State News

মাকে ফলের দোকানে ছেড়ে দিয়ে ছেলে বলল, আসছি, কিন্তু...

বস্তুত, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের উপর এ ধরনের অত্যাচার কার্যত মহামারীর আকার নিয়েছে। আমরা অবশ্য এ ধরনের ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা করি এই বলে যে, ও তো পাশের বাড়ির ঘটনা। আমাদের বাড়িতে তো ও সব কিছু হয় না! আসলে, এ ভাবে তো কোনও কিছু আড়াল করা যায় না। এ ধরনের ঘটনার প্রভাব সর্বত্রগামী।

Advertisement

রত্নাবলী রায়

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৮ ১৯:১৩
Share:

রত্নাবলী রায়।- ফাইল চিত্র।

বাঘাযতীন স্টেশনে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা সুনীতি হালদারের পড়ে থাকার খবরে কষ্ট পেয়েছি বটে, তবে বিস্মিত হইনি। এ রকম ঘটনা আমাদের চারপাশে অহরহ ঘটে চলেছে। আপনাদের একটা পরিসংখ্যান দিই। ‘হেল্পএজ ইন্ডিয়া’ ২০১৪ সালে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের উপর অত্যাচার নিয়ে একটি সমীক্ষা চালায়। তাতে সারা দেশের ৯টি মেট্রো শহরকে বেছে নেওয়া হয়। দেখা যায়, বয়স্কদের মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশই এই ধরনের অত্যাচারের শিকার। এই ৫০ শতাংশের মধ্যে পুরুষের অনুপাত ৪৮ শতাংশ এবং মহিলা ৫২ শতাংশ। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এই শহরগুলির মধ্যে বেঙ্গালুরুর স্থান সবার উপরে।

Advertisement

বস্তুত, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের উপর এ ধরনের অত্যাচার কার্যত মহামারীর আকার নিয়েছে। আমরা অবশ্য এ ধরনের ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা করি এই বলে যে, ও তো পাশের বাড়ির ঘটনা। আমাদের বাড়িতে তো ও সব কিছু হয় না! আসলে, এ ভাবে তো কোনও কিছু আড়াল করা যায় না। এ ধরনের ঘটনার প্রভাব সর্বত্রগামী।

এ ব্যাপারে আমার আরও একটা বিষয় মনে হয়। সেটা হল ছেলেমেয়েদের নিঃশর্ত ভালবাসা। শর্তহীন ভালবাসাই এই সর্বনাশের পথে ঠেলে দিচ্ছে আমাদের। যেমন, সাধ্যে না কুলোলেও দামী জিনস, দামী মোবাইল ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দিচ্ছি আমরা। এই ভালবাসা, সামর্থ্যের বাইরে গিয়েও জিনিসপত্র কিনে দেওয়া, দায়বদ্ধতা না শেখানো— এ সব কিছুই বুমেরাং হয়ে ফিরছে আমাদের দিকে।

Advertisement

আর একটি বড় দর্শনের জায়গা হল, পার্থিব জিনিসের প্রতি যত কম আকাঙ্খা থাকে, ততই আমরা পারিবারিক ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান জানাতে পারব। ততই পারিবারিক বন্ধনের গুরুত্ব বুঝতে পারব। যদিও এই দর্শনটাকেই প্রশ্ন করা উচিত আমাদের।

কবে আমরা উপলব্ধি করব যে, সংসারে প্রবীণদের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন- ফেলে রেখে গেল ছেলে! বাঘাযতীন স্টেশনে কাঁদছেন বৃদ্ধা মা​

আরও পড়ুন- বাড়ির নর্দমায় বৃদ্ধার দেহ, পিছনে কি প্রোমোটার-চক্র​

এমন ঘটনাও তো জানি, ছেলে গাড়ি চালিয়ে মাকে নিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার পথে ফলের দোকানের সামনে নামিয়ে বলল, তুমি ফল কেন, আমি আসছি। ব্যস, ছেলে যে সেই গেল, আর ফিরল না। সে ছেলের বয়স কিন্তু প্রায় পঞ্চাশ। মাকে পথে ছেড়ে যাওয়ার আগে সেই ছেলে কিন্তু বিষয়-সম্পত্তি সব নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছিল।

তা হলে এর থেকে বাঁচার উপায়? আমাদের পূর্ব প্রজন্ম এ ভাবেই অত্যাচারিত হবেন?

না। কারণ, তাঁদের জন্য আইনের হাত প্রসারিত হয়েছে। প্রসারিত হয়েছে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ। পুলিশের ‘প্রণাম’ হেল্পলাইন আছে। আছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হেল্পলাইন। শুধু প্রয়োজন মানসিকতার বদলের। নিপীড়তদের এগিয়ে আসতে হবে। জানাতে হবে তাঁদের উপর অত্যাচার, নিগ্রহের ঘটনা। জানাতে হবে অভিযোগ। তখন মধ্যবিত্ত পারিবারিক মূল্যবোধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেও মনে রাখতে হবে, আমার সম্মান আমাকে নিজেকেই ফিরে পেতে হবে। অনেক আগে থেকেই আর্থিক ও সামাজিক পরিকল্পনা করে রাখতে হবে। যত দিন সম্ভব সাবলম্বী থাকার কথা ভাবতে হবে।

মনে রাখতে হবে, তাঁদের জন্যও অনেকে আছেন। তাঁরা একা নন।

(লেখক সমাজকর্মী)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement