়েই গুরুত্ব পাওয়া শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়েও। বিজেপির পুরনো কর্মীদের অনেকের এ-ও ধারণা, একই রকম প্রশ্নে মুকুল রায়কে দলে পদ দিতে এত দিন দেরি হল এবং দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি পদ পেয়েও নির্দিষ্ট ভাবে সাংগঠনিক দায়িত্ব তাঁর হাতে আসেনি। শুভেন্দু অবশ্য এসেই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাসম্পন্ন জুট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের পদ পেয়ে গিয়েছেন।
আরএসএস থেকে আসা নড্ডা এ দিন দলীয় কর্মীদের কাছে যে প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন, কার্যত তেমনই কথা উঠেছিল আমদাবাদে সঙ্ঘের সমন্বয় বৈঠকে। প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও সূত্রের খবর, সঙ্ঘ নেতৃত্ব সেখানে বিজেপি নেতাদের কাছে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ক্ষমতায় আসার জন্য বাইরে থেকে এ ভাবে নির্বিচারে দলে লোক নেওয়া কি ঠিক? এতে কি মূল আদর্শ ‘রক্ষা’ পাবে?