ছবি এএফপি।
বেসরকারি হাসপাতালের বিলে যে সরকারি বেড়ি পড়তে চলেছে, তা মোটামুটি স্পষ্ট। প্রশ্ন হল, প্রতিদিন বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীর খরচের ঊর্ধ্বসীমা কত হবে? দিল্লি, তেলঙ্গানা, কর্নাটক-সহ কিছু রাজ্যের বেঁধে দেওয়া তালিকা হাতে আছে। পশ্চিমবঙ্গ কোন পথে হাঁটবে, এখানকার বেসরকারি হাসপাতাল আপাতত সে-দিকেই তাকিয়ে আছে। তাদের অনেকেই চায়, আলোচনার ভিত্তিতে খরচ ধার্য করা হোক।
করোনা চিকিৎসায় অতিরিক্ত বিল নিয়ে অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। সাম্প্রতিক বৈঠকে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিল নবান্ন। তাতে যে কাজ হয়নি, মঙ্গলবারের সর্বদল বৈঠকে তা স্পষ্ট হয়ে যায়। পরে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতাল কত টাকা নেবে, তা ঠিক করে দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলে মুখ্যসচিব রাজীব সিংহকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কার কত ফিজ় নেওয়া উচিত, তার একটা গাইডলাইন (নির্দেশিকা) দেওয়া হবে। মহারাষ্ট্র, দিল্লি দিয়েছে। মানুষের কাছ থেকে প্রচুর টাকা নেওয়া হচ্ছে। এত টাকা তাঁদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।’’
বেসরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্র সূত্রের খবর, ক্রনিক ডায়ালিসিসের এক রোগী কয়েক দিন আগে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। ১০ বছর ধরে ওখানে চিকিৎসা করাচ্ছেন তিনি। কিন্তু করোনা আবহে ডায়ালিসিসের রোগীকে হাসপাতালে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। হাসপাতাল-চত্বরে নিজের গাড়িতে প্রায় ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করার পরে গাড়িতেই মৃত্যু হয় তাঁর। মৃতের স্বজনেরা সুবিচার চেয়ে স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থ হন। অতিরিক্ত বিল সম্পর্কে ধারণা দিতে বেসরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত এক প্রবীণ জানান, পিপিই বা বর্মবস্ত্রের ‘এমআরপি’ ৩৫০০ টাকা লেখা থাকলে সেই দামই বিলে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ গুণমানের নিরিখে একটি বর্মবস্ত্রের খরচ ৩০০ থেকে ৮০০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। তা ছাড়া, এক জন সাফাইকর্মী বর্মবস্ত্র পরে একাধিক রোগীকে পরিষেবা দিচ্ছেন। কিন্তু তাঁর ব্যবহৃত বর্মবস্ত্রের খরচ নেওয়া হচ্ছে প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে! স্বাস্থ্য কমিশন সূত্রের খবর, কলকাতার দু’-তিনটি হাসপাতালে প্রতিদিন চিকিৎসা বাবদ করোনা রোগীর এক লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে! এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার কমিশনে শুধু কোভিড সংক্রান্ত ১০টি মামলার শুনানির পরিকল্পনা রয়েছে।
অনেক চিকিৎসকদের বক্তব্য, কিছু বেসরকারি হাসপাতালে বিল ১০ লক্ষ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, কিছু বেসরকারি হাসপাতালের কাছ থেকে বিলের প্রতিলিপি চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: আক্রান্তদের সংস্পর্শে কারা, খামতি সেই তথ্যে?
পিয়ারলেসের সিইও সুদীপ্ত মিত্র বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে কত খরচ হচ্ছে, হিসেব করে তার উপরে আরও ১০-১৫% বাড়িয়ে বেসরকারি হাসপাতালের জন্য খরচ বেঁধে দেওয়া উচিত সরকারের।’’ রাজ্য অধিগৃহীত বেসরকারি কোভিড হাসপাতালে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল হেল্থ স্কিম’ অনুযায়ী খরচের হার ধার্য আছে। তার থেকে কম খরচ বেঁধে দিলে সমস্যায় পড়তে হবে বলে উত্তর ২৪ পরগনার একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্ণধারের অভিমত। আনন্দপুর ফর্টিসের চিফ অব মেডিক্যাল সার্ভিস আরাফত ফয়জল বলেন, ‘‘ওয়েস্ট বেঙ্গল হেল্থ স্কিমের রেট স্বাগত। কিন্তু তাতে ওষুধ ও আনুষঙ্গিক খরচ ধরলে হবে না।’’ মেডিকার কর্ণধার অলোক রায়ের মতে, ওয়েস্ট বেঙ্গল হেল্থ স্কিম নয়, করোনার চিকিৎসায় ফিকি যে-‘রেট’ ধার্য করেছে, তাতে আপত্তি নেই। অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘‘করোনায় ওষুধের থেকে পরীক্ষার খরচ বেশি। খরচ নিয়ন্ত্রণ চাই আমরাও। কিন্তু ওয়েস্ট বেঙ্গল হেল্থ স্কিমে চিকিৎসকদের পারিশ্রমিক খুব কম। আমাদের আশা, সরকার সকলের সঙ্গে বসে রেট ধার্য করবে।’’ এই বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘এখনই কিছু বলার মতো সময় আসেনি।’’