নবান্ন-রাজ্যপাল সঙ্ঘাতে নয়া মোড়। গ্রাফিক— সনৎ সিংহ।
বিজয়া সম্মেলনীর আসরে যে উষ্ণতার ছোঁয়া পাওয়া গিয়েছিল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা উধাও হয়ে গিয়েছিল। বুধবার সেই প্রসঙ্গেই জগদীপ ধনখড়কে ‘ডক্টর জেকিল ও হাইড’-এর সঙ্গে তুলনা করে নবান্ন বনাম রাজ্যপাল তরজায় ঢুকে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান ও মুখ্য অর্থ উপদেষ্টা তথা রাজ্যের সদ্য প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
সোমবার রাজ্য সরকারের ডাকে বিজয়া সম্মেলনীতে উপস্থিত হয়েছিলেন সস্ত্রীক রাজ্যপাল ধনখড়। সেই আসরে রাজ্যপালকে রাজ্যে শিল্প আনতে সাহায্য করার আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জবাবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে স্বাগত জানান রাজ্যপাল। তিনি বলেছিলেন, ‘‘সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের জন্য যেখানে যা করার, আমি তা করব। পশ্চিমবঙ্গ অগ্রগতির পথে চলেছে। এই কাজে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যমের প্রশংসা প্রাপ্য।’’ কিন্তু তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টে যায় রাজ্যপাল ধনখড়ের মনোভাব। মঙ্গলবার পর পর দু’টি টুইট করেন রাজ্যপাল। প্রথম টুইটে লেখেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিজিবিএস (বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলন) নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে সব ক্ষেত্রেই তথ্য ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে জবাবদিহি করা যায়। কেবলমাত্র বিজ্ঞাপন ও বিবৃতি দিয়েই নিজের কাজ জাহির না করি।’ দ্বিতীয় টুইটে তিনি লেখেন, ‘এক বছর আগেই বিজিবিএস-এর পাঁচটি সম্মেলনের তথ্য চেয়েও পাওয়া যায়নি। জমিতে আসলে কেমন ফসল হয়েছে, তাতেই জমির পরিচয়। আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাই বিনিয়োগের জন্য অপরিহার্য।’
এর পর থেকেই রাজ্যপাল বনাম নবান্ন সঙ্ঘাত নয়া মোড় নেয়। এ বার তাতে ঢুকে পড়লেন অমিত মিত্রও। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ‘দু’দিন দু’রকম’ মন্তব্যের অভিযোগ করে অমিত টুইটে লেখেন, ‘শিল্প সম্মেলন নিয়ে মাননীয় রাজ্যপালের টুইট ‘ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড’-এর শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত। ৯ নভেম্বর, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পরবর্তী শিল্প সম্মেলন করার পরিকল্পনাকে দৃঢ় ভাবে সমর্থন করলেন, বললেন, রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের জন্য যেখানে যা করার, আমি করব। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে (আমি) লেখা চিঠি তুলে ধরে তিনি টুইটে বিষ ওগরাতে শুরু করলেন। এটা দূর্ভাগ্যজনক, শিল্প সম্মেলনের উপর আমার তথ্য সম্বলিত চার পাতার চিঠির পরও তিনি আমার প্রতিক্রিয়া চাইছেন।’
মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান ও মুখ্য অর্থ উপদেষ্টা টুইটে রাজ্যপালকে আরও প্রশ্ন, তিনি কি ‘অ্যামনেশিয়া’য় ভুগছেন না কি ‘ম্যাকিয়াভেলিয়ান অমিশন’?
একইসঙ্গে টুইটে ২০২০ সালে রাজ্যপাল ধনখড়কে পাঠানো শিল্প সম্মেলনের তথ্য সংক্রান্ত ৪ পাতার চিঠিটিও জুড়ে দিয়েছেন রাজ্যের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সব মিলিয়ে পুজো কাটতেই রাজ্য বনাম রাজ্যপাল সংঘাত ফের তুঙ্গে।