২১৮, রবীন্দ্র সরণির এই ঘরেই পড়াতেন ললিত ঝা। —নিজস্ব চিত্র।
লোকসভায় রংবোমা নিয়ে হানার ঘটনায় মূলচক্রী ললিত ঝা-র কলকাতা কানেকশন ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। তবে মিতভাষী, নম্র ললিত যে এমন কোনও ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন, তা বিশ্বাসই করতে পারছেন না কলকাতার রবীন্দ্র সরণি এলাকার বাসিন্দারা। আবার তাঁর নাম যে ললিত এমনটা শুনেও অবাক হচ্ছেন কেউ কেউ। কারণ সকাল-সন্ধ্যা যাঁকে দেখে কুশল বিনিময় করতেন, তাঁকে তাঁরা চিনতেন ‘মাস্টারজি’ নামেই।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রবীন্দ্র সরণির চার তলা বাড়ির নীচের তলার একটি ঘর ভাড়া করেছিলেন ললিত। ২১৮, রবীন্দ্র সরণির সেই অন্ধকার, ঘুপচি ঘরেই ‘পড়াতেন’ তিনি। বিভিন্ন সময়ে সেই ঘরে ‘ছাত্র-ছাত্রী’রা আসতেন। তবে ললিত কী পড়াতেন তা কোনও দিন ঘুণাক্ষরেও টের পাননি স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এলাকায় ললিত ‘মাস্টারজি’ নামেই পরিচিত ছিলেন। পরিচিত ছিলেন স্বল্পভাষী এবং নম্র হিসাবে। পরিচিতদের সঙ্গে দেখা হলেই করজোড়ে নমস্কার করতেন তিনি।
২১৮, রবীন্দ্র সরণির সেই চার তলা বাড়ির একাংশ। —নিজস্ব চিত্র।
রবীন্দ্র সরণির ভাঙাচোরা পুরনো ওই বাড়ির চার তলাতে ভাড়া থাকেন অনুজ আগরওয়াল। তাঁর কথায়, ‘‘মাস্টারজির সঙ্গে কথা কম হত। আমরা অনেকে ওঁর আসল নামও জানতাম না। কিন্তু এখন তাঁর নাম এ রকম এক ঘটনায় জড়িয়ে যাওয়ায় আমরা সকলেই অবাক।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মাস্টারজির বয়স আমাদের মতোই ২৯-৩০ হবে। আমরা দেখা হলেই নমস্কার করতাম। মাস্টারজিও নমস্কার করতেন। কিন্তু ঘরের মধ্যে কী হচ্ছে জানতাম না।’’
চার তলাতেই ভাড়া নিয়ে থাকেন পেশায় ব্যবসায়ী রাজীব আগরওয়াল। তাঁর কথায়, ‘‘মাস্টারজি দেখা হলেই নমস্কার করতেন। খুব নম্র। ওঁর জন্য কোনও দিন সমস্যা হয়নি। চুপচাপ আসা-যাওয়া করতেন। এখানে যাঁরা ওঁর কাছে আসতেন, তাঁরাও বেশ চুপচাপই ছিলেন। ওকে দেখে কোনও দিন মনেও হয়নি যে এ রকম কিছুর সঙ্গে ওঁর যোগ থাকতে পারে।’’
ওই একই বাড়ির আবাসিক লতা আগরওয়াল জানিয়েছেন, অনেক দিন ধরেই ললিত ওই ভাড়াঘরে আসতেন। বেশি কথা না বললেও দেখা হলেই তাঁর ঠোঁটের কোণে হাসি লেগে থাকত। তবে কোভিডের পর থেকে তাঁকে আর দেখা যায়নি বলেও লতা জানিয়েছেন।
শিক্ষক দিবস উপলক্ষে ললিতের এই ছবিতে তাঁকে অনেকে শুভেচ্ছা জানান। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
প্রসঙ্গত, বুধবার দুপুর ১টা নাগাদ বিজেপির মাইসুরু কেন্দ্রের সাংসদ প্রতাপ সিংহের দেওয়া প্রবেশপত্র নিয়ে, জুতোয় রংবোমা লুকিয়ে সংসদ ভবনে ঢুকে পড়েন সাগর শর্মা এবং মনোরঞ্জন ডি নামে দুই যুবক। অধিবেশন চলাকালীন দুপুর ১টার কিছু পরে লোকসভায় জ়িরো আওয়ারে দর্শক আসন থেকে নীচে ঝাঁপ মেরে ছুড়তে থাকেন সেই রংবোমা। ঘন হলুদ ধোঁয়ায় ঢেকে যায় লোকসভার মূল অধিবেশন কক্ষের একাংশ। পরে সংসদ ভবনের বাইরের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে ঢুকে ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’ স্লোগান তোলেন অমল শিন্ডে এবং নীলম। তাঁদের হাতেও ছিল ‘স্মোক ক্র্যাকার’। ললিতকেই সেই রংবোমা-কাণ্ডের ‘মূলচক্রী’ বলে মনে করছেন তদন্তকারীদের একাংশ। অভিযোগ, বুধবার লোকসভায় ওই ঘটনা ঘটানোর পর হোয়াট্সঅ্যাপে সেই ঘটনার ভিডিয়োও প্রথম পাঠিয়েছিলেন ললিত। পাঠিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গেরই এক বন্ধুর কাছে। ললিতের সেই বন্ধু নীলাক্ষ আইচকে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। নীলাক্ষ বিধাননগর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তবে পড়াশোনার ফাঁকে সমাজসেবার কাজ করেন। তাঁর নিজের একটি এনজিও-ও আছে। পুলিশকে নীলাক্ষ জানিয়েছেন, এই এনজিও-র সূ্ত্রেই ললিতের সঙ্গে আলাপ তাঁর। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো নাগাদ ব্যারাকপুর কমিশনারেটের কয়েক জন পুলিশকর্মী উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহরের জেটিয়ায় নীলাক্ষের বাড়িতে আসেন এবং তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ললিতকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ!