প্রতীকী ছবি।
গ্রামীণ এলাকায় বাড়ি বাড়ি নলবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দিতে ‘জল স্বপ্ন’ প্রকল্পের সূচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী জানান, পাঁচ বছরের মধ্যে ২ কোটি বাড়িতে এই জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ হবে। খরচ হবে ৫৮ হাজার কোটি টাকা। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামাঞ্চলে বহু দূরে গিয়ে জল আনতে হয় মানুষকে। এই প্রকল্প তাঁদের সুবিধা দেবে। পাশাপাশি, এই বিপুল কর্মকাণ্ডে গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগও থাকবে।’’
তবে প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকে জানাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জল জীবন মিশন’-এর সঙ্গে পুরোপুরি মিল রয়েছে ‘জল স্বপ্ন’ প্রকল্পের। যদিও গ্রামে জল সরবরাহের মূল দায়িত্ব যাদের, সেই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, কেন্দ্রের সহায়তায়, না নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নতুন প্রকল্প আনা হয়েছে, তা তাঁদের জানা নেই।
কেন্দ্রীয় প্রকল্পে গ্রামীণ এলাকায় প্রতিদিন মাথাপিছু ৫৫ লিটার করে নলবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা। সেই প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত খরচ ৩.৬০ লক্ষ কোটি টাকা। যার অর্ধেক দিতে হবে রাজ্যগুলিকে। ২০২৪ সালের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হওয়ার কথা।
কিছু দিন আগে ‘জল জীবন মিশন’ প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেন কেন্দ্রীয় জলশক্তিমন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত। গত ৬ জুন দিল্লি জানিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র রাজ্য, যারা এই প্রকল্পের বার্ষিক পরিকল্পনা জমা দেয়নি। মন্ত্রীর অভিযোগ ছিল, ২০১৯-২০ সালে এই প্রকল্পে কেন্দ্রের তরফে ৯৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও, রাজ্য খরচ করতে পেরেছে মাত্র ৪২৮ কোটি। এ ছাড়া, আর্সেনিক, ফ্লোরাইড কবলিত এলাকার জন্য ২০১৭ সালের মার্চ থেকে রাজ্যকে দেওয়া হয়েছে ১,৩০৫ কোটি টাকা। কিন্তু তার মধ্যেও ৫৭৩ কোটি অব্যবহৃত। যদিও নতুন বছরের পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় সরকারকে পাঠানো হয়েছে বলে পাল্টা দাবি করেছিল রাজ্য।
এ রাজ্যের মন্ত্রীদের অনেকেরই বক্তব্য, কোনও প্রকল্পের খরচের অর্ধেক যদি রাজ্যকে বহন করতে হয়, তা হলে প্রকল্পের নাম স্থির করার অধিকারও রাজ্যের থাকা উচিত। পঞ্চাশ ভাগ টাকা দিয়ে কেন্দ্রের শাসক দল রাজনৈতিক প্রচারের ষোলো আনা ভোগ করবে কেন? এই যুক্তিতে অতীতে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম নিজের মতো করে রেখেছিল রাজ্য। যেমন, এ রাজ্যে ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’-এর নাম ‘মিশন নির্মল বাংলা’, ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’ এখানে ‘বাংলার গ্রামীণ সড়ক যোজনা’, ‘আজীবিকা’ (ন্যাশনাল রুরাল লাইভলিহুড মিশন)-এর নাম ‘আনন্দধারা’ (দ্য স্টেট রুরাল লাইভলিহুড মিশন), ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ (গ্রামীণ)-এর নাম হয়েছে ‘বাংলার গৃহ প্রকল্প’।
‘সবুজসাথী’ প্রকল্পের আওতায় সাইকেল দেওয়ার বকেয়া থাকা কাজও আবার চালু করল রাজ্য সরকার। এ দিন কলকাতা এবং দার্জিলিং বাদে সব জেলায় ২৭ হাজার ৬৫০টি সাইকেল দেওয়ার কাজ শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী।