সিবিআই হানার আশঙ্কাতেই কি প্রচলিত স্মার্টফোন ছেড়ে ‘বিকল্প’ অনুসন্ধান করছিলেন জীবনকৃষ্ণ? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
তাঁর দু’টি স্মার্টফোন হাতে পেতে কম হয়রানি পোহাতে হয়নি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইকে। পুকুরের জল ছাঁচা থেকে শুরু করে লাগোয়া এলাকায় চিরুনিতল্লাশি চালিয়ে দু’টি ফোন উদ্ধার করতে হয়েছে তাদের। তাঁর ফোন নিয়ে যখন পুকুরের জল এত তোলপাড়, তখন জানা যাচ্ছে সম্প্রতি ‘নিরাপদ’ ফোনের খোঁজ করছিলেন নিয়োগ দুর্নীতিতে সোমবার ধৃত তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। প্রশ্ন উঠেছে, সিবিআই হানার আশঙ্কাতেই কি প্রচলিত স্মার্টফোন ছেড়ে ‘বিকল্প’ অনুসন্ধান করছিলেন জীবনকৃষ্ণ? আইফোন কিনে নিজের যাবতীয় তথ্য সুরক্ষিত রাখতে চেয়েছিলেন তিনি?
ফোনে থাকা তথ্য ও নথি কী ভাবে সংরক্ষিত করা যায় এবং কী ভাবে মোবাইল ‘হ্যাক’ হওয়া আটকানো যায়, তা নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে আলোচনা শুরু করেছিলেন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক। এমনই দাবি তাঁর ঘনিষ্ঠদের একাংশের। গত সপ্তাহেই বিধানসভায় একাধিক সতীর্থ বিধায়ক এবং পরিচিত সাংবাদিকদের কয়েক জনের কাছে তিনি বিষয়টি জানতে চেয়েছিলেন। তেমনই একজন জানিয়েছেন, জীবন জানতে চেয়েছিলেন, এমন কোনও ফোন আছে কি, যেখানে তথ্য থাকলে হাজারো প্রযুক্তি খাটিয়েও তা বার করা যাবে না বা মুছে দেওয়া তথ্য আর কোনও দিন ফিরিয়ে আনা যাবে না? একাধিক শুভাকাঙ্ক্ষী তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, আইফোনের সাম্প্রতিকতম মডেলটি (আইফোন ১৪ অথবা আইফোন ১৪ প্রো) ব্যবহার করলে তাঁর সমস্যার সুরাহা হতে পারে। বিধানসভায় সতীর্থ বিধায়কদের কয়েক জনের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, আইফোন ব্যবহার করলেই কি নিজের তথ্য সুরক্ষিত রাখা যায়? ইতিবাচক জবাব পেয়ে সম্প্রতি মনস্থির করেছিলেন আইফোন কিনে যাবতীয় তথ্য সুরক্ষিত করবেন। কিন্তু ঘটনাচক্রে, তা আর হয়ে ওঠেনি। তার আগেই তাঁর বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই।
গত সপ্তাহে কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে বিধানসভায় এসেছিলেন জীবনকৃষ্ণ। সেই সময়েই কয়েক জন সতীর্থ বিধায়ক এবং পরিচিত কয়েক জন সাংবাদিককে আইফোন নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন জীবনকৃষ্ণ। আইফোন ব্যবহারকারী কয়েক জন বিধায়ক তাঁকে বিষয়টি বিস্তারিত বুঝিয়েওছিলেন। জীবনকৃষ্ণের কয়েক জন ঘনিষ্ঠ তাঁকে জানিয়েছিলেন, আইফোন থেকে এক বার কোনও তথ্য মুছে দিলে তা আর কারও পক্ষে উদ্ধার করা সম্ভব নয়। ওই পরামর্শদাতাদের দাবি, তা শুনে আইফোন কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জীবনকৃষ্ণ। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে এর সত্যতা যাচাই করা যায়নি। কারণ, জীবনকৃষ্ণ এখন সিবিআই হেফাজতে। আর পরিস্থিতি বিচারে পরামর্শদাতারা নাম প্রকাশে ইচ্ছুক নন।
এমনিতে দু’টি স্মার্টফোন ব্যবহার করতেন জীবনকৃষ্ণ। গত সপ্তাহে নাকি তিনি আইফোন কেনার ব্যাপারে মনস্থির করেন। চলতি সপ্তাহে কলকাতার কোনও বড় দোকান থেকে দু’টি আইফোন কেনার কথা ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছিলেন জীবনকৃষ্ণ। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। সিবিআই হানার সময় নিজের দু’টি স্মার্টফোন ছাদ থেকে ছুড়ে ফেলেন তৃণমূল বিধায়ক। পাঁচিল টপকে বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টাও করেন। তবে দু’টি ফোনই উদ্ধার করতে সফল হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। বলা হচ্ছে, প্রযুক্তির সাহায্যে দু’টি ফোন থেকে জীবনকৃষ্ণের যাবতীয় তথ্য অনুসন্ধান করতে পারবে সিবিআই। মাস দুয়েক আগে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে কৌশিক ঘোষ নামে জীবনকৃষ্ণের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত এক ব্যক্তি সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই আশঙ্কায় ছিলেন বড়ঞার বিধায়ক। সেই আশঙ্কাই সত্যি হল।