চাকরির দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন টেট প্রার্থীরাও। —ফাইল চিত্র।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগে ‘দুর্নীতি’র মামলার রায় সোমবার ঘোষণা করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু হাই কোর্টে এখনও বিচারাধীন নিয়োগের অপর একটি মামলা। এখনও প্রাথমিকে নিয়োগ মামলা বা টেটের মামলার শুনানি চলছে। সে দিকে তাকিয়ে আছেন বহু চাকরিপ্রার্থী।
এসএসসির মতো টেটের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সেই মামলা হাই কোর্টে চলছে। টেট দুর্নীতির বিষয়ে প্রথম বার আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন রমেশ মালিক এবং সৌমেন নন্দী। প্রাথমিকে বেআইনি ভাবে নিয়োগ হয়েছে বলে হাই কোর্টে মামলা করেন এই দু’জন। এই মামলাটিতেই উচ্চ আদালতের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রাথমিকে প্রথম বার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই মামলাতেই বহিষ্কৃত হন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। বর্তমানে তিনি দুর্নীতির অভিযোগে জেল খাটছেন।
রমেশ এবং সৌমেনের করা মামলায় প্রথমে প্রাথমিকে চাকরি পাওয়া ২৬৯ জনের নিয়োগ বাতিল করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। মামলাটি এখনও ডিভিশন বেঞ্চে বিচারাধীন। হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ বর্তমানে এই মামলা শুনছেন।
এ ছাড়া, প্রাথমিকের নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে আরও একটি মামলা হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে। সেখানে মামলাকারীদের অভিযোগ ছিল, নিয়োগের যথাযথ পদ্ধতি মানা হয়নি। বেআইনি ভাবে চাকরি দেওয়া হয়েছে অনেককেই। অভিযোগ ছিল, নিয়োগের আগে ইন্টারভিউ নেওয়া কিংবা অ্যাপটিটিউড টেস্ট সঠিক ভাবে নেওয়া হয়নি। কেউ কেউ ইন্টারভিউ বা অ্যাপটিটিউড টেস্ট দিতেই যাননি, অথচ পেয়ে গিয়েছেন চাকরি। এই সংক্রান্ত মামলাটিতে ৩২ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। মামলাটি বর্তমানে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে বিচারাধীন।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
২০১৪ সালের টেট দিয়েছিলেন কয়েক লক্ষ পরীক্ষার্থী। তার মধ্যে চাকরি পেয়েছিলেন ৬০ হাজার। সেই টেটে কারচুপির অভিযোগে পৃথক মামলা করা হয়েছিল হাই কোর্টে। রাহুল চক্রবর্তী-সহ কয়েক জন চাকরিপ্রার্থী আদালতে অভিযোগ করেছিলেন, ২০১৪ সালের টেটের পরে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বেআইনি ভাবে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। টেটের ওএমআর শিট বা উত্তরপত্রে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ আদালতে জানিয়েছিল, ওএমআর শিটের আসল নথি বা হার্ডকপি নষ্ট করা হয়েছে। বদলে ডিজিটাইজ়ড ডাটা হিসাবে ওই সব তথ্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। সেই তথ্য খুঁজে বার করার কথা সিবিআইয়ের।
অভিযোগ, ফেল করা সত্ত্বেও চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে অযোগ্যদের। তাঁদের কাছ থেকে টাকাও নেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ যথেষ্ট পরিমাণ সঠিক উত্তর না লিখেও পাশ করে গিয়েছেন। অর্থাৎ মামলাকারীদের দাবি, টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি।
বর্তমানে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলছে। কিছু দিন আগে এই মামলাতেই বিচারপতি মান্থা জানিয়েছিলেন, ওএআমআর শিটের আসল তথ্য না খুঁজে পেলে ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষাটিকেই তিনি বাতিল বলে ঘোষণা করবেন। এ ছাড়াও টেটে দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত আরও কিছু মামলা রয়েছে। সেগুলি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। এসএসসি মামলার রায় ঘোষণার দিন তাই শঙ্কায় রয়েছেন টেট প্রার্থীরাও। তাঁদের ভবিষ্যৎও নির্ভর করছে হাই কোর্টের রায়ের উপরেই।