(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজারাম রেগে। —ফাইল চিত্র
মুম্বই হামলার ষড়যন্ত্রীর নিশানায় কি ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? এই প্রশ্নই ভাবিয়ে তুলছে লালবাজারের কর্তাদের। সোমবার মুম্বই থেকে রাজারাম রেগি নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার কথা জানায় কলকাতা পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এই যে, তিনি মুম্বই থেকে কলকাতায় এসে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি এবং অফিস চত্বরে ‘রেইকি’ করেছিলেন। এমনকি অভিষেকের আপ্তসহায়ককে ফোন করে তৃণমূলের সেনাপতির সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছাপ্রকাশও করেছিলেন। কী কারণে অভিষেককে নিয়ে রাজারামের এই ‘উৎসাহ’, তা-ই খতিয়ে দেখতে চাইছেন লালবাজারের কর্তারা। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
মুম্বই হামলার সঙ্গে রাজারামের যোগসূত্র ব্যাখ্যা করে কলকাতা পুলিশ লালবাজারে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে। সেখানে পুলিশ জানায়, তাদের প্রাথমিক তদন্তে দেখা গিয়েছে, ২৬/১১ হামলার আগে বিস্ফোরণের চক্রী ডেভিড কোলম্যান হেডলি যখন মুম্বই গিয়েছিলেন, তখন রাজারামের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল। রাজারাম হেডলির সামনে নিজেকে একটি রাজনৈতিক দলের নেতা হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন। হেডলিকে রাজারাম আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তিনি আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে দেখা করিয়ে দেবেন।
রাজারামের সঙ্গে দেখা হওয়ার প্রসঙ্গ নিজের মুখেই স্বীকার করে নিয়েছিলেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আমেরিকার নাগরিক তথা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার সদস্য হেডলি। মুম্বই হামলা নিয়ে শিকাগোর একটি আদালতে হেডলি দাবি করেছিলেন যে, মধ্য মুম্বইয়ের শিবসেনা ভবনে গিয়ে তিনি রাজারামের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। রাজারাম নাকি তখন নিজেকে শিবসেনার জনসংযোগ সংক্রান্ত কাজকর্মের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। ২০১১ সালে তৎকালীন শিবসেনার শীর্ষস্থানীয় নেতা সঞ্জয় রাউত অবশ্য জানিয়েছিলেন, দলে এমন কোনও পদই নেই। তবে ওই নামে এক জন কর্মী যে শিবসেনায় রয়েছেন, তা স্বীকার করে নিয়েছিলেন রাউত। পরে অবশ্য মুম্বই হামলা সংক্রান্ত মামলার অন্যতম রাজসাক্ষী হয়ে যান রাজারাম।
সোমবার পুলিশ জানিয়েছে, সেই রাজারামই ১৮ এপ্রিল কলকাতায় এসে এসএন ব্যানার্জি রোডের একটি হোটেলে ওঠেন। সেখানে দু’দিন থেকে কলকাতা ছাড়েন তিনি। রাজারাম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনেও তিনি রেইকি করেছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনার পর অভিষেকের নিরাপত্তা আরও আঁটসাঁট করা হচ্ছে। নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হবে মুখ্যমন্ত্রীরও। সোমবার বিকেলে রাজারামকে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে হাজির করানো হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে ৫ মে পর্যন্ত হেফাজতে রাখার আর্জি জানানো হয়েছে। আদালতে লালবাজারের তরফে দাবি করা হয়, অভিষেকের বাড়ির সামনে ছবি তুলছিলেন, ফোন করছিলেন রাজারাম।