Amit Shah

আরজি কর প্রসঙ্গ উঠল, তবে নির্যাতিতার পরিবার ও শাহের সাক্ষাৎ হল না, দূরত্ব রক্ষা কি হিসেব কষেই

শনিবার রাতে এসে রবিবার বিকেলে কলকাতা ছাড়লেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এই সময়ের মধ্যে তাঁর সঙ্গে নির্যাতিতার পরিবারের সাক্ষাৎ হতে পারে বলে জল্পনা ছিল। কিন্তু তা হল না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৪ ২০:৪৬
Share:

অমিত শাহ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

জল্পনাই সার, সাক্ষাৎ হল না। আরজি করে নির্যাতিতার মা-বাবা অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছিলেন দেখা করতে চেয়ে। শাহের কলকাতা সফরে সেই সাক্ষাৎ হবে বলে কোনও কোনও মহল থেকে বলাও হচ্ছিল। কিন্তু তা হল না।

Advertisement

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষে এমনটা জানানো হয়নি যে শনি ও রবিবার অমিত শাহ কলকাতায় থাকার সময়ে তাঁর সঙ্গে আরজি করে নির্যাতিতা চিকিৎসকের পরিবারের বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। এমন দাবি নির্যাতিতার পরিবারের তরফেও করা হয়নি। রাজ্য বিজেপিও সাংগঠনিক ভাবে এমন সম্ভাবনার কথা জানায়নি। দলের পক্ষে কিছু বলা না হলেও বিজেপির কয়েক জন নেতা এমন একটা বৈঠকের জল্পনা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু জল্পনা বাস্তব হল না। তবে আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে রবিবারই প্রথম কোনও মন্তব্য করলেন শাহ। দলীয় সভায় সন্দেশখালির সঙ্গে আরজি কর-কাণ্ডের তুলনা টেনে দাবি করলেন, রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত এমন চলতেই থাকবে।

শনিবার বেশি রাতে কলকাতায় আসেন শাহ। রাত্রিবাস করেন নিউ টাউনের একটি হোটেলে। রবিবার সকালে তিনি চলে যান বনগাঁয় সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর একটি অনুষ্ঠানে। সেখান থেকে নিউ টাউনের হোটেলে ফিরে কিছু ক্ষণের মধ্যেই চলে যান সল্টলেকের পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে। সেখানে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানের আনুষ্ঠানিক সূচনা অনুষ্ঠানে ছিলেন শাহ। সেই কর্মসূচি শেষ হতেই সোজা বিমানবন্দরে গিয়ে দিল্লি উড়ে যান। এর মধ্যেই কোনও একটা সময়ে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ হতে পারে বলে মনে করা হলেও তা হয়নি। এ নিয়ে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘এমন সম্ভাবনার কথা তো আমারও জানা ছিল না।’’

Advertisement

সুকান্ত এমনটা বললেও বিজেপি নেতা তথা কলকাতার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সজল ঘোষ দাবি করেছিলেন বৈঠক হবে। রবিবার সকালে সজলকে আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষে ফোন করে সাক্ষাতের সময় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট সময়েই তা জানিয়ে দেওয়া হবে।’’ এর পরে বিকেলে শাহ দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার সময়ে সজল ফোনে বলেন, ‘‘আমার কাছে এখনও খবর নেই। তবে শুনছি বিকেলেই সাক্ষাৎ হবে।’’ আর শাহ দিল্লির উদ্দেশে উড়ে যাওয়ার পরে তিনি বলেন, ‘‘শাহ জানিয়েছেন এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং অল্প সময়ের মধ্যে কথা হবে না। সে কারণেই এখানে সাক্ষাৎ চাননি। উনি সম্ভবত পরে দিল্লিতে ডেকে নেবেন।’’ যদিও শাহের সঙ্গে নির্যাতিতার পরিবারের সাক্ষাতের বিষয়ে এমন সম্ভাবনার কথা বিজেপির রাজ্য স্তরের কোনও নেতা জানাননি।

শাহের সঙ্গে সাক্ষাতের জল্পনার জন্ম হয় নির্যাতিতার বাবার তরফে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠানো একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে। নির্যাতিতার বাবা-মা শাহের সঙ্গে দেখা করতে চান বলে গত মঙ্গলবার দাবি করেছিলেন বিজেপি নেতা সজল। নির্যাতিতার বাবা শাহকে ইমেল পাঠিয়েছেন জানিয়ে সজল একটি চিঠিও প্রকাশ্যে আনেন। গত বুধবারই কলকাতায় আসার কথা ছিল শাহের। ঠিক তার আগের দিন শাহকে লেখা চিঠির কথা জানিয়ে সজল বলেন, মেয়ের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর থেকেই প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন দম্পতি। অসহায় বোধ করেছেন উভয়েই। এমন অবস্থায় তাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কিছু বিষয়ে আলোচনা করতে চান নির্যাতিতার বাবা-মা। আরজি করের মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় শাহ কী ভাবছেন, তা-ও জানতে চান তাঁরা। সাক্ষাতের জন্য শাহের থেকে সময় চেয়েছেন তাঁরা। মঙ্গলবার ছিল শাহের জন্মদিন। নির্যাতিতার বাবা ইমেলে শাহকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন।

