BJP

Sunil Bansal: রাজ্য বিজেপির নতুন ‘ক্যাপ্টেন’ সুনীল, তাঁর নিয়োগে বাংলায় আরও গুরুত্বের বার্তা পদ্মের

ছিলেন ছাত্রনেতা। সেখান থেকে রাজনীতি। সরাসরি অমিত শাহের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ। এর পর একের পর এক সাফল্য পেয়েছেন সুনীল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২২ ২০:১২
Share:

বুধবারেই সুনীলের নাম পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক হিসেবে ঘোষণা করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা।

সাম্প্রতিক কালে পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ঘটনা কী? অনুব্রত মন্ডল গ্রেফতার? পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার? অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার? উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূলের ভোটদানে বিরত থাকা? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একান্ত সাক্ষাৎ?

Advertisement

রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের একটি অংশকে বিশ্বাস করতে গেলে, উপরের কোনওটিই নয়। রাজ্য রাজনীতিতে সবচেয়ে ‘সুদূরপ্রসারী এবং তাৎপর্যপূর্ণ’ ঘটনা হল সুনীল বনসলকে রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষক পদে নিয়োগ। এক তথ্যাভিজ্ঞের কথায়, ‘‘এ হল বিরাট কোহলীকে বাংলার রঞ্জি দলের ক্যাপ্টেন করে দেওয়া!’’

বুধবারেই সুনীলের নাম পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক হিসেবে ঘোষণা করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। সেই সুনীল, যিনি বিজেপিকে উত্তরপ্রদেশ জিতে দিয়েছেন। সেই সুনীল, যিনি অমিত শাহের ‘ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন’। কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে সরিয়ে সেই সুনীলকে বাংলার দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বৈকি! যে সিদ্ধান্ত কার্যত ঘোষণা করছে, বাংলায় ক্ষমতাদখলকে ততটাই ‘গুরুত্ব’ দিচ্ছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

Advertisement

বস্তুত, মধ্যপ্রদেশ থেকে কৈলাসকে বাংলায় পাঠানোর পিছনে বিজেপির একটি দলীয় রাজনীতি ছিল। যাকে বিজেপির নেতারা ব্যাখ্যা করছেন ‘নেতিবাচক নিয়োগ’ বলে। প্রথমত, কৈলাস নিয়ে মধ্যপ্রদেশে দলের মধ্যেই একটা অংশের ক্ষোভ ছিল। তিনি ছিলেন একটি গোষ্ঠীর নেতা। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে রাজ্য থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সেই কারণে মধ্যপ্রদেশ থেকে সরিয়ে বাংলায় পাঠানো হয় কৈলাসকে। দ্বিতীয়ত, তিনি আসার পর বাংলায় বিজেপি ২ থেকে ১৮ সাংসদে পৌঁছলেও বা বিধায়কের সংখ্যা ৭৭-এ পৌঁছলেও ‘কাঙ্খিত’ সাফল্য দেখাতে পারেননি কৈলাস। তৃতীয়ত, কৈলাস সংগঠনের নিয়ম মেনে দু’টি পর্যায়ে তাঁর মেয়াদ পূর্ণ করেছেন। তবু কৈলাস আর সুনীলের দায়িত্ব পাওয়া এক নয়। সুনীলও উত্তরপ্রদেশে দু’টি পর্যায়ে তাঁ মেয়াদ সম্পূর্ণ করেছেন। ফলে তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে অন্য কোনও রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়া আপাতদৃষ্টিতে ঠিকই। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ অনেক বড় রাজ্য। সাধারণ ভাবে উত্তরপ্রদেশের সাফল্যের পর সুনীলকে প্রশাসনিক কোনও পদে নিয়ে যেতে পারত বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গ উত্তরপ্রদেশের তুলনায় ছোট রাজ্য। তা সত্ত্বেও সুনীলকে এই রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়ায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি-সহ ঘটনাবলির পর বাংলাকে তাদের ‘অগ্রাধিকার’-এর তালিকায় রাখছে বিজেপি। সম্প্রতি বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে যে রাজ্যগুলির উপরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে তেলঙ্গানা, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ। সেই তিনটি রাজ্যের পর্যবেক্ষকের দায়িত্বই পেয়েছেন সুনীল।

সুনীলের নিয়োগের খবরে চাঙ্গা রাজ্য বিজেপি। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দিল্লিতে সুনীলের সঙ্গে দেখা করেছেন। বাংলার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনাও হয় তাঁদের। রাজ্য বিজেপির দুই সাংসদ সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতোও দেখা করেন সুনীলের সঙ্গে। সুকান্ত পরে বলেন, ‘‘যখন যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাতেই উনি সাফল্য দেখিয়েছেন। এমন একজন নেতার পরামর্শ বাংলায় সংগঠন বিস্তারের কাজে বিরাট সাহায্য করবে। উনি উত্তরপ্রদেশে সংগঠনকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। নির্বাচন জয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাই সুনীল’জিকে পাওয়াটা আমাদের বড় প্রাপ্তি।’’ বিজেপি সূত্রের খবর, অগস্টের তৃতীয় সপ্তাহেই রাজ্যে আসবেন সুনীল।

সুনীলের জন্ম দুর্গাপুরের বেনাচিতি এলাকায়। চাকরিসূত্রে বাবা এসেছিলেন এ রাজ্যে। কয়েকবছর আগে তাঁর মা মারা গিয়েছেন। পরিবারের অনেকে এখনও দুর্গাপুরেই থাকেন। তবে সুনীলের লেখাপড়া, বড় হওয়া রাজস্থানে। জয়পুরের কোর্টপুতলি নামে এক এলাকায় থাকতেন। রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোটবেলায় আরএসএসের সংস্পর্শে আসেন। প্রশিক্ষণপর্ব শেষ করে ১৯৯১ সালে প্রচারক হন। সঙ্ঘের নির্দেশেই প্রথমে ছাত্র সংগঠন এবিভিপি এবং পরে বিজেপিতে যান তিনি। সঙ্ঘ পরিবারের বক্তব্য, সুনীল এবিভিপির সাধারণ সম্পাদক থাকার সময়েই দেশে সবচেয়ে বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ দখল করেছিল বিদ্যার্থী পরিষদ।

সুনীলকে ২০১৪ সালে ভোটের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। সে বার লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের মোট ৮০টি আসনের মধ্যে ৭২টিতে জিতেছিল বিজেপি। যে ক’টিতে হেরেছিল, সেগুলিও সপা নেতা মুলায়ম সিংহ ও গাঁধী পরিবারের সদস্যরা পারস্পরিক বোঝাপড়ায় জিতেছিলেন। সেই নির্বাচনে সাফল্যের পরে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘সেনাপতি’ বলেছিলেন অমিত শাহকে। দলও শাহকে সর্বভারতীয় সভাপতি করেছিল। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ বিজেপির অন্দরে এটা সকলেরই জানেন যে, নেতৃত্বে অমিত থাকলেও আড়ালে থেকে তৃণমূল স্তরে সফল সংগঠন চালিয়েছিলেন সুনীল।

বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামো সবচেয়ে ক্ষমতা বেশি সভাপতির। সেটা দেশে বা রাজ্যে সর্বত্রই। কিন্তু সংগঠনের কাজে প্রায় একই রকম ক্ষমতাধর হন সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদাধিকারীরা। উত্তরপ্রদেশে সেই দায়িত্বেই ছিলেন সুনীল। ২০১৪-র লোকসভার পরে ২০১৭ সালের বিধানসভা, ২০১৯ সালের লোকসভা এবং ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও একের পর এক সাফল্য দেখিয়েছেন তিনি। সুনীলকে নিয়ে বিজেপির অন্দরে নানা কাহিনি প্রচলিত। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি শুনিয়েছেন রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষনেতা। ২০১৭ সালে তিনি উত্তরপ্রদেশে ভোটের কাজে গিয়েছিলেন। লখনউয়ে দলীয় দফতরের দোতলায় ঘর ছিল সুনীলের। ছোট্ট ঘরে টিভি সবসময় চালু। বিছানায় আইপ্যাড। তবে সুনীলের কোনও দিকে নজর নেই। একের পর এক ফোন ঘুরিয়ে চলেছেন। সাংসদ, বিধায়ক থেকে নেতাদের নির্দেশের পর নির্দেশ দিচ্ছেন। সামনে উত্তরপ্রদেশের ম্যাপ।

সেই ফোনেই কোনো এক নেতাকে বলা সুনীলের কথাটা এখনও মনে আছে বাংলার ওই বিজেপি নেতার, ‘‘আমি আপনাকে কোনও সভায় দেখতে চাই না। দেখতে চাই প্রার্থীর সঙ্গে। আমরা দুই শতাংশ এলাকায় পিছিয়ে আছি। সে দিকে ফোকাস করুন!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement