নিয়োগ দুর্নীতিতে সিএজি রিপোর্টের কথা উঠতেই নতুন বিতর্কে তৃণমূল সরকার। প্রতীকী ছবি।
নিয়োগ দুর্নীতিতে বিরোধীদের (বিশেষত বাম) নিশানা করতে গিয়ে ২০০৯-১০ সালের সিএজি রিপোর্টের কথা উল্লেখ করেছেন জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু সেই সূত্রেই আবার নতুন করে বিতর্কে তৃণমূল সরকার। প্রশ্ন উঠছে, ২০১৮ সালে সিএজি অডিট রিপোর্টে তদন্তের সুপারিশ করার পরেও কেন এত দিন তা করেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার? কেনই বা নিয়োগের পরীক্ষার উত্তরপত্র-সহ নথি সংরক্ষণের সময় বাম আমলের তিন বছর থেকে কমিয়ে এক ঝটকায় ছ’মাস করেছিল তারা? শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর অবশ্য দাবি, নথি থাকত এক বছর। তদন্তে দেরির কারণও আমলাদের সঙ্গে কথা বলে জানানোর কথা এ দিন বলেছেন তিনি।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এসএসসি-র নিয়োগে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন আগেই তুলেছিল সিএজি। তদন্তের সুপারিশও করেছিল তারা। তাকেই হাতিয়ার করেছেন পার্থ। বাম আমলে নিয়োগ দুর্নীতির কথা বলতে গিয়ে ২০০৯-১০ সালের সিএজি রিপোর্টের উল্লেখ করেন পার্থ। ২০১৮-এ সিএজি-র জমা করা রিপোর্টে বলা হয়েছিল, সরকার এসএসসি-র বেআইনি কাজে নজর না দেওয়ায় বহু পরীক্ষার্থী স্বচ্ছ ভাবে পরীক্ষা দিয়েও চাকরি পেতে ব্যর্থ। প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, ২০০৯ থেকে ‘ইন্টিগ্রেটেড অনলাইন এগজ়ামিনেশন সিস্টেম’-এর মাধ্যমে পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু হয়। ২০০৯-২০১৭ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি পরীক্ষা হয়। তার মধ্যে যে ক’টির অনলাইন তথ্য সিএজি যাচাই করে, তার মধ্যে কিছু ছিল বাম জমানায়। বাকিগুলি ২০১২ ও তার পরে। এই রিপোর্ট তুলে ধরেই নিয়োগ দুর্নীতিতে বাম জমানার দিকে আঙুল তুলছে শাসকদল। প্রশ্ন, সরকার এত দিন চুপ করে ছিল কেন? শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘আমলাদের সঙ্গে কথা বলে জানাতে পারব।’’ শিক্ষা দফতরের কর্তা শুভ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ফাইল খুঁজে দেখে বলতে হবে। এসএসসি-কেও জিজ্ঞেস করতে পারেন।’’
২০১৮ সালে এসএসসি-র চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা শর্মিলা মিত্র বলেন, ‘‘সিএজি তদন্তের কথা বলেছিল। নির্দেশিকা জারি হয়েছিল।...ন’মাস চেয়ারম্যান ছিলাম। তার মধ্যে তদন্তের অগ্রগতি কিছু দেখিনি।’’ পরের চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকারের বক্তব্য, তাঁর সময়ে এ রকম কিছু হয়নি।’’ বর্তমান চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, ‘‘সিএজি যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা বলেছে, তা ঠিক কত সাল থেকে, আমার জানা নেই।’’
ব্রাত্য বলেন, ‘‘২০১২ সালে নিয়ম পরিবর্তনের পরে প্রথম পরীক্ষা হয়েছিল ২০১৬ সালে। তখন নিয়ম ছিল, ফিজ়িক্যাল ওএমআর শিট (উত্তরপত্র) এক বছরের পরে নষ্ট করা হলেও, তার স্ক্যানড কপি ডিজিটালি অনন্তকাল রাখা হবে। আর এখন তো ফিজ়িক্যাল ওএমআর শিট-ই ১০ বছর পরে নষ্ট করার নিয়ম করেছি।’’ যদিও অডিট নথি অনুযায়ী, কেন্দ্রের নিয়ম অনুযায়ী, ফিজ়িক্যাল উত্তরপত্র রাখার কথা ১০ বছর। বাম জমানায় নিয়ম ছিল তিন বছর। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে তা ছ’মাস করা হয়েছে।