ঘূর্ণঝড়ের পূর্বাভাস মেলার পরে বাতিল হয় শাহের সেই সফর। পরে ঠিক হয় তিনি শনিবার কলকাতায় এসে রবিবার দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। তখন থেকেই এটা মনে করা হচ্ছিল যে, শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ হতে পারে নির্যাতিতার পরিবারের। বিজেপির একটা অংশ চেয়েওছিল সাক্ষাৎ হোক। একাধিক রাজ্য নেতা মনে করেছিলেন, শাহের সঙ্গে নির্যাতিতার পরিবারের সাক্ষাৎ হলে আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে রাজ্যে তৈরি হওয়া শাসক-বিরোধী হাওয়ায় দলের রাজনৈতিক সুবিধা মিলবে। তবে অনেকেই মনে করেছিলেন, এমন সাক্ষাতের কোনও প্রয়োজনই নেই। কারণ, প্রথম থেকেই বিজেপি এই আন্দোলনে সে ভাবে অংশ নিতে পারেনি। দলীয় পতাকা ছাড়া কর্মীরা অংশ নিলেও দলের স্বাস্থ্য ভবন অভিযান, শ্যামবাজার ও ধর্মতলার অবস্থানে সাধারণ মানুষকে পাওয়া যায়নি। বিজেপির সমর্থনে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের নামে নবান্ন অভিযান বা তার পরের দিনে বাংলা বন্‌ধ ডেকেও বিজেপি তেমন সুবিধা করতে পারেনি।

সাধারণ মানুষ যেমন আরজি কর নিয়ে বিজেপির আন্দোলনে অংশ নেয়নি, তেমনই জুনিয়র ডাক্তাররাও বিজেপির থেকে দূরত্ব রেখেছেন বরাবর। বিজেপির সল্টলেক দফতরের প্রায় দোরগোড়ায় দিনের পর দিন অবস্থান চালালেও পদ্ম-শিবিরের সঙ্গে বিস্তর দূরত্ব ছিল জুনিয়র ডাক্তারদের। সেখানে দলের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল এবং পরে জুনিয়র ডাক্তারদের লালবাজার অভিযানের সময়ে সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখে ‘গো-ব্যাক’ স্লোগান তোলেন জুনিয়র ডাক্তরেরা। রবিবার শাহের কলকাতা সফরের দিনেই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আগেই বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন ‘মূল বিচারের দাবি থেকে সরে যাচ্ছে’ বলে সমালোচনা করেছিলেন। রবিবার সুকান্ত-শুভেন্দু একই সুরে সে কথা বলেন। তবে বিজেপি আরজি কর নিয়ে আন্দোলন থেকে যে সরছে না, সেটাও শুভেন্দুরা বুঝিয়ে দিয়েছেন।

যদিও নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে শাহের সাক্ষাৎ না হওয়ার সঙ্গে সুকান্ত-শুভেন্দুর রবিবারের বক্তব্যের মিল দেখছেন না বিজেপির অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, আদালতের নির্দেশে সিবিআই ওই ঘটনার তদন্ত করছে। এখন সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে চলছে তদন্ত। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যক্ষেত্রের দুর্নীতি নিয়েও আদালতের নির্দেশে তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। এই পরিস্থিতিতে শাহ আলাদা করে কোনও প্রতিশ্রুতিই দিতে পারবেন না নির্যাতিতার পরিবারকে। আবার নির্যাতিতার পরিবার কোনও দাবি জানালে তা পূরণ করার ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সরকারের হাত-পা বাঁধা। রাজ্যের হাতে থাকা আইনশৃঙ্খলা এবং সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে চলা তদন্তের মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে কোনও কিছু করা বা বলা যে ঠিক হবে না সেই হিসেব কষেই শাহ সাক্ষাৎ এড়িয়ে গিয়েছেন বলে মনে করছেন বিজেপির ওই অংশ। আর অপর অংশের নেতাদের প্রশ্ন, সাক্ষাতের কথাই যখন ছিল না তখন এড়িয়ে যাওয়ার বিষয় আসছে কোথা থেকে?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement