গাড়ির বকেয়া কর আদায়ে বড়সড় ছাড় দিতে চলছে পরিবহণ দফতর। —ফাইল চিত্র।
গাড়ির বকেয়া কর আদায়ে বড়সড় ছাড় দিতে চলছে পরিবহণ দফতর। বকেয়া রোড ট্যাক্স, পারমিট এবং সার্টিফিকেট অব ফিটনেস (সিএফ) পুনর্নবীকরণের ক্ষেত্রে জরিমানা মকুবের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে পরিবহণ দফতর চালু করবে ওয়েভার স্কিম। এই নতুন স্কিমে এ বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বকেয়া থাকা কর মেটানোর ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাবেন গাড়ির মালিকেরা। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বকেয়া মিটিয়ে দিলে জরিমানার ওপর ছাড় মিলবে। ১-৩০ জানুয়ারির মধ্যে বকেয়া সিএফ এবং পারমিট ফি মিটিয়ে দিলেও ১০০ শতাংশ জরিমানা মকুব করা হবে। আবার নতুন বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সংশ্লিষ্ট দুই খাতের বকেয়া মেটালে অবশ্য ১০০ শতাংশ ছাড় মিলবে না। সে ক্ষেত্রে গাড়ির মালিককে জরিমানার ৮০ শতাংশ মকুব করা হবে। এ কথায় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রিনিউয়াল না হওয়া যানবাহনের মালিকদেরও বড়সড় স্বস্তি দিতে চলেছে পরিবহণ দফতর।
নবান্ন সূত্রে খবর, বুধবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে পরিবহণ দফতরের এই সিদ্ধান্তে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তাই নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই জরিমানা মকুবের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা। চলতি বছর এই ধরনের ছাড়ের দাবি জানিয়ে আসছিল পরিবহণ সংগঠনগুলি। পরিবহণ দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বর্তমানে রাজ্যের প্রায় সাড়ে ১২ লক্ষ গাড়ির মধ্যে ৬৫ শতাংশ গাড়ির কর বকেয়া রয়ে গিয়েছে। সেই সব গাড়ির মোট জরিমানার পরিমাণ ধরলে কয়েক হাজার কোটি টাকা হবে। রাজ্য সরকার মনে করছে জরিমানা মুখ করে বকেয়া কর, সিএফ এবং পারমিটের পুনর্নবীকরণের টাকা যদি পাওয়া যায়, তা হলেও সরকারি কোষাগারে কয়েক কোটি টাকা জমা পড়বে। তাতে যেমন রাজ্য সরকারের রাজস্ব আদায় হবে, তেমনি জরিমানার ভয়ে রাস্তায় না নামা গাড়িগুলিও পরিষেবা দিতে নিজে নিজে গন্তব্যে বেরোতে পারবে। তাই ‘এক ঢিলে দুই পাখি মারা’-র সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, লক্ষ লক্ষ গাড়ির জরিমানা আদায় করা মোটর ভেহিকল্স ইন্সপেক্টরদের পক্ষে সম্ভব নয়। যে পরিকাঠামো রয়েছে, তাতে এত বিরাট সংখ্যক গাড়িকে চিহ্নিত করে জরিমানা করা এক প্রকার অসম্ভব। তাই পরিকল্পনা করেই রাজ্য কর আদায়ের ক্ষেত্রে এই ছাড়ের ঘোষণা করেছে।
পরিবহণ দফতরের এমন ছাড়ের ঘোষণায় খুশি পরিবহণ সংগঠনগুলি। সিটি সাবারবান বাস সার্ভিসেসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ‘‘সম্মিলিত ভাবে বিভিন্ন পরিবহণ সংগঠনগুলি এ ছাড়ের দাবি জানিয়ে আসছিল। রাজ্য সরকার যে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে আমরা খুশি। কিন্তু এখনও আমাদের বেশ কিছু দাবি রয়েছে যা পরিবহণ দফতর মেনে নিলে পরিবহণ শিল্প তথা গণপরিবহণের উন্নতি হবে।’’ অনলাইন ক্যাব অপারেটরসের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা গত জুন মাস থেকে পরিবহণ দফতরে এই ছাড়ের আবেদন জানিয়ে আসছিলাম। শেষমেষ পরিবহণ দফতর এই বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে পরিবহণ পরিষেবা যে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাতে এই পরিবহণ শিল্পকে পুনর্জীবিত করতে আরও বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ রাজ্য সরকারকে নিতে হবে।’’