ভিআইপিদের নিরাপত্তায় কী বন্দোবস্ত, রাজ্যের কাছে জানতে চায় হাই কোর্ট। ফাইল চিত্র।
ভিআইপিদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কী কী বন্দোবস্ত করা হয়, শুভেন্দু অধিকারীর কনভয় দুর্ঘটনার মামলায় রাজ্যের কাছে জানতে চাইল কলকাতা হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার নির্দেশ, ভিআইপিদের ক্ষেত্রে রুট লাইনিং, ওয়াচার্স ম্যানেজমেন্ট কী প্রক্রিয়া মেনে করা হয়, রাজ্যকে তা রিপোর্ট দিয়ে জানাতে হবে। আগামী সোমবারের মধ্যে এ বিষয়ে রিপোর্ট দেবে রাজ্য। পুলিশের উদ্দেশে বিচারপতি মান্থার মন্তব্য, “আপাতত ইয়েলো বুক মেনে কাজ করুন।” মৌখিক ভাবে আদালত জানিয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত এই মামলায় কাউকে ডাকতে পারবে না পুলিশ।
কনভয় দুর্ঘটনার অভিযোগের মধ্যেই রাজনীতি রয়েছে। বুধবার কলকাতা হাই কোর্টে এমনটাই দাবি করেছিলেন বিরোধী দলনেতার আইনজীবী। তিনি আদালতে সওয়াল করে জানান, শুভেন্দু ছিলেন প্রথম গাড়িতে। তাঁর কনভয়ের ৭ নম্বর গাড়িতে দুর্ঘটনাটি ঘটে। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে শুভেন্দু এফআইআর-এর উপর স্থগিতাদেশ এবং সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়েছিলেন। আদালতে শুভেন্দুর আইনজীবী বলেন, “যে ঘটনাটি ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক। কনভয়ের সাত নম্বর বুলেটপ্রুফ গাড়িটিতে ধাক্কা লেগেছে। রাস্তার ধার দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন ওই ব্যক্তি। সেই সময় দুর্ঘটনা ঘটে।” অন্য দিকে, দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তির বাবা এবং তাঁর আত্মীয় আলাদা আলাদা আইনজীবী নিয়ে হাজির ছিলেন।
বৃহস্পতিবার রাতে দিঘা-নন্দকুমার ১১৬বি জাতীয় সড়কে পথদুর্ঘটনায় ভৈরবপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ ইসরাফিলের (৩৩) মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, শুভেন্দুর কনভয়ের সামনের গাড়িটি তাঁকে ধাক্কা দেয়। অভিযোগ, কনভয়ের একটি গাড়ি প্রচণ্ড গতিতে যুবককে ধাক্কা মারার পর ঘটনাস্থলে আর দাঁড়ায়নি। দুর্ঘটনার পরেই সেখান থেকে চলে গিয়েছে কনভয়। গুরুতর জখম অবস্থায় ইসরাফিলকে এড়াশাল গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। শনিবার দুর্ঘটনাস্থলে যায় ফরেন্সিক দল। সেখানে গাড়ির চাকার দাগ এবং সংলগ্ন এলাকার নমুনা সংগ্রহ করে তারা।
কনভয়ের যে গাড়ির ধাক্কায় যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ, তমলুক থানায় রাখা সেই গাড়িটিও পরীক্ষা করে দেখেন রাজ্য ফরেন্সিক দলের সদস্যেরা। গাড়িটির ক্ষতিগ্রস্ত অংশ, চাকা এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশের পরীক্ষা করেন তাঁরা। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার সময় গাড়ির গতিবেগ কত ছিল, জেলা পরিবহণ দফতরের মোটর ভেহিকলের আধিকারিকেরা সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখেন। যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার অভিযুক্ত গাড়িচালক আনন্দকুমারকে গ্রেফতার করেছিল চণ্ডীপুর থানার পুলিশ। সেই দিনই তাঁকে তমলুক আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ১ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। এর পর শনিবার আবার ধৃত গাড়িচালককে আদালতে পেশ করা হয়। সওয়াল-জবাবের পর বিচারক ব্যক্তিগত ৫ হাজার টাকার বন্ডে ধৃতের জামিন মঞ্জুর করেন। বিরোধী দলনেতার দফতর সূত্রে দাবি, যে গাড়িটির বিরুদ্ধে ধাক্কা মারার অভিযোগ উঠেছে, সেটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি। সেই কারণেই সাধারণ গাড়ির তুলনায় সেটি বেশি ভারী। এ ছাড়াও ওই গাড়িটি শুভেন্দুর কনভয়ের থেকে অন্তত দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরত্ব বজায় রেখে চলে। গাড়িটি তুলনামূলক ভারী বলেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।