CPM

CPM: সূর্যের পরে কে, দুই নামে বিতর্ক সিপিএমে

পরপর কয়েকটি নির্বাচনে দলের বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে রাজ্য সম্পাদক পদ ছেড়ে দিয়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব দিতে আগ্রহী সূর্যকান্ত মিশ্র।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৪৬
Share:

সূর্যকান্ত মিশ্র। ফাইল চিত্র।

পরিবর্তন প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু পরিবর্তিত মুখ কী হবে? এই প্রশ্নেই এখন বিতর্ক চলছে বঙ্গ সিপিএমে।

বড়সড় কোনও অঘটন না ঘটলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে দলের রাজ্য সম্পাদক পদে বদল এক রকম অবধারিত। দলের অন্দরের চর্চায় পরবর্তী রাজ্য সম্পাদক পদের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে মহম্মদ সেলিম ও শ্রীদীপ ভট্টাচার্যের নাম।

Advertisement

পরপর কয়েকটি নির্বাচনে দলের বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে রাজ্য সম্পাদক পদ ছেড়ে দিয়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব দিতে আগ্রহী সূর্যকান্ত মিশ্র। দলের অন্দরে তাঁর ওই মনোভাব কয়েক বছর ধরেই স্পষ্ট। এ বার তার সঙ্গে সংযোজন হতে চলেছে সিপিএমের বয়স-নীতি। যা মেনে নিয়ে সূর্যবাবুর পক্ষে অব্যাহতি নেওয়া সাংগঠনিক ভাবেও এখন ‘নিয়মমাফিক’ পদক্ষেপ হতে চলেছে। বিধানসভা ভোটে নজিরবিহীন বিপর্যয়ের পরে মনোবল ভেঙে যাওয়া দল তথা সংগঠনের হাল কে ধরবেন, তা নিয়েই এখন ভাবতে হচ্ছে সিপিএমকে।

সিপিএমের সাংগঠনিক রেওয়াজ অনুযায়ী, বাংলার মতো বড় রাজ্যে সম্পাদক পদে এমন কাউকে আনা হয়, যিনি পলিটবুরোয় আছেন বা কেন্দ্রীয় কমিটির ‘সিনিয়র’ সদস্য। দলের একাংশের মতে, এই নিরিখে দেখলে সূর্যবাবুর জায়গায় সেলিমের রাজ্য সম্পাদক পদে আসা সিপিএমে সাংগঠনিক ভাবে সব চেয়ে ‘স্বাভাবিক’ প্রক্রিয়া হতে পারে। তিনি একাধারে পলিটবুরোর সদস্য, অন্য দিকে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং লোকসভা ও রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ। যুব সংগঠন থেকেই বাম রাজনীতিতে পরিচিত নাম, সুবক্তা হিসেবেও কদর আছে। আরও উল্লেখযোগ্য তথ্য, সেলিম ওই দায়িত্ব পেলে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পদে তিনিই হবেন প্রথম সংখ্যালঘু মুখ। প্রসঙ্গত, দলের প্রতিষ্ঠাতা-নেতা হিসেবে আলাদা সম্মান এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে জন্মদিন পালনের প্রথা থাকলেও মুজফ্ফর আহমেদ (কাকাবাবু) কিন্তু প্রথম ‘নবরত্ন’ পলিটবুরোয় ছিলেন না।

Advertisement

দলের অন্দরের খবর, সেলিমের সামনে এগোনোর পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে গত বিধানসভা নির্বাচনে আইএসএফের সঙ্গে জোট ঘিরে দলের ভিতরে-বাইরে বিতর্ক। দলেরই একাংশের মতে, ভোটের আগে তাড়াহুড়ো করে আইএসএফের মতো অপরিচিত শক্তির সঙ্গে সমঝোতা করতে গিয়ে বামেদের ভাবমূর্তিতে ধাক্কা লেগেছে। আব্বাস ও নওসাদ সিদ্দিকীর আইএসএফের সঙ্গে সমঝোতা গড়ে তুলতে সেলিমের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তাই সেলিমকে দলের শীর্ষ পদে নিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী নয় ওই অংশ। কিন্তু অন্য অংশের পাল্টা যুক্তি, আইএসএফের সঙ্গে জোট করে ভুল হয়েছিল— এমন কথা সিপিএম তার পর্যালোচনায় আনুষ্ঠানিক ভাবে বলেনি। ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যের লাইনেও বদল আসেনি। মেরুকরণের ভোটে বামেদের যে বিপর্যয় হয়েছে, তার জন্য আলাদা করে এক জন নেতাকে কাঠগড়ায় তুলে লাভ কী? বরং, রাজ্যে বিজেপির কাছ থেকে জমি ফেরানোর লড়াই যখন চালাতে হবে, সেখানে সেলিমের মতো কাউকে মুখ করলে সুবিধাই হবে বলে এই অংশের মত।

শেষ পর্যন্ত বিতর্কের জেরে সেলিমের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে শ্রীদীপবাবুর মতো নেতার দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা খুলে যেতে পারে। শ্রীদীপবাবু কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বাংলার হয়ে নিয়মিত বক্তা, পার্টি ক্লাস ও অন্যান্য মতাদর্শের পাঠচক্রে চেনা শিক্ষক। তবে সংগঠনের গণ্ডির বাইরে তাঁর তেমন পরিচিতি নেই। সংসদীয় রাজনীতিতেও তিনি পা দেননি। যদিও দলের একটি অংশের বক্তব্য, সদ্যই বিজেপি রাজ্য সভাপতি পদে সুকান্ত মজুমদারের মতো তুলনায় অপরিচিত মুখ নিয়ে এসেছে এবং পদের গুণে তাঁর পরিচিতি তৈরি হচ্ছে। কোণঠাসা অবস্থায় সিপিএমই বা তেমন পরীক্ষা চালাতে পারবে না কেন?

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘নেতা হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিতি আছে, এমন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে? নাকি একেবারে সংগঠনের জন্য কাজের লোক, এমন কাউকে সামনে রাখা হবে? এই দৃষ্টিভঙ্গির জায়গাটা আগে পরিষ্কার করতে হবে।’’ সূর্যবাবুকে রাজ্য সম্পাদক করার সময়ে দলে বিশেষ ভূমিকা ছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। এখন তিনি একেবারেই অন্তরালে। শেষ পর্যন্ত বিমান বসু ও সুর্যবাবু কাকে চাইবেন, তার উপরেই অনেকাংশে নির্ভর করবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের পরবর্তী শীর্ষ নেতার নাম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement