যৌথ উদ্যোগে আর আবাসন নয় রাজ্যের

বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আবাসন নির্মাণে আর হাত দেবে না রাজ্য সরকার। বাম জমানায় এ ধরনের প্রকল্প তৈরির নীতি নেওয়া হয়। কিন্তু তাতে দুর্নীতির গন্ধ পেয়ে প্রথম মেয়াদেই আবাসন নির্মাণে যৌথ উদ্যোগের পরিসর কমিয়ে এনেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।

Advertisement

শঙ্খদীপ দাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৬ ০৪:২০
Share:

ফাইল চিত্র

বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আবাসন নির্মাণে আর হাত দেবে না রাজ্য সরকার। বাম জমানায় এ ধরনের প্রকল্প তৈরির নীতি নেওয়া হয়। কিন্তু তাতে দুর্নীতির গন্ধ পেয়ে প্রথম মেয়াদেই আবাসন নির্মাণে যৌথ উদ্যোগের পরিসর কমিয়ে এনেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। দ্বিতীয় মেয়াদে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নতুন করে আর এমন কোনও উদ্যোগে জড়াবে না আবাসন দফতর।

Advertisement

কেন? নবান্নের মতে, ব্যবসা করা সরকারের কাজ নয়। তাই আবাসন নির্মাণের কাজ বাজারের হাতেই ছেড়ে দেওয়া শ্রেয়। এ জন্য সরকার মাঝে মাঝে জমি নিলাম করবে। সেই জমি কিনে বাড়ি বা আবাসন বানাবে বেসরকারি সংস্থা। তাতে সরকারের রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা আসবে। আবাসন ক্ষেত্রে লগ্নিতে প্রশস্ত হবে প্রতিযোগিতার পথও। আবাসনমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘যৌথ উদ্যোগে আবাসন গড়ার সিদ্ধান্তটাই অর্থনৈতিক ভাবে ভুল ছিল। সরকার কেন বহুতল বিলাসবহুল আবাসন তৈরি করবে! সরকার শুধু বিনিয়োগের পরিবেশ ও সুযোগ তৈরি করে দেবে।’’

আবাসন ক্ষেত্রে লগ্নি টানার চেষ্টাও শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দ্বিতীয় দফায় কলকাতার মেয়রকে আবাসন, পরিবেশ ও দমকল দফতরের মন্ত্রী করেন তিনি। আবাসন নির্মাণে এই তিন দফতরের ছাড়পত্র লাগে। এ ভাবে কার্যত ‘এক জানলা’ ব্যবস্থা কায়েম করতে চান মমতা। বেসরকারি টাউনশিপ গড়তে ছাড়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়াও সরল হচ্ছে। কারও কাছে যদি এক লপ্তে ৫০ একর জমি থাকে, বা কিনে নিতে পারে, তা হলে জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন শিথিল করে তাকে টাউনশিপ গড়ার অনুমতি দেওয়া হবে। আইনে গ্রামে এক লপ্তে ২৪.২ একরের বেশি জমি রাখার নিয়ম নেই।

Advertisement

শিল্পমহলের একাংশের বক্তব্য, আইন শিথিল করে অনুমতি দেওয়ার অর্থ, দুর্নীতির পথ খুলে রাখা। বরং আইন তুলে দেওয়া ভাল। যদিও মন্ত্রীর দাবি, সরকার সুনির্দিষ্ট নীতি নিচ্ছে। তাই দুর্নীতির সম্ভাবনা নেই। কারও হয়রানি হলে আবাসন দফতরে জানাবেন, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তৃণমূলের অভিযোগ, বরং বাম আমলে যৌথ উদ্যোগে আবাসন নির্মাণের যে ব্যবস্থা ছিল, তাতেই দুর্নীতির সম্ভাবনা ছিল বিস্তর। তখন ১৫টি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে সরকার। তাদের জমি দেওয়ার শর্ত ঘিরে বিস্তর প্রশ্ন উঠেছিল। ছিল অনিয়ম, স্বজনপোষণের অভিযোগও। নবান্নের কর্তাদের মতে, এমন উদ্যোগে যে রাজস্ব আদায় হবে বলে ভাবা হয়েছিল, তা-ও হয়নি। কারণ অনেকে জমি পেয়েও কাজ শুরু করতে দেরি করেছে। কেউ কাজ সময়ে শেষ করতে পারেনি। কোনও সংস্থা জমি নেওয়ার মতো প্রাথমিক কাজটুকুও করেনি।

তাই ক্ষমতায় এসে যৌথ উদ্যোগের তালিকায় থাকা বেসরকারি সংস্থার সংখ্যায় কাটছাঁট করে তৃণমূল। শেষে রাখা হয় বেঙ্গল অম্বুজা, বেঙ্গল পিয়ারলেস, বেঙ্গল শ্রাচি, বেঙ্গল ইমামির মতো ৯টি সংস্থাকে। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে তাদের সঙ্গেও নতুন করে প্রকল্প না-করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তবে আবাসনমন্ত্রী জানান, তাঁর দফতর ও আবাসন পর্ষদের কাছে তিনশো একরের মতো জমি রয়েছে। ওই জমি প্রয়োজন মতো নিলাম করা হবে। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘প্রশাসনিক স্বচ্ছতা আনা এই মুহূর্তে সময়ের দাবি। জমি নিলাম করলে রাজস্ব আদায় নিয়ে বিভ্রান্তি থাকবে না।’’ রাজ্যের বিভিন্ন দফতরেরও প্রচুর জমি পড়ে রয়েছে। শোভনবাবু জানান, ওই সব জমি বিক্রি করতে হলে নিলাম হবে।

রাজ্যে নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত অনেক শিল্পপতিই এখন ক্রেডাইয়ের সম্মেলনে যোগ দিতে সাংহাইতে। তাঁদের বক্তব্য, সরকার সিদ্ধান্ত নিলে তা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement