এক্স হ্যান্ডলে বিদায়ী বিচারপতির মন্তব্য পোস্ট করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক— সনৎ সিংহ।
শুক্রবার দুপুর ২টোয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একটি পোস্ট করেন এক্স হ্যান্ডলে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক একটি খবরের লিঙ্ক পোস্ট করে বিবরণে লিখলেন ‘বুম!’। সঙ্গে আগুনের ইমোজি। সঙ্গে ১০০-য় ১০০ পাওয়ার একটি ইমোজিও।
প্রথমটি বোমা ফাটানোর শব্দ। দ্বিতীয়টি আগুন ঝরানো ইমোজি। শেষ ইমোজিটি সাধারণত ব্যবহার করা হয় কারও তারিফ বা কারও সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করতে। অভিষেক এই সব ক’টি ভাবনা ব্যক্ত করেছেন যাঁর প্রতি, তিনি সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতি এস কে কউল। শুক্রবারই ছিল সুপ্রিম কোর্টে ওই বিচারপতির শেষ দিন। শেষ দিনে বিদায় সম্ভাষণে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে কয়েকটি মন্তব্য করেছিলেন তিনি। অভিষেক তেমনই একটি মন্তব্য শেয়ার করে কিছুটা প্রশংসামূলক এই পোস্ট করেছেন নিজের এক্স হ্যান্ডলে।
উল্লেখ্য, গত এক মাসে এই প্রথম এক্স হ্যান্ডলে কিছু লিখলেন অভিষেক। এর আগে তিনি শেষ পোস্ট করেছিলেন ১৫ নভেম্বর। সেটি ছিল বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেমি ফাইনালে ভারতের জয় নিয়ে। তার ঠিক এক মাস পরে সুপ্রিম কোর্টের এক বিদায়ী বিচারপতির মন্তব্য পোস্ট করলেন তিনি।
কী বলেছেন বিদায়ী বিচারপতি? নিজের শেষ কাজের দিনের অন্তে এসে যখন তাঁর জন্য আয়োজিত ফেয়ারওয়েলে ভিড় করেছেন সহকর্মীরা, সবাই তাঁর কাজের প্রশংসায় ব্যস্ত, স্বয়ং দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলছেন, ‘‘বিচারপতি কউল আপনি বুঝতে পারছেন, আপনাকে সবাই কতটা ভালবাসে! আপনার কর্মজীবনের শেষ দিনে যোগ দিতে বার কাউন্সিলের সদস্যরা শুধু দিল্লি নয়, দিল্লির বাইরে থেকেও এখানে এসে পৌঁছেছেন।’’ তখন বিচারপতি কউল বললেন, ‘‘আমরা যাঁরা সংবিধানকে রক্ষা করার ক্ষমতা রাখি, তাঁদের সেই ক্ষমতার প্রয়োগ বা প্রদর্শন করতেও পিছপা হওয়া উচিত নয়। কারণ, আমরা যদি সেটা করতে না পারি তবে আমরা প্রশাসনের অন্যান্য বিভাগের কাছেও এটা আশা করতে পারি না।’’
বিচারপতির এই মন্তব্যটিই নিজের এক্স হ্যান্ডলে বোমা ফাটানোর শব্দ-সহযোগে শেয়ার করছেন অভিষেক। কেন বোমা ফাটানোর শব্দ? অভিষেকের সঙ্গে বিচারব্যবস্থার সাম্প্রতিক লড়াইয়ের কথা মাথায় রেখেই অভিষেক ঘনিষ্ঠেরা মনে করছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের ওই বিচারপতি সামগ্রিক বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অভিষেকও সেই একই কথা বলতে চেয়েছেন, বিচারপতিরা যাতে কারও প্রতি একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রায় না দেন বা পর্যবেক্ষণ না করেন।’’
অভিষেক ঘনিষ্ঠ এক নেতার বক্তব্য, ‘‘এটা এত দিনে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, বিচার ব্যবস্থার একাংশ ওই একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কাজ করছেন। যা সমীচীন নয়। আর এমনটা হচ্ছে বলেই তাঁকে আজ এ কথা বলতে হয়েছে।’’
সম্প্রতি অভিষেকের বিরুদ্ধে ইডির মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন। অভিষেকের সংস্থা এবং সম্পত্তির নথি চাওয়া হলে তিনি ৫,৫০০ পাতার নথি জমা দিয়েছিলেন ইডির কাছে। সেই নথির পরিমাণ উল্লেখ করে ইডিকে বিচারপতি সিংহ বলেছিলেন, ‘‘আপনাদের কথা মতো যে পরিমাণ নথি জমা পড়েছে, তা ইঙ্গিত দিচ্ছে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির। যদি সম্পত্তির পরিমাণ কম হত, তা হলে এই নথি আসত না?’’
এমনকি, নিয়োগ মামলার তদন্তেও তৃণমূলের বহিষ্কৃত হুগলির যুব নেতা কুন্তলের একটি মন্তব্যের জের টেনে অভিষেকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এমনকি, তিনি একটি টিভি সাক্ষাৎকারেও এ ব্যাপারে ইঙ্গিত করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল, পরে যা নিয়ে মামলা হয়।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে আরও একটি মামলায় ধাক্কা খেয়েছেন অভিষেক। তাঁর মামলাটি হাই কোর্টে বিচারপতি সিংহের একক বেঞ্চ থেকে সরাতে চেয়ে আবেদন করেছিলেন অভিষেক। তৃণমূল সাংসদের বক্তব্য ছিল, বিচারপতি সিংহের একাধিক নির্দেশের ফলে তাঁর অধিকার এবং স্বার্থে প্রভাব পড়ছে। হাই কোর্টের একক বেঞ্চ তদন্তের প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ করছে। অভিষেক, তাঁর পরিবার এবং লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার বিরুদ্ধে ইডিকে নির্দিষ্ট করে নির্দেশ দিচ্ছেন বিচারপতি সিংহ। যা অভিষেকের কথায়, নজরদারি নয় আসলে ‘তদারকি’ করছে সিঙ্গল বেঞ্চ। অভিষেক সুপ্রিম কোর্টকে বলেছিলেন, কম সময়ের ব্যবধানে প্রায় ১০ বছর আগের নথিও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিতে বলা হয়েছিল তাঁকে। সেই নির্দেশও তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট অভিষেকের এই আর্জি শুক্রবার খারিজ করে দিয়েছে।
শুক্রবার দুপুরেই ওই নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। তার কিছু পরেই ওই পোস্ট করেন অভিষেক। এ ব্যাপারে তৃণমূলের নেতাদের প্রশ্ন করা হলে, তাঁরা জানিয়েছেন, যে হেতু বিচারব্যবস্থার মধ্যে তৃণমূলকে এখন লড়তে হচ্ছে, অভিষেকের বিরুদ্ধেও অনেক মামলায় বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ নিয়ে তৃণমূল আপত্তি রয়েছে এবং মনে করা যেতে পারে অভিষেকও এ ব্যাপারে কিছুটা একপেশে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে মনে করছেন, তা-ই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির এই মন্তব্যে তাঁর ‘উচ্ছ্বাস’ স্বাভাবিক।