রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ এবং রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে পদক্ষেপ করতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। এ জন্য কমিশনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। রবিবার রাজভবনে দেড় ঘণ্টা ধরে বৈঠকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহকে এমনই পরামর্শ দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। কমিশন ‘নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে না’ বলে সরব হয়েছিল বিরোধীরা। এই আবহে গত বুধবার রাজীবের যোগদান রিপোর্ট (জয়েনিং রিপোর্ট) ফেরত পাঠান রাজ্যপাল। এই পরিস্থিতির মধ্যে রবিবার বিকেলে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। সেই বৈঠকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে রাজীবকে পরামর্শ দিলেন রাজ্যপাল বোস।
পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন-পর্বে অশান্তির আবহে রাজীবকে তলব করেছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু ভোটের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণ দেখিয়ে সে বার রাজভবনে যাননি রাজীব। এর পরেই গত বুধবার রাজীবের যোগদান রিপোর্ট ফেরত পাঠান রাজ্যপাল। যা ঘিরে সরগরম হয় রাজ্য রাজনীতি। তার পর রবিবার বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে রাজভবনে যান রাজীব। সন্ধ্যা ৭টা ৩৪ মিনিটে রাজভবন থেকে বেরোন রাজীব। এই সময়ের মধ্যে দেড় ঘণ্টা ধরে তাঁদের বৈঠক হয়। রবিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে তিনি ডাকেননি বলে সকালে জানিয়েছিলেন রাজ্যপাল। আনন্দ বোস জানিয়েছিলেন, রাজীবই দেখা করার জন্য সময় চেয়েছিলেন।
রাজভবন সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত ভোটে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনা হয় রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের। এখনও পর্যন্ত ভোটের জন্য কী কী প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, রাজ্যপালকে তা জানান রাজীব। বৈঠকে রাজ্যপাল পরামর্শ দেন, ‘‘আপনি স্বাধীন ভাবে কাজ করুন। ভোটে অশান্তি কোনও ভাবেই যেন বরদাস্ত না করা হয়। শান্তিপূর্ণ ভোটের লক্ষ্যে সমস্ত পদক্ষেপ করতে হবে। কমিশনের যেন নিরপেক্ষ ভূমিকা থাকে।’’ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যাতে সঠিক ভাবে কাজে লাগানো হয়, সে ব্যাপারেও রাজীবকে বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল। স্পর্শকাতর বুথে বাড়তি নজর দেওয়ার কথাও বলেছেন রাজ্যপাল বোস।মনোনয়ন-পর্বে অশান্তির আবহে রাজভবনে ‘পিস রুম’ খোলা হয়েছিল। সেখানে যে সব অভিযোগ পেয়েছে রাজভবন, সেই অভিযোগ নিয়ে রাজীবের সঙ্গে কথা হয় রাজ্যপালের। রাজীবের যোগদান রিপোর্ট প্রত্যাহার করেছিলেন রাজ্যপাল। সেই নিয়ে টানাপড়েন চলেছিল। এই নিয়েও দু’জনের মধ্যে কথা হয় বলে রাজভবন সূত্রে খবর।
রাজভবন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, রাজীবের উদ্দেশে রাজ্যপাল বলেছেন, ‘‘রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে পদক্ষেপ করতে হবে। কোথাও গন্ডগোলের অভিযোগ পাওয়া গেলেই ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষ যেন নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। ভোটাররা যেন বাধা না পান। অভিযোগ পেলেই গুরুত্বের সঙ্গে তা খতিয়ে দেখতে হবে।’’ রাজভবন কোনও বিষয়ে রিপোর্ট চাইলে তা দিতেও কমিশনারকে বলেছেন রাজ্যপাল বোস।
রাজভবন সূত্রে দাবি, রাজ্যপালকে রাজীব জানান, এখনও পর্যন্ত সব কেন্দ্রীয় বাহিনী আসেনি। আবেদন মতো কেন্দ্রীয় বাহিনী এলেই এলাকায় মোতায়েন করা হবে। সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কমিশনের কাছে অভিযোগ জমা পড়লেও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মনোনয়ন দাখিলকে ঘিরে সমস্ত অভিযোগ কমিশন গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে বলেও রাজ্যপালকে জানিয়েছেন রাজীব।