West Bengal University of Health Sciences

প্রস্তাব: পরীক্ষা শেষে ‘লক’ মেডিক্যালের উত্তরপত্র

এত দিন পরীক্ষা কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা থাকলেও কারচুপি চলত। ক্যামেরায় দেখা যেত, পড়ুয়ারা লিখছেন। কিন্তু কেউ কেউ লেখার ‘অভিনয়’ করছেন, না সত্যি খাতায় কিছু লিখছেন সেটা স্পষ্ট বোঝা যেত না।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:০৪
Share:

ডাক্তারি পরীক্ষা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে খাতা দেখায় কড়া হতে চলেছে রাজ্য। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ডাক্তারি পরীক্ষা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে খাতা দেখায় কড়া হতে চলেছে রাজ্য। রাজ্যের স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা সংক্রান্ত পর্যালোচনা কমিটি এমনই প্রস্তাব দিয়েছে বলে খবর। আরও কিছু খসড়া-প্রস্তাব জমা করা হচ্ছে। যদিও এই সব প্রস্তাবের অধিকাংশই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের নির্দেশিকা মেনে। এর বেশির ভাগই পালন করা হত না।

Advertisement

এত দিন পরীক্ষা কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা থাকলেও কারচুপি চলত। ক্যামেরায় দেখা যেত, পড়ুয়ারা লিখছেন। কিন্তু কেউ কেউ লেখার ‘অভিনয়’ করছেন, না সত্যি খাতায় কিছু লিখছেন সেটা স্পষ্ট বোঝা যেত না। ফলে কিছু পড়ুয়া পরীক্ষার নির্দিষ্ট তিন ঘণ্টা সময় পেরিয়ে গেলে, সিসি ক্যামেরা বন্ধ হওয়ার পরে বই দেখে বা অন্যের খাতা দেখে লেখা শুরু করতেন। কমিটির প্রস্তাব, পরীক্ষা শেষ হওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত খাতা নির্দিষ্ট বাক্সে ঢুকিয়ে সেটি বায়োমেট্রিক লক করতে হবে। সেই বাক্স চলে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে নির্দিষ্ট বায়োমেট্রিক ব্যবস্থায় বাক্স খোলা হবে। এই পুরো প্রক্রিয়া হবে সিসি ক্যামেরার আওতায়। অন্য দিকে টুকে বা মোবাইল ব্যবহার ধরা পড়লে উত্তরপত্রটি নিয়ে নতুন খাতা দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হচ্ছে।

পরীক্ষার পরে এ যাবৎ খাতা রাখা থাকত সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজেই। সেখানেই খাতা দেখা হত। এবং পরীক্ষায় পাশ করা, অনেক বেশি নম্বর পাওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন অনিয়ম বা অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠছিল। সূত্রের খবর, কমিটির প্রস্তাব, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী একটি উত্তরপত্র দু’জন পরীক্ষক প্রথমে পরীক্ষা করবেন। ওই দুই পরীক্ষকের দেওয়া নম্বরের মধ্যে যদি ১৫ শতাংশের ফারাক থাকে, তা হলে তৃতীয় পরীক্ষক ওই উত্তরপত্র পরীক্ষা করবেন। এর পরে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ দু’টি নম্বরের গড় হিসেব করে চূড়ান্ত নম্বর স্থির করা হবে। পুরো উত্তরপত্র কোডেড রাখা হবে। যাতে পড়ুয়া বা কলেজের পরিচয় পরীক্ষকেরা জানতে না পারেন।

Advertisement

সূত্রের আরও খবর, উত্তরপত্র আর সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজে না রাখার প্রস্তাবও দেওয়া হচ্ছে। বদলে পরীক্ষার পরে খাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হবে। পরীক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট কক্ষে গিয়ে সেখানে থাকা কম্পিউটারে ওই খাতা দেখতে হবে, সিসি ক্যামেরা থাকবে সেখানে। আর, ওই কক্ষে পরীক্ষককে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে ঢুকতে হবে। আরও জানা যাচ্ছে, প্রতিটি উত্তরপত্র স্ক্যান করে আপলোড করা হবে অনলাইনে।

প্রশ্ন ফাঁস রোধেও কড়া ব্যবস্থা করতে চাইছে কমিটি। তাদের প্রস্তাব, বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রশ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পরে অবসরপ্রাপ্ত কোনও শিক্ষক-চিকিৎসককে দিয়ে চূড়ান্ত প্রশ্নপত্র তৈরি করা হোক। আগামী বছর থেকে ভিন রাজ্যের শিক্ষক-চিকিৎসকদের দিয়ে প্রশ্ন তৈরির প্রস্তাব রয়েছে কমিটির। প্রয়োজনে তা অনলাইনে করা যেতে পারে।

সূত্রের খবর, ওই কমিটি ৯ ডিসেম্বর এমডি-এমএসের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা থেকে ওই প্রস্তাব কার্যকর করতে চাইলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ তার বিরোধিতা করছে। এক সিনিয়র চিকিৎসকের কথায়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের কেন আপত্তি, তা সহজেই অনুমেয়। সর্ষের মধ্যে ভূত থেকে গিয়েছে।” সিনিয়র চিকিৎসকেরা এ-ও জানাচ্ছেন, নির্দিষ্ট নিয়ম না মেনে পরীক্ষা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হত চিকিৎসা-শিক্ষার সঙ্গে জড়িত একাংশের মর্জিমতো। সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, এ বার সমস্ত পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ করা হবে। যদিও শুধু ওই ব্যবস্থায় পরীক্ষায় পুরোপুরি স্বচ্ছতা আনা যাবে না, মনে করেন সিনিয়র চিকিৎসকেরা। তাই পর্যালোচনা কমিটির প্রস্তাবকে সমর্থন করছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement