তৃণমূলে কি ফের ফুটবে মুকুল, ধন্দ দলের অন্দরেই

বেশ কিছু দিন হল, তিনি খবরে নেই। তাঁকে ছাড়াই পুরভোট উতরে দিয়েছে দল। বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরুর মুখে মুকুল রায়কে আবার খবরে ফিরিয়ে আনলেন তৃণমূল নেতৃত্বই! তৃণমূলের একাংশের দাবি, মুকুলের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে শুরু হওয়া তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে, দলের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আপাতত রিপোর্টও পেশ করা হচ্ছে না! মুকুলের সম্পর্কে তৃণমূলের অবস্থান যে অনেকটাই নরম, তারও ইঙ্গিত মিলেছে এই অংশের কথায়। আবার দলেরই অন্য অংশের দাবি, মুকুলের বিরুদ্ধে এমন তদন্ত হচ্ছিলই না!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৫ ০৩:২৩
Share:

বেশ কিছু দিন হল, তিনি খবরে নেই। তাঁকে ছাড়াই পুরভোট উতরে দিয়েছে দল। বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরুর মুখে মুকুল রায়কে আবার খবরে ফিরিয়ে আনলেন তৃণমূল নেতৃত্বই!

Advertisement

তৃণমূলের একাংশের দাবি, মুকুলের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে শুরু হওয়া তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে, দলের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আপাতত রিপোর্টও পেশ করা হচ্ছে না! মুকুলের সম্পর্কে তৃণমূলের অবস্থান যে অনেকটাই নরম, তারও ইঙ্গিত মিলেছে এই অংশের কথায়। আবার দলেরই অন্য অংশের দাবি, মুকুলের বিরুদ্ধে এমন তদন্ত হচ্ছিলই না! তাই তদন্ত বন্ধ করা বা সুর নরমের প্রশ্নই অবান্তর! দুই শিবিরের এই দুই বক্তব্যে স্পষ্ট, মুকুল-প্রশ্নে ফের টানাপড়েন শুরু হয়েছে তৃণমূলে। দলেরই একাংশের ব্যাখ্যা, মুকুলকে পুরনো জায়গায় ফেরানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে, বিষয়টি হয়তো এমন নয়। বরং, এই সুর নরমের লক্ষ্য সম্ভবত বিধানসভা ভোটের আগে মুকুলের বিজেপি বা নতুন মঞ্চে যাওয়ার রাস্তায় কাঁটা ফেলে দেওয়া! যাতে অন্যদের বোঝানো যায়, মুকুলকে নিয়ে তৃণমূলে ফের ভাবনাচিন্তা চলছে।

সারদা-কাণ্ডে সিবিআইয়ের মুকুলকে ডাকা এবং রাজ্যসভার এই সাংসদের তরফে তদন্তকারীদের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতার কথা বলার পর থেকেই পরিস্থিতি ঘোরালো হয়েছিল তৃণমূলে। বহিষ্কার করা না হলেও যাবতীয় পদ হারিয়ে দলে একঘরে হয়ে পড়েন মুকুল। দল-বিরোধী মন্তব্যের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের তদন্তের কথাও বলা হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার ওই তদন্ত প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এর আর কোনও প্রয়োজন নেই!’’ তৃণমূলের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, মুকুল সম্পর্কে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অবস্থান নরম হওয়ার ইঙ্গিতই ধরা পড়েছে ডেরেকের মন্তব্যে। দলের এক সাংসদের কথায়, ‘‘সংসদের বাজেট অধিবেশনের প্রথম পর্বে মুকুল নিয়ে দলের শীর্ষ শিবিরের যে আক্রমণাত্মক মনোভাব ছিল, তা এখন অনেক স্তিমিত।’’

Advertisement

তৃণমূলের ওই শিবিরের যুক্তি, এখনও পর্যন্ত সে ভাবে দল-বিরোধী কোনও মন্তব্য করেননি মুকুল, যাতে তৃণমূলকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়। অধিকাংশ সময়েই দলের নীতি মেনে রাজ্যসভায় ভোটাভুটিতে অংশ নিয়েছেন তিনি। ডেরেক-সহ তৃণমূলের অন্য সাংসদদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করার পথেও হাঁটেননি। তা ছাড়া, দলে অনেকের আশঙ্কা ছিল সদ্যসমাপ্ত পুরভোটে ব়ড়সড় অন্তর্ঘাত করতে পারে মুকুল বাহিনী। কিন্তু বাস্তবে তেমন বড় কিছু ঘটেনি। এ সবের জেরেই মুকুল-প্রশ্নে অবস্থান বদলের ভাবনা।

এ সবের জেরেই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি আগামী বিধানসভা ভোটের কথা ভেবেই পুরনো জায়গায় ফেরানো হচ্ছে মুকুলকে? সরাসরি এই যুক্তি মানতে চাননি ডেরেক। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখেই ভোট হয় তৃণমূলে। পুরভোটেই তা প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং, মুকুল রায়ের দলে সক্রিয় ভাবে ফেরার সঙ্গে বিধানসভা ভোটের সম্পর্ক নেই।’’ লক্ষ্যণীয়, মুকুলের সক্রিয় হয়ে ফেরার সম্ভাবনা সরাসরি নাকচ করেননি ডেরেক।

কিন্তু তার পরেও টানাপড়েনের আরও উপাদান থাকছে তৃণমূলে! কারণ দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন রাতেই বলেছেন, ‘‘দিল্লিতে ডেরেক কী বলেছেন, জানি না। কিন্তু দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে বলতে পারি, এমন তদন্ত মুকুলের বিরুদ্ধে হচ্ছিল না। তাই সে সব বন্ধ হওয়া বা আর প্রয়োজন না থাকার প্রশ্ন নেই!’’ তা হলে কি মুকুলের প্রত্যাবর্তন হচ্ছে না? পার্থবাবুর বক্তব্য, ‘‘এমন সব মন্তব্য করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা মুকুল রায়, কারও মর্যাদাই রক্ষা করা হচ্ছে না! ভবিষ্যতে কী হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন দলনেত্রীই। এখনও তেমন সিদ্ধান্তের কথা জানা নেই।’’

এমন নাটকীয় ঘাত-প্রতিঘাতের মাঝে কী ভাবছেন মুকুল? সংসদের অধিবেশন শেষে রাতে দিল্লি থেকে ফিরে এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি তিনি। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে ডেরেকের মন্তব্যকে তিনি কোনও গুরুত্বই দিতে চাননি। বরং তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে পার্থবাবুর বক্তব্যকেই প্রচ্ছন্ন সমর্থন করা হয়েছে! অতএব, নাটক বেশ জোরদার!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement